ব্যান্ডেলে শুরু হল আধুনিকায়নের কাজ
পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যান্ডেল স্টেশনে শুরু হয়েছে বড়সড় উন্নয়ন প্রকল্প। গত ২৫ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজ মাত্র এক মাসের মধ্যে শেষ করেছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ১৯.৬ মিটার দীর্ঘ এই সম্প্রসারণের ফলে প্ল্যাটফর্ম এখন দাঁড়িয়েছে ৩৬৪.৯০ মিটার লম্বায়। ফলে এখন থেকে ১৬ বগির ট্রেন ও একটি ইঞ্জিন সহজেই দাঁড়াতে পারবে এই স্টেশনে।
রেকর্ড সময়ে শেষ হল প্রকল্প
রেলের সিনিয়র DEN-1 এবং AEN/ব্যান্ডেলের তত্ত্বাবধানে কাজটি লক্ষ্যমাত্রার অনেক আগেই শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হয়। ফলে যাত্রী পরিষেবার মান যেমন বাড়ছে, তেমনই রেলওয়ের দক্ষতা নিয়েও জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলায় স্টেশন উন্নয়নে অমৃত ভারত প্রকল্প
‘অমৃত ভারত স্টেশন স্কিম’-এর আওতায় দেশের বিভিন্ন স্টেশনকে আধুনিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। বাংলার একাধিক স্টেশনও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। সূত্রের খবর, বাংলার মোট ১৭টি স্টেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যেই সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে ব্যান্ডেল স্টেশনের জন্য।
ব্যান্ডেলের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ
হুগলির এই ঐতিহাসিক স্টেশনের জন্য একাই বরাদ্দ হয়েছে ৩০৭ কোটি টাকা। বাংলার সমস্ত স্টেশনের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্ম নয়, সমগ্র স্টেশন চত্বরকে আধুনিক সুবিধা ও বিশ্বমানের অবকাঠামো দিয়ে সাজানো হবে।
বাংলার রেল নেটওয়ার্কে ব্যান্ডেলের গুরুত্ব
ব্যান্ডেল স্টেশন পূর্ব রেলের একাধিক দিকের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে হাওড়া ডিভিশনের মেন লাইন, অন্যদিকে শিয়ালদহ ডিভিশনের সঙ্গে এই স্টেশনের সরাসরি সংযোগ। ফলে দুই ডিভিশনের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে ব্যান্ডেল। হাওড়া-বর্ধমান, হাওড়া-কাটোয়া কিংবা হাওড়া-মেমারির মতো একাধিক লোকাল ট্রেন প্রতিদিন এই স্টেশন ছুঁয়ে যায়। ফলে যাত্রী চাপও বিপুল।
নতুন রূপে ঝাঁ চকচকে ব্যান্ডেল
আধুনিকীকরণের এই পরিকল্পনায় স্টেশনের ভিতরে যাত্রীদের বসার জায়গা, উন্নত ওয়েটিং হল, ঝকঝকে শৌচাগার, লিফট-এস্কেলেটর সবই যুক্ত হবে। যাত্রী নিরাপত্তার জন্য থাকবে আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। এমনকি স্টেশন প্রাঙ্গণে সুন্দর ল্যান্ডস্কেপিং ও সবুজায়নের দিকেও নজর দিচ্ছে রেল।
যাত্রীদের স্বস্তি বাড়বে
এখন পর্যন্ত ব্যান্ডেল স্টেশনে যাত্রীদের প্রধান অভিযোগ ছিল ভিড় এবং পর্যাপ্ত জায়গার অভাব। বিশেষত ব্যস্ত সময়ে দীর্ঘ ট্রেন দাঁড়ানোর সমস্যা তৈরি করত। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির ফলে সেই সমস্যার অবসান ঘটবে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। একই সঙ্গে যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক টিকিট কাউন্টার ও ডিজিটাল তথ্যপরিসেবা চালু করা হবে।
প্রকল্প ঘিরে আশাবাদী সাধারণ মানুষ
স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রতিদিন যাতায়াত করা নিত্যযাত্রী—সকলেই মনে করছেন, ব্যান্ডেল স্টেশনের এই উন্নয়ন সমগ্র অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। আধুনিক অবকাঠামো তৈরি হলে শুধু স্থানীয় যাত্রীরাই নয়, দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রেও এই স্টেশন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বাংলার উন্নয়নে রেলের বিশেষ নজর
রেল মন্ত্রক ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বাংলার স্টেশনগুলিকে ধাপে ধাপে উন্নয়ন করা হবে। কলকাতা ও তার আশেপাশের ব্যস্ত রুটগুলির পাশাপাশি হুগলি, বর্ধমান, মেদিনীপুর ও নদিয়ার মতো জেলাগুলিতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এত বিপুল বরাদ্দ ব্যান্ডেলের জন্যই এবার প্রথমবার দেখা গেল।
ঐতিহাসিক স্টেশনের নতুন অধ্যায়
১৮৫৫ সালে স্থাপিত ব্যান্ডেল স্টেশন বাংলার অন্যতম প্রাচীন রেলস্টেশন। ব্রিটিশ আমল থেকেই এর গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ। এখন ‘অমৃত ভারত প্রকল্প’-এর ছোঁয়ায় এই ঐতিহাসিক স্টেশন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে। রেলকর্তাদের আশা, আগামী এক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে ব্যান্ডেল হয়ে উঠবে বাংলার সবচেয়ে আধুনিক স্টেশনগুলির মধ্যে একটি।