রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি পরিবর্তনশীল হার রিভার্স রেপো, অর্থাৎ VRRR নিলাম করেছে, যাতে ব্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে অতিরিক্ত নগদ সরানো যায়। তা সত্ত্বেও, রবিবার ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় প্রায় ৪.০৯ লক্ষ কোটি টাকার নিট নগদ উদ্বৃত্ত পাওয়া গেছে। ৩ জুলাইয়ের পর এই পরিস্থিতি সর্বোচ্চ বলে মনে করা হচ্ছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বশেষ ডেটাতে বলা হয়েছে যে এই নগদ উদ্বৃত্তের প্রধান কারণ হল সরকারের বিপুল খরচ। সরকারি প্রকল্প, ভর্তুকি, বেতন প্রদান এবং অন্যান্য খরচের কারণে প্রচুর পরিমাণে নগদ ব্যাঙ্কগুলির কাছে পৌঁছেছে।
স্বল্পমেয়াদী হার রেপো হারের নিচে
বাজারে যখন নগদের আধিক্য থাকে, তখন তার প্রভাব সুদের হারে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই সময়ে, ওভারনাইট ওয়েটেড এভারেজ কল রেট ৫.৫০ শতাংশের রেপো হারের নিচে নেমে গেছে। সোমবার এটি ৫.৩৭ শতাংশে ছিল। একইভাবে, ওভারনাইট ট্রাই পার্টি রেপো রেট ৫.২২ শতাংশে রেকর্ড করা হয়েছে, যা ৫.২৫ শতাংশের স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি হারের নিচে।
নগদ বেশি হলে ব্যাংকগুলো একে অপরকে কম দামে ঋণ দিতে শুরু করে, যার কারণে স্বল্পমেয়াদী হারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এই কারণেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থাৎ আরবিআই VRRR নিলাম করে যাতে সুদের হার তার লক্ষ্য স্তরের কাছাকাছি থাকে।
আরও নিলামের সম্ভাবনা রয়েছে
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রচেষ্টা থাকে যে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে কেবল ততটা নগদ থাকুক যতটা প্রয়োজন। যদি নগদ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়, তবে এটি সুদের হারকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী দিনে আরও VRRR নিলাম হতে পারে।
একটি প্রধান বেসরকারি ব্যাঙ্কের ট্রেজারি আধিকারিকের মতে, সরকারি খরচ নগদ প্রবাহ বাড়িয়েছে এবং এটাই স্বল্পমেয়াদী হার কম হওয়ার কারণ। তিনি জানান, যদি পরিস্থিতি একই থাকে, তাহলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বারবার নিলাম করতে হতে পারে যাতে ওভারনাইট রেটকে রেপো রেটের কাছাকাছি আনা যায়।
টাকার শক্তিশালী শুরু
একদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর টাকা আছে, অন্যদিকে টাকার অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সোমবার টাকার শুরুটা হয়েছিল প্রতি ডলার ৮৭.২১ টাকার স্তরে, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা কমে ৮৭.৭০ টাকা প্রতি ডলারে নেমে আসে।
ডিলাররা জানিয়েছেন, টাকার দাম কমতে শুরু করলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করে যাতে পতন রোধ করা যায়। এরপর দিনের শেষে টাকা ৮৭.৬৬ টাকা প্রতি ডলারে বন্ধ হয়। এটি গত দিনের তুলনায় ১১ পয়সা দুর্বল ছিল।
ডলারের ব্যাপক চাহিদা দুর্বলতার কারণ
টাকার দুর্বল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল ডলারের চাহিদা। এই মুহূর্তে তেল কোম্পানি, বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং আমদানিকারকরা ডলারের প্রচুর কেনাকাটা করছেন। ডিলারদের মতে, যে আইপিওগুলি এনএসডিএল-এ সম্পূর্ণরূপে সাবস্ক্রাইব করা হয়নি, সেইগুলিতে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং সেই টাকা আবার ডলারে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে ডলারের চাহিদা আরও বেড়েছে।
ফিনরেক্স ট্রেজারি অ্যাডভাইজার্স এলএলপি-র কার্যনির্বাহী পরিচালক অনিল কুমার ভંশালী বলেছেন যে বাজারে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা এসেছে তেল কোম্পানি এবং এফপিআই-এর পক্ষ থেকে। এছাড়াও, যে আইপিও সাবস্ক্রাইব হয়নি, তার ফেরত থেকেও ডলারের কেনাকাটা বেড়েছে।
এফপিআই-এর বড় অঙ্কের প্রত্যাহার
আগস্টের শুরু থেকেই বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে ভারতীয় শেয়ার বাজারে প্রচুর বিক্রি দেখা যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত তাদের টাকা তুলে নিচ্ছে এবং এর সরাসরি প্রভাব টাকার উপর পড়েছে।
ডিলারদের মতে, যখন এফপিআই তাদের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে টাকা তোলে, তখন তা ডলারে পরিবর্তন করে বাইরে পাঠানো হয়। এতে ডলারের চাহিদা আরও বাড়ে এবং টাকার উপর চাপ আসে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা
টাকার উপর চাপের আরেকটি বড় কারণ হল ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য উত্তেজনা। সম্প্রতি আমেরিকা ভারত থেকে আমদানি করা কিছু পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছে। এর জবাবে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা जारी রাখবে এবং এই সিদ্ধান্তের উপর আমেরিকার কোনো চাপ কাজ করবে না।
ভারতের এই অবস্থানের কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। রপ্তানির উপর নির্ভরশীল ভারতীয় কোম্পানিগুলো এই উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ এতে বাণিজ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। ডিলারদের মতে, যদি আমেরিকা-ভারতের মধ্যে এই উত্তেজনা আরও বাড়ে, তবে এর প্রভাব শেয়ার বাজার, টাকা এবং এফপিআই প্রবাহ তিনটির উপরেই পড়বে।