ঐতিহ্যের সুবাসে বর্ধমানের দাস বাড়ির দুর্গাপুজো, মহাঅষ্টমীতে আকাশে উড়ে শঙ্খচিল

ঐতিহ্যের সুবাসে বর্ধমানের দাস বাড়ির দুর্গাপুজো, মহাঅষ্টমীতে আকাশে উড়ে শঙ্খচিল

বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেয়ারিয়ার দাস বাড়ির দুর্গাপুজো শুধুই পুজো নয়, বরং জমিদারির এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায়। প্রায় ১৫০ বছর আগে মাখনলাল দাস এই পুজোর সূচনা করেন, পরে তাঁর পুত্র ব্রজেন্দ্রলাল দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তি স্থাপন শুরু করেন। আজও এই পুজো ঘিরে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে উৎসাহ অপরিসীম। বিশেষত মহাঅষ্টমীর সন্ধিপুজোয় ও বিসর্জনের সময় আকাশে শঙ্খচিল ওড়ার দৃশ্য পুজোর মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দেয়।

জমিদার বাড়ির পুজোর সূচনা

দাস বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় মাখনলাল দাসের সময়ে। প্রথমদিকে ঘটপূজা হলেও পরবর্তী কালে তাঁর পুত্র ব্রজেন্দ্রলাল দাস স্বপ্নাদেশ পান। সেই আদেশ মেনে তৈরি হয় একচালার কাঠামো, যেখানে দেবী হরগৌরীর সঙ্গে বসানো হয় শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে। মহিষাসুরমর্দিনী রূপে নয়, এখানে দেবী পূজিত হন হরগৌরী রূপে।

স্বপ্নাদেশ ও অলৌকিক কাহিনি

কথিত আছে, দেবীর আদেশমতো হরগৌরীর পূজো শুরু করার পরই ব্রজেন্দ্রলাল দাস দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পুত্রসন্তান লাভ করেন। এই কাহিনি আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে, যা দাস বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে এক বিশেষ বিশ্বাস তৈরি করেছে।

মহাঅষ্টমী ও শঙ্খচিলের রহস্য

পরিবারের সদস্যদের দাবি, অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে দুর্গামণ্ডপের উপর শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। বিসর্জনের সময়ও মল্লিকপুকুরের আকাশে সেই শঙ্খচিল ভেসে বেড়ায়। স্থানীয় মানুষ মনে করেন, এ এক অলৌকিক সংকেত, যা এই পুজোর গৌরব বহন করে চলেছে যুগের পর যুগ।

পুজোর বিশেষত্ব

দাস বাড়ির পুজোয় ভোগের বিশেষ আকর্ষণ কাঁঠালি কলা, নারকেলের মিষ্টি আর ঘি-এর লুচি। আগে যাত্রাপালা ও গানবাজনা হত, যা উপভোগ করতেন অন্দরমহলের মহিলারাও। একসময় সন্ধিপুজোয় ছাগ বলি প্রথা থাকলেও প্রায় ৮০ বছর আগে তা বন্ধ হয়। বর্তমানে মণ্ডা বলি হয়, যা ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছে।

জমিদার আমলের ছোঁয়া

এই পুজোয় একসময় হাজির থাকতেন বর্ধমানের মহারাজা ও তাঁর পরিবার। আজও সেই দিনগুলোর স্মৃতি টেনে আনে দাস বাড়ির পুরনো অন্দরমহল, দুর্গামণ্ডপ ও জমিদারির গৌরবময় ইতিহাস।

প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো বর্ধমানের দাস বাড়ির দুর্গাপুজো আজও বজায় রেখেছে জমিদারি আমলের ঐতিহ্য। মহাঅষ্টমীর সন্ধিক্ষণ থেকে শুরু করে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত দেবীমণ্ডপের আকাশে শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায় বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের।

Leave a comment