পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ শিল্পে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সফরে তিনি দক্ষিণবঙ্গের ১৪টি জেলায় পাট্টা বিতরণ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস এবং স্থানীয়দের পরিষেবা প্রদান করেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং স্থানীয় শিল্প ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রতি তার সমর্থনও স্পষ্ট হয়।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পসরা, মুখ্যমন্ত্রীর নজর
সভাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তাদের তৈরি জিনিসপত্র সাজিয়ে রেখেছিলেন। শাড়ি, গয়না, হ্যান্ডিক্রাফট ও হস্তশিল্পের নানা পসরা চোখে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রদর্শনীতে প্রবেশ করে তৎক্ষণাৎ স্থানীয় শিল্পীদের প্রতি আগ্রহ দেখান। তিনিই সেই প্রথম ক্রেতা, যিনি সরাসরি গ্রাহক হিসেবে স্থানীয় শিল্পীদের সমর্থন প্রদান করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কেনাকাটার বিবরণ
মুখ্যমন্ত্রী ১০ হাজার টাকার একটি হ্যান্ডলুম শাড়ি এবং কিছু গয়না কিনেছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর শিল্পী মর্জিনা শেখ ও দেও শুক্লা দে রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আগমনে আমরা খুবই আনন্দিত। তিনি জিনিসগুলো পছন্দ করেছেন এবং আমাদের কাজকে প্রশংসা করেছেন। শাড়িটি হ্যান্ডলুম ও বিশেষভাবে বুননশৈলীতে তৈরি, যা গ্রামীণ শিল্পের দক্ষতা এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
মোট কেনাকাটার মূল্য ও ডিসকাউন্ট
মুখ্যমন্ত্রী মোট ১১,০৭০ টাকার জিনিসপত্র কিনেছেন। তবে স্থানীয় শিল্পীরা বিশেষভাবে ডিসকাউন্ট দিয়ে মোট মূল্য ১০,০০০ টাকা হিসেব করেছেন। এই gesture-এর মাধ্যমে শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নয়, স্থানীয় শিল্পীরা ও স্বনির্ভর মহিলারা খুশি হন। এটি প্রমাণ করে যে সরকারের সমর্থন এবং স্থানীয় উদ্যোগের মিলিত প্রচেষ্টা গ্রামীণ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
গ্রামীণ শিল্প ও স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব
মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ শুধু ব্যক্তিগত কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্থানীয় স্বনির্ভর মহিলাদের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি এবং তাদের শিল্পকে প্রসারিত করার পথে বড় প্রভাব ফেলেছে। শাড়ি ও গয়নার মাধ্যমে স্থানীয় কুটির শিল্প এবং হ্যান্ডিক্রাফটের প্রচার আরও মজবুত হয়েছে। বিশেষ করে হ্যান্ডলুম শিল্পের পুনর্জীবন এবং বিক্রয় বৃদ্ধি এই ধরণের উদ্যোগে সম্ভব হচ্ছে।
স্থানীয় শিল্পীর প্রতিক্রিয়া
মর্জিনা শেখ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের গোষ্ঠীর তৈরি জিনিসপত্র কিনেছেন। এটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। স্থানীয় শিল্পে আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।” দেও শুক্লা দে রায় আরও বলেন, “এ ধরনের সমর্থন আমাদের কাজের মূল্যবোধ বাড়ায় এবং নতুন প্রজেক্টে আগ্রহ সৃষ্টি করে।”
বর্ধমান সফরে অন্যান্য কার্যক্রম
মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র কেনাকাটায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, পাট্টা বিতরণ অনুষ্ঠানে সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এভাবে তার সফর প্রশাসনিক কাজ, সামাজিক সমর্থন এবং শিল্প সংরক্ষণের মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ হয়েছে।
উপসংহার
মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী সমর্থনের কার্যক্রম শুধু কেনাকাটায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি ও গ্রামীণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতীক। ১০ হাজার টাকার শাড়ি ও গয়নার কেনাকাটা স্থানীয় শিল্পীদের আত্মবিশ্বাস এবং গ্রামীণ শিল্পের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এমন উদ্যোগে স্থানীয় ও সরকারি সমর্থনের সমন্বয় দেশব্যাপী শিল্প ও অর্থনীতিকে সাফল্য প্রদানের পথ দেখায়।