পন্তের চোটের পর নয়া দিশা ঘরোয়া ক্রিকেটে বদলে গেল নিয়ম পন্তের চোটই বদলে দিল ভাবনা

পন্তের চোটের পর নয়া দিশা ঘরোয়া ক্রিকেটে বদলে গেল নিয়ম পন্তের চোটই বদলে দিল ভাবনা

ঋষভ পন্তের সেই ভয়ঙ্কর চোটই যেন চোখ খুলে দিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র কনকাশনের বদলির নিয়ম ছিল। কিন্তু এবার বোর্ড বুঝল, ক্রিকেটারদের সুরক্ষা এবং ম্যাচের ভারসাম্য বজায় রাখতে আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাই ২০২৫-২৬ মরশুম থেকে ঘরোয়া লাল বলের ক্রিকেটে কার্যকর হচ্ছে ‘সিরিয়াস ইনজুরি রিপ্লেসমেন্ট’ (SIR) নিয়ম।

গুরুতর চোট পেলেই নামানো যাবে নতুন খেলোয়াড়

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচ চলাকালীন যদি কোনও খেলোয়াড় গুরুতরভাবে আহত হন, তবে তাঁর বদলে নতুন ক্রিকেটারকে মাঠে নামাতে পারবে সংশ্লিষ্ট দল। শুধু ফিল্ডিং নয়, সেই পরিবর্ত ক্রিকেটার ব্যাটিং, বোলিং— সব দায়িত্বই নিতে পারবেন। তবে, ম্যাচ রেফারির অনুমতি এখানে বাধ্যতামূলক। ফলে, দলের স্বার্থ এবং ম্যাচের ন্যায়সঙ্গত ভারসাম্য— দু’টিই বজায় থাকবে।

পন্ত আর ওকসের লড়াই থেকেই জন্ম নতুন প্রশ্ন

গত অ্যান্ডারসন–তেন্ডুলকর ট্রফি সিরিজে ভারতের উইকেটকিপার পন্ত পায়ে ভয়ঙ্কর চোট পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ভাঙা পায়ের যন্ত্রণা সত্ত্বেও তিনি ব্যাট করতে নেমে অনন্য উদাহরণ রাখেন। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসও বাঁ হাত ‘স্লিং’-এ বেঁধে এক হাতে ব্যাট করেছিলেন। এই দুই ঘটনা প্রমাণ করে, আহত খেলোয়াড়দের উপর চাপ বাড়ে এবং দলও কার্যত একজন প্লেয়ার কম নিয়ে লড়াই করে। তখন থেকেই এই নিয়ম আনার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

কনকাশনের বাইরে এল বোর্ডের নজর

এতদিন পর্যন্ত বদলির নিয়ম ছিল কেবল কনকাশনের ক্ষেত্রে। মাথায় আঘাত পেলে তবেই নামানো যেত বিকল্প খেলোয়াড়। কিন্তু হাঁটু, কাঁধ, গোড়ালির মতো গুরুতর চোটের জন্য এভাবে বদলি নামানোর কোনও নিয়ম ছিল না। পন্তের চোট যেন BCCI-কে সতর্ক করল। অবশেষে ঘরোয়া ক্রিকেটেই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

গম্ভীরের সমর্থন, স্টোকসের শঙ্কা

ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর এই নিয়মের প্রবল সমর্থক। তাঁর মতে, একজন খেলোয়াড়ের জীবন বা শরীরের সুরক্ষার চেয়ে কোনও জয় বড় হতে পারে না। পাশাপাশি দলের ভারসাম্যও বজায় থাকবে। তবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, যদি নিয়মের প্রয়োগ কঠোরভাবে না হয়, তাহলে কিছু দল হয়তো এর অপব্যবহার করতে পারে। ফলে ক্রিকেট দুনিয়ায় মতবিরোধ থাকলেও, ভারতের বোর্ড এগিয়ে গেল সাহসী পদক্ষেপে।

বদলির নিয়মে থাকছে একাধিক শর্ত

এই নতুন নীতি কার্যকর হলেও কিছু শর্ত বাধ্যতামূলক থাকছে। প্রথমত, টসের সময় মনোনীত বিকল্প তালিকা থেকেই খেলোয়াড় নামাতে হবে। দ্বিতীয়ত, চিকিৎসক, আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারির পরামর্শে বদলির বৈধতা নিশ্চিত হবে। তৃতীয়ত, বদলি নামলেই তার উপর আহত ক্রিকেটারের দায়ভার বর্তাবে— শাস্তি বা পেনাল্টি সবই বহন করতে হবে। এছাড়া, উইকেটকিপারের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

রেকর্ড বইতেও থাকবেন বদলি প্লেয়ার

আহত খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তাঁর বদলিও অফিসিয়াল রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হবেন। অর্থাৎ দু’জনকেই ওই ম্যাচে অংশগ্রহণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। ফলে ক্রিকেট পরিসংখ্যানে এটি একটি অভিনব সংযোজন হতে চলেছে। বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, এই নিয়ম এখনই সাদা বলের ক্রিকেট বা আইপিএলে প্রযোজ্য নয়। শুধুমাত্র সিকে নাইডু ট্রফি সহ লাল বলের ঘরোয়া ম্যাচেই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হবে।

খেলোয়াড়দের সুরক্ষা সবার আগে

ক্রিকেটে চোট-আঘাত নতুন কিছু নয়। অনেক সময় খেলোয়াড়রা দেশের হয়ে খেলতে নেমে নিজের শরীরের সীমা ছাড়িয়ে যান। পন্ত এবং ওকসের ঘটনা সেই প্রমাণ। কিন্তু এবার বোর্ডের বার্তা স্পষ্ট— খেলোয়াড়দের সুরক্ষাই সবার আগে। ক্রিকেট শুধু রণক্ষেত্র নয়, এটি একটি খেলা। এবং খেলার নিয়মেই থাকা উচিত ন্যায্য সুযোগ।

পরিবর্ত ক্রিকেটার মানে নতুন কৌশলও

এই নিয়মে বদলি ক্রিকেটার মাঠে নামতে পারলে, ম্যাচে কৌশলগত দিক থেকেও নতুন অধ্যায় শুরু হবে। ধরুন, কোনও দলের প্রধান বোলার আহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বদলি নামিয়ে আনা যাবে। তাতে ম্যাচের ভারসাম্য থাকবে অক্ষুণ্ণ। তবে এই বদলির তালিকা আগে থেকেই দিতে হবে, যাতে দলগুলি অতিরিক্ত সুবিধা না পায়।

ক্রিকেট দুনিয়ায় নজিরবিহীন ঘোষণা

বিশ্ব ক্রিকেটে এই ধরনের নিয়ম খুব একটা দেখা যায়নি। ভারতীয় বোর্ড তাই এক প্রকার নতুন নজির গড়ল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রয়োগ হবে কি না, সে প্রশ্ন ভবিষ্যতের হাতে। তবে আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বড় স্বস্তির খবর। চোটের কারণে আর দলকে ‘দশজন’ নিয়ে খেলতে নামতে হবে না।

পন্তের লড়াইয়ের পর কৃতজ্ঞ ক্রিকেট দুনিয়া

আজও ক্রিকেটপ্রেমীরা ভুলতে পারেননি পন্তের ভাঙা পায়ে ব্যাট করার সেই দৃশ্য। তাঁর লড়াই শুধু অনুপ্রেরণা নয়, একটি নিয়ম বদলেরও জন্ম দিল। বলা যায়, তাঁর যন্ত্রণা থেকেই জন্ম নিল নতুন নিয়ম, যা ভবিষ্যতে অনেক তরুণ ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার বাঁচাতে সাহায্য করবে। খেলাধুলার ইতিহাসে এই পদক্ষেপ তাই চিহ্নিত হয়ে থাকবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে।

Leave a comment