ভাদ্রপদের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি, রোহিণী নক্ষত্র—এই মহাজাগতিক সংযোগেই পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। জন্মাষ্টমী শুধু একটি উৎসব নয়, ভক্তদের কাছে এটি প্রেম, ভক্তি ও ন্যায়ের প্রতীক।
ভগবান কৃষ্ণের জন্মের পেছনের পবিত্র কাহিনি
কংসের কারাগারে বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান হিসেবে জন্ম নেন বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। জন্মের পরই মথুরা থেকে গোকুলে পৌঁছে যান ননীগোপাল, যেখানে তাঁর শৈশব কাটে গোপিনীদের সান্নিধ্যে, মাখন চুরি ও বাঁশির সুরে।
জন্মাষ্টমীর পুজো ও আচার
প্রতি বছর এই তিথিতে কৃষ্ণের শৈশব রূপে পুজো করা হয়। নবদ্বীপ, নদীয়া, মথুরা, বৃন্দাবনসহ সারা দেশে মন্দিরগুলোতে চলে মহাসমারোহ। সাজানো হয় ঝাঁকি, অনুষ্ঠিত হয় মহাভোগ ও ভজন-সন্ধ্যা। প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় এক মাস আগে থেকেই।
শুভেচ্ছাবার্তায় ভক্তির রঙ
ডিজিটাল যুগে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমও বদলে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভক্তরা পাঠাচ্ছেন—
জন্মাষ্টমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা সকলকে। শুভ হোক সব।
ভগবান কৃষ্ণ তোমার জীবন আলোকিত করুক। জয় শ্রীকৃষ্ণ!
রাধার প্রেম, বাঁশির সুর, মাখনের স্বাদ—এসবের সমন্বয়ে সুন্দর হয়ে উঠুক এবারের জন্মাষ্টমী।
কৃষ্ণের আশীর্বাদের বার্তা
শুভেচ্ছাবার্তায় ভক্তরা মনে করিয়ে দেন, কৃষ্ণ কেবল দেবতা নন, তিনি জীবনের পথপ্রদর্শকও। তাঁর সাহসী কাজ—গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন কিংবা কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধ—আজও অনুপ্রেরণার উৎস। জন্মাষ্টমী তাই সাহস ও ন্যায়ের প্রতি আস্থার দিন।
নন্দোৎসব: জন্মের পরদিনের আনন্দ
জন্মাষ্টমীর পরদিন পালিত হয় নন্দোৎসব। এটি গোকুলে কৃষ্ণের আগমনের আনন্দে আয়োজন করা বিশেষ উৎসব, যেখানে ঢোল-করতাল, নৃত্যগীত ও প্রসাদের ভক্তি-ভোজন ভরে তোলে গোকুলের বাতাস।
২০২৫ সালে জন্মাষ্টমীর তিথি
এবার জন্মাষ্টমী পড়েছে ১৬ অগাস্টে, আর নন্দোৎসব ১৭ অগাস্টে। অষ্টমী তিথি শুরু হবে ১৫ অগাস্ট রাত ১টা ১৬ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৬ অগাস্ট রাত ১০টা ৪৮ মিনিটে। জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে এই সময়ই শ্রীকৃষ্ণের জন্মলগ্ন।
আধ্যাত্মিকতা ও ভালোবাসার মেলবন্ধন
জন্মাষ্টমী শুধু পূজার দিন নয়—এটি একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ ভক্তি, করুণা ও প্রেমে ডুবে যায়। কৃষ্ণের জন্মোৎসব তাই ভক্তের হৃদয়ে এক চিরন্তন সুর তোলে—হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে…