২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর মরশুমে বেলুড় মঠ আগের বছরের তুলনায় অনেক আগে থেকে সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি শুরু করেছে। পঞ্চমী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিটি দিন এবং অনুষ্ঠানই ঠিকঠাক নির্ধারিত হয়েছে। জেলার সাধারণ মানুষ এবং দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট সময়সূচি জানার জন্য প্রতীক্ষায় ছিলেন। এবার আশ্বিনের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঠের পুরোহিত ও কমিটি একদিকে যেমন দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করছে, অন্যদিকে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে পূর্ণ সময়সূচি নিশ্চিত করা হয়েছে। পুজোর প্রস্তুতি, সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা ও মণ্ডপস্থাপনা—সবকিছু মিলিয়ে বেলুড় মঠ যেন এক উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছে।
দুর্গাপুজোর আকর্ষণ ও দর্শনার্থীর উৎসাহ
বেলুড় মঠের দুর্গাপুজো শুধু স্থানীয় মানুষদের জন্য নয়, বরং প্রায় সারাদেশ থেকে আগত ভক্তদের জন্যও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রায় এক মাস আগেই পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত পূর্ণ সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি দিন কোন অনুষ্ঠানের জন্য কতটা সময় রাখা হয়েছে, কখন দেবীর বোধন ও মহাস্নান হবে, তার সমস্ত তথ্য ভক্তরা আগেভাগে জানতে পারেন। এর ফলে পুজোর সময় দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন এবং ভক্তির পূর্ণ অনুভূতি গ্রহণ করতে পারবেন। পুজোয় অংশগ্রহণ, দেবীর আরাধনা, পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ গ্রহণ—সবকিছু মিলিয়ে এটি এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
পঞ্চমী থেকে সপ্তমীর সময়সূচি
পঞ্চমী (১০ আশ্বিন, ২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে দুর্গাপুজোর শুভ সূচনা হবে সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে দেবীর বোধনের মাধ্যমে। ষষ্ঠী (১১ আশ্বিন, ২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬:৫৫ মিনিটে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ হবে, সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। সপ্তমী (১২ আশ্বিন, ২৯ সেপ্টেম্বর) পুজো শুরু হবে নবপত্রিকা স্নান এবং মহাস্নান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকাল ৫:৪০ মিনিটে। এই সূচি অনুযায়ী প্রতিটি ভক্ত যথাযথ সময়ে উপস্থিত হতে পারেন এবং দেবীর পূর্ণ আরাধনা ও প্রার্থনা উপভোগ করতে পারেন।
মহাঅষ্টমী ও কুমারী পুজোর সময়সূচি
মহাঅষ্টমী (১৩ আশ্বিন, ৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৫:৪০ মিনিটে পুজোর শুরু হবে। কুমারী পুজো সকাল ন'টায় অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধিপুজোর সময় নির্ধারিত হয়েছে সন্ধ্যা ৫:৪৩ থেকে ৬:৩১ পর্যন্ত। মহাঅষ্টমীর এই অনুষ্ঠানগুলি দুর্গাপুজোর মূল আকর্ষণ, যেখানে ভক্তরা দেবীর পূর্ণ শক্তি ও প্রতিভা উপলব্ধি করেন। কুমারী পুজো ছোট মেয়েদের পবিত্র রূপে আরাধনা করা হয়, যা বিশেষ ভক্তি ও সংযমের প্রতীক। সন্ধিপুজোতে দেবী দুর্গার রূপের সঙ্গে শক্তির মিলন ঘটে, যা দর্শনার্থীদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পূর্ণ নির্ঘণ্ট
মহানবমী (১৪ আশ্বিন, ১ অক্টোবর) পুজো ও মহাস্নান অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৫:৪০ মিনিটে। হোমের সময়কাল বেলা ১১:২৭ থেকে দুপুর ১২:৫৬ পর্যন্ত। হোম ও ভোগ আরতির পর দেবীর আরাধনা সম্পন্ন হয়। বিজয়া দশমী (১৫ আশ্বিন, ২ অক্টোবর) দেবীর দশমীবিহিত পুজো অনুষ্ঠিত হবে, সন্ধ্যারতি শেষে প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে উৎসব সমাপ্তি ঘটে। প্রতিটি ধাপ ও অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী সম্পন্ন হয়, যা দর্শনার্থীদের পূর্ণভাবে ভক্তি প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।
পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ
বেলুড় মঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন দেবীর মধ্যাহ্ন ভোগ আরতির পর পুষ্পাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হবে, সময় দুপুর ১২:৩০ থেকে ১:০০ পর্যন্ত। প্রসাদ বিতরণ প্রতিদিন দুপুর বারোটায় মা সারদার সত্যব্রত ভবন থেকে করা হবে। ভক্তরা উৎসাহভরে উপস্থিত হয়ে দেবীর আরাধনা ও প্রসাদ গ্রহণ করতে পারবেন। প্রতিদিনের এই নির্দিষ্ট সময়সূচি দর্শনার্থীদের পুজোয় অংশগ্রহণকে আরও সুষ্ঠু ও সহজ করে তোলে।