বিজেপি-র পুরনো কণ্ঠ নতুন বিতর্ক – ফের তোপ দাগলেন দিলীপ ঘোষ

বিজেপি-র পুরনো কণ্ঠ নতুন বিতর্ক – ফের তোপ দাগলেন দিলীপ ঘোষ

দলীয় রাজনীতিতে কিছুটা আড়ালে গেলেও বিতর্ক বা স্পষ্ট ভাষার ধার ত্যাগ করেননি বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্য রাজনীতির গতিপ্রকৃতি থেকে শুরু করে হুমায়ুন কবিরের নতুন দল গঠন, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক থেকে ‘ভুয়ো ভোটার’ ইস্যু—সব কিছুতেই কড়া বক্তব্য রাখলেন খড়গপুরের সাংসদ। সম্প্রতি এক কর্মীসভায় তিনি যা বলেছেন, তা শুনে রাজ্য রাজনীতির বাতাস আবারও উত্তপ্ত।

“২০২৬-এ মুসলিম উপমুখ্যমন্ত্রী হতেই পারেন!”

রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে দিলীপ বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, ২০২৬ সালের নির্বাচনে যদি কোনও মুসলিম উপমুখ্যমন্ত্রী হন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নতুন মুসলিম দল তৈরি হচ্ছে, তারা পরিষ্কার ভাবেই দাবি জানাবে।তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা বিশাল। যদি রাজনৈতিক সংগঠিতকরণ সফল হয়, তবে ১০০টিরও বেশি মুসলিম-প্রভাবিত আসন জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর ফলেই এমন দাবি রাজনৈতিকভাবে মান্যতা পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 “হুমায়ুনকে কেউ কোনদিন ধরে রাখতে পারেনি, এবারও পারবে না!

হুমায়ুন কবিরের নতুন দল গঠনের প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ তীব্র কটাক্ষ করেন। তাঁর ভাষায়, ওকে কেউ কোনও দিন ধরে রাখতে পারেনি। বাংলার সব দলই একবার না একবার ওকে নিয়ে কাজ করেছে। এখন নতুন দল গড়ে সেই চেষ্টাই আবার করছে।তাঁর দাবি, শুধু হুমায়ুনের ইচ্ছা নয়, তৃণমূলও চায় এমন একটি দল হোক—যা মুসলিম ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শক্তি তৈরি করতে পারে। দিলীপের এই বক্তব্য রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

“পরিকল্পিত ভাবে এগোচ্ছে নতুন রাজনৈতিক গেমপ্ল্যান”

আইএসএস বা অন্য কোনও মুসলিম ভিত্তিক নতুন দল তৈরি হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা খুবই সুপরিকল্পিত। এখন উপমুখ্যমন্ত্রীর দাবি তুলবে, পরের বার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাইবে,—এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। দিলীপ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব বুঝেও নীরব, কারণ এর পেছনে রয়েছে তাঁরই পরোক্ষ সমর্থন।তাঁর ইঙ্গিত, রাজ্যের ক্ষমতায় টিকে থাকতে তৃণমূল একটি ‘বিকল্প ভোটব্যাঙ্ক প্ল্যান’ সাজিয়েছে, যাতে বিজেপি বিরোধী ভোটগুলি ছড়িয়ে না গিয়ে একজোট থাকে।

পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য

তামিলনাড়ুতে বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়েও মুখ খোলেন দিলীপ। তবে তাঁর ভাষা ছিল বিতর্কের জন্ম দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদের নাম করে যারা বাইরে যাচ্ছে, তারা অনেকেই বাংলাদেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি আর বাংলাভাষী গুলিয়ে দিচ্ছেন। উনি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদেরই বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।এই বক্তব্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও দিলীপের বক্তব্যে ছিল তাঁর নিজস্ব যুক্তির ধার। তিনি বলছেন, ভাষা বা জেলাভিত্তিক পরিচয় নয়, দেখতে হবে তাদের নাগরিকত্ব।

 “ভোটার লিস্টে থাকা মানেই ভারতীয় নয়”

বিহারের উদাহরণ টেনে দিলীপ বলেন, আমরা চাই ভোটার তালিকা সংশোধন হোক, যেমন বিহারে হয়েছে। না হলে বাংলায় ফেয়ার ইলেকশন হবে না।তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের ভোটার লিস্টে এখনও বহু ভুয়ো নাম রয়েছে। এবং এসব ভোটার মূলত বাংলাদেশ থেকে আগত অনুপ্রবেশকারী, যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেনি।

“আধার কার্ড মানেই নাগরিকত্ব নয়, বস্তায় বস্তায় মেলে এই কার্ড!

ভোটার আইডি এবং আধার কার্ড প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, আজকাল তো টাকা দিলেই কার্ড মেলে। বাড়ির কুকুরেরও আধার কার্ড বানানো সম্ভব। অথচ এগুলোই পরিচয়পত্র হিসেবে ধরা হচ্ছে।তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় ভোটার আইডি ও আধার কার্ড পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনুপ্রবেশকারী ও প্রকৃত বাসিন্দাকে এক করে ফেলা হচ্ছে। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বাংলাদেশি ভুয়ো ভোটারদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন,”—এই বিস্ফোরক দাবি তুলে দিলীপ কার্যত নির্বাচন কমিশনের দিকে সরাসরি আঙুল তোলেন।

সংক্ষেপে মূল পয়েন্টসমূহ:

২০২৬-এ মুসলিম উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইঙ্গিত দিলীপের।

হুমায়ুন কবিরের নতুন দল নিয়ে 'তৃণমূলের ছায়া' দাবি।

বাঙালি না বাংলাদেশি? পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য।

ভোটার লিস্ট সংশোধনের জন্য বিহারের মডেল অনুসরণের পরামর্শ।

ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে তীব্র অভিযোগ।

Leave a comment