কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বিশ্ব বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ভারত এখন আগের মতো দুর্বল নেই, বরং আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দাবি করেছেন যে, আজ ভারত যেকোনো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো অবস্থায় রয়েছে এবং এই কথাটি পরিসংখ্যানও স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে।
পুরোনো রেকর্ড ভেঙে, রপ্তানিতে নতুন উড়ান
পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন যে, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের রপ্তানি ৮৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালে, এই সংখ্যাটি ছিল ৮২৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এবার দেশের রপ্তানি পুরনো সব রেকর্ড ভাঙার দিকে এগোচ্ছে। বিশেষ বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারত তার রপ্তানিতে দৃঢ়তা দেখিয়েছে।
বৈশ্বিক মন্দাতেও ভারতীয় বাজারের ক্ষমতা
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মতে, গোটা বিশ্ব এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে লড়ছে, কিন্তু ভারত তার পারফর্মেন্সের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে। ভারত এই কঠিন সময়েও তার রপ্তানিকে থামতে দেয়নি এবং ক্রমাগত উন্নতি করেছে।
ভারত বিনিয়োগের পছন্দের ঠিকানা
পীযূষ গোয়েল বলেছেন যে, আজ ভারত শুধু ব্যবসার ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ব বিনিয়োগের দিক থেকেও একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো ভারতে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী। তিনি জানান যে, পিএলআই (উৎপাদন ভিত্তিক প্রণোদনা) প্রকল্পের অধীনে অনেক সেক্টরে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং ভ্যালু অ্যাডিশনে দারুণ বৃদ্ধি হয়েছে।
পিএলআই প্রকল্প থেকে অভ্যন্তরীণ শিল্পের উন্নতি
পীযূষ গোয়েলের মতে, পিএলআই প্রকল্পের কারণে ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে নতুন প্রাণ এসেছে। এর ফলে শুধু উৎপাদনই বাড়েনি, দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, ভারত आत्मनिर्भरতার পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে।
বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারতের স্থান বজায় থাকবে
পীযূষ গোয়েল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অনুমানের কথা উল্লেখ করে জানান যে, বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশ হতে পারে। এই অনুমান অনুসারে, ভারত আবারও বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে নিজের স্থান ধরে রাখবে।
ইউপিএ-কে সরাসরি নিশানা, ‘দুর্বল ভারত’-এর প্রসঙ্গ
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে, আগে ভারতের সরকারগুলো এমন চুক্তি করত যা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু এখন ভারতের সরকার প্রতিটি বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।
পীযূষ গোয়েল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন যে, ভারত এখন সেই দেশ নয়, যা চুক্তিতে তার শক্তি ত্যাগ করত। আজ ভারত বিশ্বের সঙ্গে নিজের শর্তে কথা বলে এবং কোনো বিষয়ে পিছিয়ে আসে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে পরিবর্তন দৃশ্যমান
মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন যে, গত কয়েক বছরে মৎস্যজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের জন্য অনেক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলো দেশের অর্থনৈতিক দিক পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ভারতের নতুন চিত্র
পীযূষ গোয়েলের পুরো বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, কেন্দ্র সরকার এখন ভারতের চিত্র একটি শক্তিশালী এবং आत्मनिर्भर দেশ হিসেবে স্থাপন করতে চাইছে। যেখানে একসময় দেশকে শুধুমাত্র ‘সস্তা বাজার’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো, এখন সেটি বিশ্বের জন্য ‘শক্তিশালী অংশীদার’ হয়ে উঠছে।
মন্ত্রীর এই বিবৃতির মাধ্যমে সরকার আরও একবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভারত অর্থনৈতিক ফ্রন্টে শক্তিশালী হয়েছে এবং আগামী সময় আরও শক্তিশালী হওয়ার দিকে যাচ্ছে।