ওড়িশায় ৮৩০৭.৭৪ কোটি টাকার ভূবনেশ্বর বাইপাস প্রকল্পের অনুমোদন

ওড়িশায় ৮৩০৭.৭৪ কোটি টাকার ভূবনেশ্বর বাইপাস প্রকল্পের অনুমোদন

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ওড়িশাতে ৮৩০৭.৭৪ কোটি টাকার ব্যয়ে ১১০ কিমি দীর্ঘ ক্যাপিটাল রিজিওন রিং রোড (ভূবনেশ্বর বাইপাস) প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। ৬ লেনের এই হাইওয়ে খোরধা, ভূবনেশ্বর এবং কটকের মধ্যে দিয়ে যাবে এবং তিনটি জাতীয় সড়ক ও একটি রাজ্য সড়কের সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে যান চলাচল সহজ হবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বিকাশে গতি আসবে।

নয়া দিল্লি: ওড়িশাকে বড় উপহার দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ৮৩০৭.৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূবনেশ্বর বাইপাস বা ক্যাপিটাল রিজিওন রিং রোড প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এটি ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬ লেনের হাইওয়ে হবে যা হাইব্রিড অ্যানুইটি মডেল (HAM) -এর অধীনে তৈরি করা হবে। সড়ক পরিবহন এবং লজিস্টিকসকে উন্নত করার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি খোরধা, ভূবনেশ্বর এবং কটকের মতো প্রধান শহরগুলির মধ্যে দিয়ে যাবে এবং NH-55, NH-57, NH-655 ও SH-65 এর সাথে যুক্ত হবে। এর ফলে যানজট কম হবে, লজিস্টিক খরচ কমবে এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকাশে গতি আসবে।

তিনটি জাতীয় সড়ক ও একটি রাজ্য সড়কের সাথে যুক্ত হবে

ভূবনেশ্বর বাইপাস প্রকল্পটি তিনটি জাতীয় সড়ক এবং একটি রাজ্য সড়কের সাথে যুক্ত হবে। এর মধ্যে রয়েছে NH-55, NH-57 এবং NH-655। এছাড়াও এটি রাজ্য সড়ক SH-65 এর সাথেও যুক্ত হবে। এর ফলে রাজধানী অঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে। আধিকারিকদের মতে, এই নতুন হাইওয়ে তৈরি হওয়ার ফলে শুধুমাত্র স্থানীয় স্তরেই নয়, পুরো পূর্ব ভারতে পণ্য এবং যাত্রীদের চলাচল সহজ হয়ে যাবে।

খোরধা, ভূবনেশ্বর এবং কटक অন্তর্ভুক্ত থাকবে

এই রিং রোড ওড়িশার সবচেয়ে ব্যস্ত শহরগুলির মধ্যে দিয়ে যাবে। এর মধ্যে খোরধা, ভূবনেশ্বর এবং কটকের মতো বড় শহরগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বর্তমানে এই শহরগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং যান চলাচলের চাপের কারণে যানজট এবং ভিড়ের সমস্যা লেগেই থাকে। নতুন বাইপাস এই সমস্যা কম করবে এবং ভারী যানবাহনগুলিকে শহরের বাইরে ঘুরিয়ে দেবে। এর ফলে এই শহরগুলিতে যান চলাচলের চাপ অনেকটা কম হয়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন যে রামেশ্বর এবং টাঙ্গির মধ্যে ক্রমবর্ধমান যান চলাচলকে মাথায় রেখে এই প্রকল্পটি খুবই জরুরি ছিল। তিনি বলেছেন যে এই বাইপাস তৈরি হয়ে গেলে শুধুমাত্র শহরের যানজট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে তাই নয়, ভ্রমণের সময়ও কম লাগবে। স্থানীয় লোকেরা শহরের মধ্যে আরামে চলাচল করার সুযোগ পাবে এবং দূরপাল্লার যানবাহনগুলির জন্য একটি বিকল্প রাস্তা পাওয়া যাবে।

লজিস্টিক কেন্দ্রগুলির সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে

এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি প্রধান অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং লজিস্টিক কেন্দ্রগুলির সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। এর মধ্যে প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, এয়ারপোর্ট এবং প্রস্তাবিত মাল্টি-মোডাল লজিস্টিক পার্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও এই সড়কটি রাজ্যের দুটি বড় বন্দরেও সহজ সংযোগ তৈরি করবে। অর্থাৎ, সামুদ্রিক বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোগীরাও সরাসরি উপকৃত হবেন।

সময় এবং জ্বালানীর সাশ্রয় হবে

সড়ক পরিবহন এবং মহাসড়ক মন্ত্রকের মতে, ভারী বাণিজ্যিক যানবাহনগুলির জন্য এই প্রকল্পটি খুবই লাভজনক প্রমাণিত হবে। রাস্তার প্রশস্ততা এবং উন্নত সংযোগের কারণে ট্রান্সপোর্টারদের সময় এবং জ্বালানী উভয়ই সাশ্রয় হবে। এর ফলে লজিস্টিক খরচ কমবে এবং শিল্পগুলির প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বাড়বে।

ভূবনেশ্বর বাইপাসের আরও একটি বড় সুবিধা হল এটি রাজ্যের প্রধান ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলিকে যুক্ত করবে। পুরী, কটক এবং ভূবনেশ্বরের মতো ধর্মীয় শহরগুলিতে পৌঁছানো আরও সহজ হবে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই শহরগুলিতে ভ্রমণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বাইপাস যাত্রীদের জন্য একটি সুবিধাজনক পথ হিসেবে প্রমাণিত হবে।

কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা

সরকারি অনুমান অনুযায়ী, এই প্রকল্পের সময় প্রায় ৭৪.৪৩ লক্ষ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান দিবস এবং ৯৩.০৪ লক্ষ পরোক্ষ কর্মসংস্থান দিবস তৈরি হবে। অর্থাৎ নির্মাণকাজে প্রচুর সংখ্যক স্থানীয় মানুষ কাজ পাবে। এছাড়াও সড়ক তৈরি হওয়ার পরে এর সাথে যুক্ত শিল্প এবং পরিষেবাতেও চাকরির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ওড়িশা এবং পূর্ব ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র ওড়িশার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং পুরো পূর্ব ভারতের চিত্র পরিবর্তন করে দেবে। সড়ক পরিবহন উন্নত হওয়ার ফলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সাথেও যোগাযোগ বাড়বে। শিল্প, পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত হবে। পাশাপাশি, গ্রামীণ এলাকার উৎপাদিত পণ্য বড় বাজারগুলিতে সহজে পৌঁছাতে পারবে।

Leave a comment