বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: রেকর্ড ভোটদান, নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ কি ঝুঁকির মুখে?

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: রেকর্ড ভোটদান, নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ কি ঝুঁকির মুখে?

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম পর্যায় ঐতিহাসিক প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৮টি জেলার ১২১টি আসনে ৬৪.৬৬ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, এবং এবার রাজ্যে ভোটদানের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় রেকর্ড ৬৪.৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছে — যা গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় প্রায় ৮.৫ শতাংশ বেশি।

এই বর্ধিত ভোটদান গণতন্ত্রের জন্য শুভ সংকেত হলেও, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) এবং তাঁর দলের জন্য এই সংখ্যাটি রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ হল, বিহারের ইতিহাসে যখনই ভোট শতাংশে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে, তখনই ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে।

রেকর্ড ভাঙা ভোটদান, তবে নীতীশের জন্য উদ্বেগের কারণ

বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ১৮টি জেলার ১২১টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। গতবার অর্থাৎ ২০২০ সালে প্রথম দফায় ৭১টি আসনে ৫৬.১% ভোট পড়েছিল, যেখানে এবার এই সংখ্যাটি বেড়ে ৬৪.৬৬%-এ পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ ভোট শতাংশ সাধারণত জনগণের অসন্তোষ বা পরিবর্তনের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। এই পরিস্থিতিতে, এই প্রবণতা নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জোট (JD(U)-BJP বা সম্ভাব্য NDA)-এর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

যখনই ভোট বেড়েছে, তখনই সরকার বদলেছে

বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, অনেকবারই বর্ধিত ভোটদান ক্ষমতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

  • ১৯৬২ বনাম ১৯৬৭: ১৯৬২ সালে বিহারে ৪৪.৫% ভোট পড়েছিল, যেখানে ১৯৬৭ সালে তা বেড়ে ৫১.৫%-এ পৌঁছায়। প্রায় ৭% বৃদ্ধির পর কংগ্রেসের ক্ষমতার অবসান ঘটে এবং রাজ্যে প্রথমবারের মতো অ-কংগ্রেসি সরকার গঠিত হয়।
  • ১৯৭৭ বনাম ১৯৮০: ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ৫০.৫% ভোট পড়েছিল, যেখানে ১৯৮০ সালে এই সংখ্যাটি ৫৭.৩%-এ পৌঁছায় — অর্থাৎ প্রায় ৬.৮% বৃদ্ধি। ফলস্বরূপ: জনতা পার্টির পরাজয় ঘটে এবং কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন হয়।
  • অন্যান্য উদাহরণ: ২০০৫, ২০১০ এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনগুলিতেও যখন ভোট শতাংশ বেড়েছিল, তখন রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন দেখা যায়।

বিহারের ইতিহাসে কখন কত ভোট পড়েছে

বছর

ভোটের শতাংশ

রাজনৈতিক ফলাফল

১৯৫১-৫২

৪২.৬%

কংগ্রেসের জয়

১৯৫৭

৪৩.২৪%

কংগ্রেস ক্ষমতায়

১৯৬২

৪৪.৪৭%

কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন

১৯৬৭

৫১.৫১%

কংগ্রেস পরাজিত, অ-কংগ্রেসি সরকার গঠিত

১৯৬৯

৫২.৭৯%

রাজনৈতিক অস্থিরতা

১৯৭২

৫২.৭৯%

কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন

১৯৭৭

৫০.৫%

জনতা পার্টি ক্ষমতায়

১৯৮০

৫৭.৩%

কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন

২০১০

৫২.৭৩%

নীতীশ কুমারের জয়

২০১৫

৫৬.৯১%

মহাজোট ক্ষমতায়

২০২০

৫৭.২৯%

NDA সরকার

২০২৫ (প্রথম পর্যায়)

৬৪.৬৬%

ফলাফল বাকি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারে বর্ধিত ভোটদান প্রায়শই “অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ওয়েভ” (Anti-Incumbency Wave)-এর ইঙ্গিত দেয়। এর অর্থ হল, জনগণ পরিবর্তন চায় এবং বেশি সংখ্যায় ভোট দিতে বের হয়। যদিও, কিছু বিশেষজ্ঞ এও মনে করেন যে এবার ভোটার সচেতনতা এবং যুবকদের অংশগ্রহণও ভোট শতাংশ বাড়ার একটি বড় কারণ। মহিলাদের ভোট শতাংশও গত নির্বাচনের তুলনায় বেশি ছিল, যা সমীকরণকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

Leave a comment