বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর আগে মহাজোটে আসন বণ্টন নিয়ে আরজেডি এবং কংগ্রেসের মধ্যে গুরুতর বিবাদ চলছে। লালু যাদব কোনো সম্মতি ছাড়াই আরজেডি প্রতীক বিতরণ করেছেন, যা জোটের ঐক্য এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির ওপর প্রভাব ফেলেছে।
পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন (Bihar Assembly Election) ২০২৫-এর আগে মহাজোটে (Grand Alliance) আসন বণ্টন নিয়ে গুরুতর রাজনৈতিক নাটক দেখা গেছে। কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর মধ্যে গভীর অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা জোটের ঐক্যকে বিপন্ন করেছে। লালু প্রসাদ যাদব কোনো সম্মতি ছাড়াই অনেক প্রার্থীকে আরজেডি-র নির্বাচনী প্রতীক (party symbol) বিতরণ করেছেন, যা পরে তেজস্বী যাদব ফিরিয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনাপ্রবাহ বিহারের রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন (internal tension) এবং কংগ্রেসের অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়।
জোটের মধ্যে এই বিবাদ শুধুমাত্র আসন চুক্তিকে (seat sharing) জটিল করে তুলছে না, বরং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের প্রস্তুতিকেও প্রভাবিত করছে। উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে এবং কোনো আপোষের জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে না।
তেজস্বী যাদব এবং কংগ্রেসের মধ্যে আলোচনা
দিল্লিতে কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা এবং তেজস্বী যাদবের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে। রাহুল গান্ধী কংগ্রেস নেতাদেরকে "কঠিন দর কষাকষি" (tough negotiation) করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকে আরজেডি প্রধান তেজস্বী যাদব নিজের দলের অবস্থানে অনড়। এই অচলাবস্থার কারণে জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে (election preparation) প্রভাব পড়েছে।
বিহার কংগ্রেসের নেতারা দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এবং কেসি ভেনুগোপালের কাছে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু খড়গে রাজ্য নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা সরাসরি তেজস্বী যাদবের সাথে কথা বলুন এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করুন।
লালু প্রসাদ যাদব আরজেডি প্রতীক বিতরণ করেছেন
লালু প্রসাদ যাদব সোমবার নিজের অনুগত এবং দলবদলকারীদের মধ্যে দলের নির্বাচনী প্রতীক বিতরণ করেছেন। এই পদক্ষেপ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গৃহীত কৌশলের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন তিনি জোটের সহযোগীদের অনুমোদন ছাড়াই দলের অনেক টিকিট বিতরণ করেছিলেন।
আইআরসিটিসি কেলেঙ্কারির সূত্রে রাওজ অ্যাভিনিউ আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর দিল্লি থেকে ফেরার পথে লালু যাদব রাবড়ি দেবীর পাটনার বাসভবনে পৌঁছান। সেখানে বিশাল ভিড় জমেছিল এবং দলের প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রতীক গর্বের সাথে প্রদর্শন করেন। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে কতজন প্রার্থীকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল, তা স্পষ্ট ছিল না।
জেডি(ইউ) থেকে আসা নেতাদের আরজেডি টিকিট
এই সময়ে অনেক বিশিষ্ট নেতাকে আরজেডি-র নির্বাচনী প্রতীক দেওয়া হয়েছে, যা তাদের প্রার্থিতার ইঙ্গিত দেয়। এদের মধ্যে রয়েছেন সুনীল সিং (পরবত্তা), যিনি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) ছেড়েছেন। এছাড়াও নরেন্দ্র কুমার সিং ওরফে বোগো, যিনি মটিহানি থেকে একাধিকবার বিধায়ক হয়েছেন, তাঁকেও টিকিট দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান আরজেডি বিধায়ক ভাই বীরেন্দ্র, চন্দ্রশেখর যাদব (মাধেপুরা) এবং ইসরায়েল মনসুরি (কান্টি)-কেও দলের প্রতীক প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। এই ঘটনাপ্রবাহ দলের মধ্যে সংহতি এবং প্রার্থীদের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি
নির্বাচন কমিশন (Election Commission) বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই দফায় ১২২টি আসনের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফার জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের হাতে মাত্র তিন দিন বাকি আছে।
অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এখনও তাদের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেনি, যা প্রস্তুতিতে বিলম্ব ঘটিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরজেডি এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি নির্বাচনী কৌশলকে (election strategy) প্রভাবিত করছে।