জেএমএম (JMM) বিহারে ১২-১৩টি আসনের দাবি জানালেও আরজেডি (RJD) এবং কংগ্রেসের (Congress) অবহেলায় ক্ষুব্ধ। 'ইন্ডিয়া' জোটের বৈঠকে তাদের না ডাকার কারণে এবার দলটি একাই নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিহার নির্বাচন: ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি (Jharkhand politics) আজকাল বিহার নির্বাচনের (Bihar elections) কারণে বেশ উত্তপ্ত। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (JMM) নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন (Hemant Soren) এখন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে 'সহায়ক ভূমিকা' নয়, বরং 'প্রধান ভূমিকায়' থাকতে চান। এই কারণেই তিনি বিহারের ১২ থেকে ১৩টি আসনে দাবি জানিয়েছেন, কিন্তু 'ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস মেলেনি, এমনকি আলোচনার জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। এতে সোরেন শিবিরের মধ্যে অসন্তোষ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
জেএমএমের আসন দাবি
জেএমএম বিহারের তারাপুর, চাকা, কাটিহার, জামুই এবং পূর্ণিয়ার মতো আসনগুলিতে তাদের দাবি জানিয়েছে। দলটির বক্তব্য, এই অঞ্চলগুলিতে তাদের জনসমর্থন রয়েছে এবং তারা এই আসনগুলিতে প্রভাবশালী নির্বাচন লড়তে পারে। দলের আরও অভিযোগ, 'ইন্ডিয়া' জোটে অন্তর্ভুক্ত আরজেডি (RJD) এবং কংগ্রেস (Congress) এখন পর্যন্ত জেএমএমের সঙ্গে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা করেনি। এতে জেএমএম নেতৃত্ব, বিশেষ করে হেমন্ত সোরেন, লালু যাদব (Lalu Yadav) এবং তেজস্বী যাদবের (Tejashwi Yadav) প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।
'ইন্ডিয়া' জোটের বৈঠক থেকে দূরত্ব
জেএমএমের অসন্তুষ্টির আরেকটি কারণ হল, তাদের 'ইন্ডিয়া' জোটের এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো বৈঠকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঝাড়খণ্ডে জেএমএমের নেতৃত্বে সরকারে কংগ্রেস এবং আরজেডি উভয়ই সহযোগী দল। তবুও, তাদের বিহারে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের প্রতিও ক্ষুব্ধ জেএমএম
কেবল আরজেডিই নয়, জেএমএমের (JMM) ক্ষোভ কংগ্রেসের (Congress) প্রতিও রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনা এবং কোলহান-এর মতো আদিবাসী এলাকাগুলিতে কংগ্রেস সম্প্রতি পদযাত্রা ও জনসংযোগ অভিযান জোরদার করেছে। জেএমএম মনে করে, কংগ্রেসের এই গ্রাসরুট অ্যাক্টিভিজম (grassroot activism) ঝাড়খণ্ডেও আসনগুলির উপর চাপ তৈরির কৌশল হতে পারে। জেএমএম এই অঞ্চলগুলিকে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে মনে করে এবং সেখানে কংগ্রেসের সক্রিয়তা তাদের উদ্বেগের কারণ হচ্ছে।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচন এবং বর্তমান দাবি
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাঁওতালের ১৮টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে 'ইন্ডিয়া' জোট জয়লাভ করে। জেএমএম মনে করে, এই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বিহারেও তাদের অংশীদারিত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু কোনো আলোচনা হয়নি এবং কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।
জেএমএম মুখপাত্রের বক্তব্য
জেএমএমের মুখপাত্র মনোজ পান্ডে (Manoj Pandey) স্পষ্টভাবে বলেছেন, দলটি কারও মুখাপেক্ষী নয়। যদি 'ইন্ডিয়া' জোট তাদের উপযুক্ত মনে না করে, তবে তারা বিহারে একাই নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত। তার মতে, জেএমএমের একটি শক্তিশালী সংগঠন, জনপ্রিয় নেতা এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনসমর্থন রয়েছে।
আরজেডির প্রতিক্রিয়া
জেএমএমের (JMM) অসন্তুষ্টির বিষয়ে আরজেডিও চুপ নেই। দলের ঝাড়খণ্ড সাধারণ সম্পাদক কৈলাস যাদব (Kailash Yadav) বলেছেন, জেএমএমকে তাদের কথা মঞ্চে রাখতে হবে, মিডিয়ার মাধ্যমে চাপ তৈরি করা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, তেজস্বী যাদবের জনপ্রিয়তা বিহারে অনেক বেশি এবং কাউকে কম মূল্যায়ন করার ভুল করা উচিত নয়।
কংগ্রেসের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস এই বিতর্কে সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের নেতা কেশব মাহাতো কমলেশ (Keshav Mahato Kamlesh) বলেছেন, যেমন ঝাড়খণ্ডে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তেমনই বিহারেও সহযোগী দলগুলি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। যদিও অভ্যন্তরীণ খবর বলছে, আসন ভাগাভাগির কাঠামো প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
আরজেডির সম্ভাব্য আসন সূত্র
সূত্রানুসারে, লোকসভা নির্বাচনের ফর্মুলার ভিত্তিতে বিহার বিধানসভায় আরজেডিকে ১৩৮টি, কংগ্রেসকে ৫৪টি, বাম দলগুলিকে ৩০টি এবং ভিআইপি-কে (VIP) ১৮টি আসন দেওয়া যেতে পারে। এই গণিতে জেএমএমের (JMM) জন্য কোনো স্থান নেই। এছাড়াও, যদি আরএলজেপিকে (RLJP) জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে তাদের অবশিষ্ট তিনটি আসন দেওয়া হবে।
জেএমএম কি একা বিহার নির্বাচন লড়বে?
ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের কারণে প্রশ্ন উঠছে, জেএমএম কি বিহারে একা নির্বাচন লড়বে? যদি এমনটা হয়, তবে অনেক আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে, যা আরজেডি ও কংগ্রেসের ক্ষতি করতে পারে।
জেএমএমের বিহারে নির্বাচনী রেকর্ড
জেএমএমের (JMM) বিহারে পারফরম্যান্স (performance) এখন পর্যন্ত সীমিত। ২০২০ সালে দলটি ৫টি আসনে নির্বাচন লড়েছিল এবং ২৫,২১৩টি ভোট পেয়েছিল। ২০১৫ সালে ৩২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১,০৩,৯৪০ ভোট পায়। ২০১০ সালে ৪১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১,৭৬,৪০০ ভোট এবং ২০০৫ সালে ১৮টি আসনে নির্বাচন করে ৭৬,৬৭১ ভোট পেয়েছিল। ২০০০ সালে, জেএমএম ৮৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৩ লক্ষেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনেও জেএমএম বিহারে কদাচিৎ প্রার্থী দিয়েছে।