বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে বড় ভাঙন
২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় বাকি। তার আগেই বঙ্গ বিজেপিতে দেখা দিল বড়সড় ভাঙন। স্বাধীনতা দিবসের দিনেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন দলের মহিলা মোর্চার প্রাক্তন সহ-সভানেত্রী ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভানেত্রী সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরী। দীর্ঘদিনের পদ্মপত্রী এই নেত্রীর দলত্যাগকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ঘাসফুল শিবিরের মনোবল যেমন বাড়াবে, তেমনি বিজেপি সংগঠনে বড় ধাক্কা দেবে।
তৃণমূলে যোগদানের মুহূর্তে আবেগঘন বার্তা
হাজরা মোড়ে আয়োজিত যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তৃণমূল পতাকা হাতে নিয়ে আবেগঘন বার্তা শোনান সঙ্ঘমিত্রা। তিনি বলেন, “রাজনীতি মানে শুধু পদ নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বিজেপিতে সেটা আমি করতে পারিনি। দলের ভেতরে চেষ্টা করেও বহু সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। ফলে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আমিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।” তাঁর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলে হতাশা ও চাপ অনুভব করছিলেন।
বিজেপির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন নেত্রী
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে সঙ্ঘমিত্রা জানান, বহু কর্মী-সমর্থকের সমস্যার সমাধান করতে পারলেও বিজেপির পক্ষ থেকে তিনি কোনও সহযোগিতা পাননি। এমনকি ব্যক্তিগত দুঃসময়ে তৃণমূল নেতারা পাশে দাঁড়ালেও, বিজেপির সহকর্মীদের কাছ থেকে তিনি প্রত্যাশিত সহানুভূতি পাননি। তাঁর কথায়, “অনেকের বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল, আমি প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাহায্য করতে পারিনি। এটাই আমার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা।” এই সরল স্বীকারোক্তি তাঁর দলবদলের সিদ্ধান্তকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা শুরু
বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি থেকে সঙ্ঘমিত্রার এই প্রস্থানকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা শুরু হয়েছে। ঘাসফুল শিবিরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস, কারণ নারী ভোটব্যাঙ্কে ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী ও রূপশ্রীর মতো প্রকল্পে তারা সাফল্য পেয়েছে। সেখানে মহিলা নেতৃত্বের এই দলবদল তাঁদের পক্ষে আরও ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। অন্যদিকে বিজেপি শিবিরে নীরবতা। নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত এই ইস্যুতে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি।
একসঙ্গে আরও কয়েকজন নেতার দলবদল
শুধু সঙ্ঘমিত্রা নন, এদিন তাঁর সঙ্গে জেলা ও মণ্ডল স্তরের কয়েকজন বিজেপি নেতা-নেত্রীও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এর ফলে সংগঠনগত স্তরে বিজেপি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করছেন, স্থানীয় পর্যায়ে যখনই নেতাদের ওপর ভরসা কমে যায়, তখনই ঘাসফুল শিবিরে ভাঙন বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।
দলবদল নিয়ে দিলীপ ঘোষের নাম ফের আলোচনায়
প্রসঙ্গত, এর আগে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের তৃণমূলের সঙ্গে সৌহার্দ্যের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর হাস্যোজ্জ্বল আলাপচারিতা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছিল। তিনি নিজে অবশ্য বারবার বলেছেন, দল ছাড়ার কোনও ইচ্ছা নেই। কিন্তু সঙ্ঘমিত্রার এই দলবদলের পর আবারও গুঞ্জন শুরু হয়েছে, পদ্ম শিবিরে আরও বড় চমক সামনে আসতে পারে।
তৃণমূলের কৌশল ও ভবিষ্যৎ বার্তা
তৃণমূল স্পষ্টতই এই দলবদলকে ভবিষ্যতের নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, বিজেপি বাংলার মাটিতে টিকতে পারবে না। সেই দাবি প্রমাণ করতে এখন তাঁরা বিজেপি নেতাদের ভাঙনে জোর দিচ্ছেন। সঙ্ঘমিত্রার মতো নেত্রী যোগদান করলে শুধু সাংগঠনিক লাভই হবে না, বরং প্রতীকী বার্তাও যাবে যে, বিজেপি নেতাদের আস্থাও আর দলে নেই।
বিজেপির ভেতরে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা
বিজেপির ভেতরে যে অস্বস্তি বাড়ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত কয়েক মাস ধরেই বহু জেলা স্তরের নেতা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন। কেউ সাংগঠনিক পদ হারানো নিয়ে অসন্তুষ্ট, কেউ আবার দলীয় কার্যকর্তাদের অবহেলা নিয়ে ক্ষুব্ধ। এর মাঝেই সঙ্ঘমিত্রার মতো দীর্ঘদিনের কর্মীর প্রস্থান দলের ভেতরের সংকটকে স্পষ্ট করে তুলল।
রাজনীতিতে দলবদলের ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই দলবদল রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নারী নেতৃত্বের এই স্থানান্তর শুধু মহিলা ভোটব্যাঙ্কেই নয়, বিজেপির ভেতরে থাকা অসন্তুষ্ট নেতাদের মনেও নতুন আলোচনার জন্ম দেবে। এখন নজর রয়েছে, আগামী কয়েক মাসে আরও কারা পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে আসবেন। রাজনীতির মাঠে দলবদল নতুন কিছু নয়, কিন্তু ভোটের একবছর আগে তা সবসময়ই বড় তাৎপর্য বহন করে।