জম্মু ও কাশ্মীরে কিশ্তওয়াড়ে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি: ৬০ জনের মৃত্যু, উদ্ধারকার্য অব্যাহত

জম্মু ও কাশ্মীরে কিশ্তওয়াড়ে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি: ৬০ জনের মৃত্যু, উদ্ধারকার্য অব্যাহত

জম্মু ও কাশ্মীর-এর কিশ্তওয়াড় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চশোতির পরিস্থিতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এখানে শনিবার তৃতীয় দিনের মতো ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ অব্যাহত ছিল। এ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

Kishtwar Cloudburst: জম্মু ও কাশ্মীর-এর কিশ্তওয়াড় জেলা বর্তমানে এক ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে। চশোতি গ্রামে মেঘ ফাটার কারণে আসা বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। প্রায় ৭৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন, তাই অনেক পরিবার এখনও তাদের প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছে। তৃতীয় দিনেও ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ডিজিপির সফর

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং শুক্রবার গভীর রাতে জম্মু ও কাশ্মীর-এর পুলিশ মহানির্দেশক নলিন প্রভাতের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি পুলিশ, সেনা, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), বিআরও, নাগরিক প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন।

এ পর্যন্ত ৪৬টি মৃতদেহ শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, স্থানীয় লোকজনের দাবি, বন্যা ও ভূমিধসে কয়েকশ মানুষ ভেসে গেছেন বা চাপা পড়েছেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরাও হতাহত

কর্তৃপক্ষের মতে, নিহতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর (CISF) দুজন জওয়ান এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের একজন বিশেষ পুলিশ অফিসারও (SPO) রয়েছেন। এই দুর্যোগটি ১৪ই আগস্ট দুপুর প্রায় ১২:২৫ নাগাদ ঘটে, যখন তীর্থযাত্রীরা মাচাইল মাতা মন্দির দর্শনে যাচ্ছিলেন। বন্যার কবলে পড়ে অস্থায়ী বাজার, লঙ্গরখানা এবং একটি নিরাপত্তা চৌকি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়াও, ১৬টি আবাসিক বাড়ি, তিনটি মন্দির, চারটি জলকল, ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু এবং প্রায় এক ডজন যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

প্রতি বছর ২৫শে জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা মাচাইল মাতা যাত্রা এই দুর্যোগের কারণে তৃতীয় দিনের মতো স্থগিত রাখা হয়েছে। ৯,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই মন্দিরে যেতে ৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এই যাত্রা কিশ্তওয়াড় শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে চশোতি গ্রাম থেকে শুরু হয়।

দুর্যোগের পর থেকে উদ্ধারকারী দলগুলোকে এই এলাকায় পৌঁছাতে প্রচুর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানের জন্য এনডিআরএফ-এর বিশেষ দল, ডগ স্কোয়াড এবং প্রায় এক ডজন আর্থ-মুভার মোতায়েন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সফর

জম্মু ও কাশ্মীর-এর মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ শুক্রবার সন্ধ্যায় কিশ্তওয়াড় পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং রাজ্য সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করছে। আজ (শনিবার) তিনি দুর্যোগ কবলিত চশোতি গ্রাম পরিদর্শন করবেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জানান, এই ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করে সম্ভাব্য সব ধরনের কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

উদ্ধার কাজে আংশিক সাফল্য

এ পর্যন্ত উদ্ধারকারী দলগুলো ধ্বংসস্তূপের স্তূপ থেকে ১৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। এদের মধ্যে ৩৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং তাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৬০-এ পৌঁছেছে এবং এখনও ৬০ থেকে ৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও তিনি এও বলেন যে, কিছু লোক মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে।

চশোতির স্থানীয় বাসিন্দারা মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে, বন্যার জলের স্রোত এত তীব্র ছিল যে মানুষজন নিজেদের সামলাতে পারেনি। অনেক পরিবারের পুরো বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, এটি শুধু ত্রাণ ও উদ্ধারের বিষয় নয়, আমাদের এটাও দেখতে হবে যে আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি।

Leave a comment