ব্রেন স্ট্রোক একটি প্রাণঘাতী অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের শিরাগুলি অবরুদ্ধ হয়ে যায় বা ফেটে যায়। ভারতে প্রতি বছর প্রায় 18 লক্ষ নতুন কেস নথিভুক্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় মতো চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি, কারণ দেরিতে লাখ লাখ নিউরন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নতুন প্রযুক্তি এখন স্ট্রোক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসাকে দ্রুত ও নির্ভুল করে তুলছে।
ব্রেন স্ট্রোক: ব্রেন স্ট্রোক একটি গুরুতর চিকিৎসা জরুরি অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের শিরাগুলিতে বাধা বা রক্তক্ষরণের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। ভারতে প্রতি বছর প্রায় 18 লক্ষ নতুন কেস নথিভুক্ত করা হয়। ডাক্তারদের মতে, স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো জরুরি, কারণ প্রতি মিনিটের দেরিতে লাখ লাখ মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখন আধুনিক প্রযুক্তি যেমন উন্নত স্ক্যানিং এবং ইমেজিং সরঞ্জাম ডাক্তারদের প্রভাবিত অংশের সঠিক সনাক্তকরণে সহায়তা করছে, যার ফলে দ্রুত এবং কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব হয়েছে।
ব্রেন স্ট্রোক কী হয়
ব্রেন স্ট্রোক তখন ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা মস্তিষ্কের কোনো শিরা ফেটে যায়। মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্রমাগত অক্সিজেন এবং পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যখন এই সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তখন মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যেতে শুরু করে। এই কারণেই স্ট্রোককে একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
স্ট্রোক দুই প্রকারের হয়। প্রথমটি ইস্কেমিক স্ট্রোক, যা ঘটে যখন একটি রক্ত জমাট বাঁধা বা কোনো বাধা মস্তিষ্কের শিরাকে বন্ধ করে দেয়। দ্বিতীয়টি হেমোরেজিক স্ট্রোক, যেখানে শিরা ফেটে যায় এবং মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। উভয় পরিস্থিতিতেই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
কাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি
ব্রেন স্ট্রোকের প্রধান কারণ হল উচ্চ রক্তচাপ। যদি কোনো ব্যক্তির রক্তচাপ দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে তার মস্তিষ্কের শিরাগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, ধূমপান, স্থূলতা এবং অনিয়মিত জীবনযাপনও এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যারা অত্যধিক মদ্যপান করেন, শারীরিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকেন বা মানসিক চাপে ভোগেন, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হয়। পরিবারে যদি আগে কারো স্ট্রোক হয়ে থাকে, তাহলে বংশগত কারণে এই ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
লক্ষণগুলি বোঝা জরুরি

ব্রেন স্ট্রোক হঠাৎ করে আসে এবং এর লক্ষণগুলিও তত দ্রুত দেখা দেয়। যদি কোনো ব্যক্তির হঠাৎ কথা বলতে অসুবিধা হয়, মুখের এক অংশ ঝুলে যায়, হাত বা পা অসাড় হয়ে যায়, মাথায় তীব্র ব্যথা হয়, অথবা ঝাপসা দেখা যায়, তাহলে এগুলো স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিকেল ইনস্টিটিউটের নিউরোলজি বিভাগের পরিচালক ড. রাজুল আগরওয়াল-এর মতে, স্ট্রোকের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী করা হবে তা নয়, বরং কখন করা হবে তা। তিনি বলেছেন যে চিকিৎসায় প্রতি মিনিটের দেরিতে লাখ লাখ নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
চিকিৎসায় নতুন প্রযুক্তির বড় ভূমিকা
আগের সময়ে স্ট্রোকের রোগীদের জন্য চিকিৎসার সীমিত সুবিধা ছিল। অনেক সময় ডাক্তারদের বুঝতে সময় লাগত যে স্ট্রোক মস্তিষ্কের কোন অংশে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি এই চ্যালেঞ্জকে সহজ করে দিয়েছে।
গোরক্ষপুর স্থিত রিজেন্সি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট ড. মুকুন্দ আগরওয়াল জানান যে, এখন আমাদের এমন মেশিন আছে যা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বলে দেয় মস্তিষ্কের কোন অংশ প্রভাবিত হয়েছে এবং কোথায় রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এমআরআই, সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি এবং নিউরো-ইমেজিং-এর মতো প্রযুক্তি ডাক্তারদের দ্রুত সঠিক দিকে চিকিৎসা শুরু করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, "থ্রোম্বোলিসিস" নামক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন মস্তিষ্কের শিরায় জমাট বাঁধা রক্তকে ওষুধের মাধ্যমে গলিয়ে ফেলা সম্ভব। যদি এই চিকিৎসা স্ট্রোকের প্রথম তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে শুরু করা যায়, তাহলে রোগীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করা সম্ভব। গুরুতর ক্ষেত্রে "মেকানিক্যাল থ্রোম্বেটমি" ব্যবহার করা হয়, যেখানে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে শিরায় আটকে থাকা রক্ত জমাটকে অপসারণ করা হয়।
পুনরুদ্ধারেও প্রযুক্তির সহায়তা
চিকিৎসার পর রোগীদের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন এর জন্যও অনেক নতুন প্রযুক্তি এসেছে। রোবোটিক থেরাপি, নিউরো-মনিটরিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সিস্টেম রোগীদের আবার হাঁটা, কথা বলা এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে।
অনেক হাসপাতালে এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে রোগীরা তাদের মস্তিষ্ককে পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা করতে পারেন। এর ফলে পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ে এবং মানসিকভাবেও রোগীর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।













