শাহজাহানপুরের ব্যবসায়ী শচীন গ্রোভার স্ত্রী ও ছেলের সাথে আত্মহত্যা করেছেন। ১৬ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে তিনি বন্ধু শ্যাংকি আনন্দ এবং পারিবারিক চাপকে দায়ী করেছেন, ঋণের বোঝা, সুদখোরদের অত্যাচার এবং অপমানে ভেঙে পড়ার কথা লিখেছেন।
শাহজাহানপুর: উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে ব্যবসায়ী শচীন গ্রোভার, তাঁর স্ত্রী শিবাঙ্গী মিশ্র এবং ছোট্ট ছেলে ফাতেহের আত্মহত্যার ঘটনা পুরো শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এবার এই ঘটনায় সামনে আসা ১৬ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নোটে শচীন স্পষ্ট লিখেছেন যে তিনি আর্থিক অনটন, ঋণের চাপ, সুদখোরদের অত্যাচার এবং পরিবারের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন।
সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি তাঁর নিজের বন্ধু শ্যাংকি আনন্দ এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে এনেছেন। শচীন লিখেছেন যে শ্যাংকি ৩০% সুদে টাকা দিত এবং মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর সম্মানহানি করার চেষ্টা করত। এই অপমান এবং বিশ্বাসঘাতকতাই তাঁর জীবন শেষ করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঋণের বোঝা কেড়ে নিল ব্যবসায়ীর জীবন
সুইসাইড নোটে শচীন তাঁর আর্থিক দুরবস্থার পুরো কাহিনী তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন যে লকডাউনের সময় ব্যবসা শুরু করার পর থেকে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ফ্যাক্টরি, বাড়ি এবং গয়না সবই বন্ধক রাখতে হয়েছিল।
তিনি এক বন্ধুর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন, যার উপর তাঁকে প্রতিদিন ২,০০০ টাকা সুদ দিতে হত। ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং সুদখোরদের অত্যাচারে শচীন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলেন। নোটে তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি অবৈধ মদের ব্যবসা করে কিছু উপার্জন করেছিলেন, কিন্তু ধরা পড়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।
সুইসাইড নোটে পরিবারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
শচীন তাঁর সুইসাইড নোটে শুধু বন্ধুদের বিরুদ্ধে নয়, তাঁর পরিবারের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি লিখেছেন যে ভাই গৌরব এবং চাচা পবন সাহায্য করার পরিবর্তে বাড়ি বিক্রি করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
তাঁর বড় ভাই রোহিতকে উদ্দেশ্য করে শচীন লিখেছেন—“আমার মৃত্যুর পর বাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ মিটিয়ে দিও। গাড়ি, স্কুটি, মোবাইল এবং বীমা সব তোমার। আমি শিবাঙ্গীর জীবনও নষ্ট করে দিয়েছি, যদি সম্ভব হয় আমাকে ক্ষমা করে দিও।” এই আবেগপূর্ণ কথাগুলো তাঁর ভেঙে পড়া মন এবং পারিবারিক টানাপোড়েনকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে।
সুইসাইড নোটে বদনাম এবং মানসিক নির্যাতনের যন্ত্রণা
সুইসাইড নোটে শচীন আরও লিখেছেন যে শ্যাংকি এবং তাঁর সঙ্গীরা সমাজে তাঁর বদনাম করেছে এবং তাঁর স্ত্রীর সম্মানহানি করার ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি বলেন যে তিনি সব ঋণ সুদ সহ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু অপমান এবং বিশ্বাসঘাতকতা তাঁকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন যে আত্মীয়স্বজন এবং সমাজ থেকে পাওয়া অপমানের কারণে তাঁর স্ত্রী শিবাঙ্গীও গভীরভাবে আহত হয়েছিলেন। এই মানসিক নির্যাতন পুরো পরিবারকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সুইসাইড নোটের পর পুলিশের তদন্ত চলছে
১৬ পৃষ্ঠার এই সুইসাইড নোট সামনে আসার পর শাহজাহানপুর পুলিশ তাদের তদন্ত আরও জোরদার করেছে। পুলিশ এখন এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যে শচীন এবং তাঁর পরিবারকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দেওয়ার পেছনে কাদের সরাসরি ভূমিকা ছিল।
এই ঘটনা কেবল একটি ব্যবসায়ী পরিবারের আর্থিক বিপর্যয় এবং ঋণের বোঝাকেই তুলে ধরে না, বরং সুদখোরি এবং বন্ধুত্বের আড়ালে বিশ্বাসঘাতকতার এক ভয়াবহ চিত্রও উন্মোচিত করে। আগামীর দিনগুলিতে পুলিশের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনেক বড় তথ্য উদ্ঘাটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।