সিডিএস অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ যদি কৌশলগতভাবে একত্রিত হয়, তবে এটি ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। আইওআর-এ (IOR) ক্রমবর্ধমান বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
নয়াদিল্লি: সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান সতর্ক করেছেন যে, চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ যদি একসঙ্গে আসে, তবে তা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি ডেকে আনতে পারে। তিনি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (Indian Ocean Region - IOR) ক্রমবর্ধমান বিদেশি প্রভাব, ঋণ কূটনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যটি আসে।
সিডিএস-এর বড় বয়ান
ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সম্ভাব্য কৌশলগত জোটবদ্ধতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই তিনটি দেশ যদি তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একত্রিত হয়, তবে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা পরিবেশের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি ১০ জুলাই, ২০২৫-এ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ORF)-এর একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় এই মন্তব্য করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত পরিবর্তনগুলি ভারতের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (IOR) ক্রমবর্ধমান বিদেশি প্রভাব
সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (Indian Ocean Region - IOR)-এর দ্রুত পরিবর্তনশীল কৌশলগত সমীকরণ নিয়েও তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সংকট এবং ঋণ কূটনীতি (Debt Diplomacy) বহিরাগত শক্তিকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, “ভারত মহাসাগর অঞ্চলে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা বহিরাগত শক্তিকে এখানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা ভারসাম্যের উপর পড়ছে।”
ঋণ কূটনীতি কীভাবে বিপদ ডেকে আনছে
সিডিএস স্পষ্ট করেছেন যে, চীনের মতো দেশগুলি তাদের আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ছোট দেশগুলিকে ঋণের জালে ফেলছে। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রভাব নয়, বরং এই দেশগুলির বৈদেশিক নীতি এবং প্রতিরক্ষা নীতিকেও প্রভাবিত করছে। যখন ছোট দেশগুলি বিশাল বিদেশি ঋণে ডুবে যায়, তখন তারা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে স্বাধীন থাকে না। এটি ভারতের চারপাশে এক নতুন ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী (Strategic Encirclement) তৈরির মতো।
দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা উদ্বেগের কারণ
সিডিএস বলেছেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় বারবার সরকার পরিবর্তন এবং মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাত একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যখন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয় এবং শাসন ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকে না, তখন বিদেশি শক্তি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়।
ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনারও উল্লেখ
তাঁর ভাষণে জেনারেল অনিল চৌহান মে ২০২৫-এ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সামরিক উত্তেজনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেন, কারণ সম্ভবত এই প্রথম দুটি পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত দেশ এত কাছাকাছি এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, “ভারত আগেই স্পষ্ট করেছে যে, তারা কোনো পারমাণবিক হামলার হুমকিকে ভয় পায় না। আমার মনে হয়, অপারেশন সিঁদুর ছিল সেই উত্তেজনার একমাত্র উদাহরণ, যেখানে উভয় পারমাণবিক শক্তির মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাত দেখা গিয়েছিল।”