সিজারিয়ান ডেলিভারি: ভুল ধারণা, ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা

সিজারিয়ান ডেলিভারি: ভুল ধারণা, ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা

সিজারিয়ান ডেলিভারি (C-section) আজকাল দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু এটিকে সহজ বিকল্প ভাবা ঠিক নয়। এটি একটি বড় সার্জারি, যেখানে ঝুঁকি এবং পুনরুদ্ধারের সময় বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সি-সেকশন তখনই করানো উচিত যখন মেডিকেল কন্ডিশন এটির প্রয়োজন হয়, অন্যথায় নরমাল ডেলিভারিই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

C-section Delivery Myths, Risks: সিজারিয়ান অপারেশন অর্থাৎ C-section Delivery এখন স্বাভাবিক ডেলিভারির চেয়ে বেশি প্রচলিত। অনেক মহিলাই এটিকে "সহজ রাস্তা" মনে করে বেছে নেন, যেখানে ডাক্তাররা বলেন যে এটি সবসময় নিরাপদ বিকল্প নয়। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন এবং গাইনোকোলজিস্ট ডাঃ বৈশালী শর্মার মতে, সি-সেকশন নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। এই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন তখনই পড়ে যখন মা বা শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু এটিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিমুক্ত বা সহজ মনে করা ভুল। আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই সি-সেকশনের সুবিধা, অসুবিধা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা।

কেন বাড়ছে সি-সেকশনের চল

গত কয়েক বছরে সি-সেকশন ডেলিভারির হার ক্রমাগত বেড়েছে। ডাক্তারদের মতে, পরিবর্তিত জীবনযাপন, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা এবং দেরিতে মা হওয়ার সিদ্ধান্ত এই বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ। এছাড়াও অনেক মহিলা মনে করেন যে সি-সেকশনে ব্যথা কম হয়, যদিও বাস্তবতা এর থেকে আলাদা।

সি-সেকশনকে সহজ ভাবার ভুল

সিনিয়র গাইনোকোলজিস্ট এবং ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ বৈশালী শর্মা জানিয়েছেন যে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হলো সি-সেকশনকে নরমাল ডেলিভারির চেয়ে সহজ মনে করা। তিনি বলেন যে এটি একটি বড় সার্জারি এবং যেকোনো সার্জারির সাথে জড়িত সমস্যাগুলো এতেও থাকে। সি-সেকশনের পরে পুনরুদ্ধারের সময় দীর্ঘ হয় এবং মহিলাদের বেশি ব্যথা ও অসুবিধা সহ্য করতে হয়।

কি প্রতিবার সি-সেকশন দরকারি?

অনেক মহিলার মনে হয় যে যদি প্রথম বাচ্চা সি-সেকশনে হয়, তাহলে দ্বিতীয়টিও একই পদ্ধতিতে হবে। কিন্তু এটা সত্যি নয়। ডাক্তারদের মতে, অনেক সময় প্রথম বাচ্চার জন্য মেডিকেল কন্ডিশনের কারণে সি-সেকশন করতে হয়, যেখানে দ্বিতীয় বাচ্চা নরমাল ডেলিভারিতেও হতে পারে। তাই এটা ভেবে নেওয়া যে প্রতিবার সি-সেকশন জরুরি, ভুল ধারণা।

ঝুঁকি সম্পর্কিত বাস্তবতা

সি-সেকশনকে ঝুঁকিমুক্তও মনে করা যায় না। এতে ইনফেকশন, রক্ত জমাট বাঁধা, সেলাই শুকাতে দেরি হওয়া এবং অন্যান্য জটিলতা থাকতে পারে। এই কারণে ডাক্তাররা সবসময় পরে যত্নের উপর জোর দেন। অপারেশনের পর মহিলার নিজের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত যাতে কোনো অসুবিধা না হয়।

আরেকটি ভুল ধারণা হলো সি-সেকশনে জন্ম নেওয়া বাচ্চার সাথে মায়ের আবেগপূর্ণ সম্পর্ক নরমাল ডেলিভারির মতো গভীর হয় না। ডাঃ বৈশালীর মতে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সি-সেকশন ডেলিভারির পরেও মা ও শিশুর মধ্যে একই রকম স্নেহ এবং বন্ধন থাকে। সাথে সাথে মা স্বাভাবিকভাবে স্তন্যপানও করাতে পারেন।

কখন জরুরি হয় সি-সেকশন?

ডাক্তাররা বলেন যে সি-সেকশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন, বাচ্চার হৃদস্পন্দন হঠাৎ কমে যাওয়া, মায়ের গর্ভাবস্থায় কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া বা বাচ্চার পজিশন সঠিক না থাকা। এছাড়াও অনেক সময় মহিলার স্বাস্থ্য দেখে আগে থেকেই প্ল্যান করে সি-সেকশন করা হয়।

সি-সেকশনের পর রিকভারি খুবই জরুরি

যেহেতু সি-সেকশন একটি বড় সার্জারি, তাই এর পরে রিকভারির দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। ক্ষত পরিষ্কার রাখা, সময় মতো ওষুধ খাওয়া এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সুষম খাবার এবং ধীরে ধীরে হালকা ব্যায়াম করলে শরীর দ্রুত সেরে ওঠে। যখন সেলাই শুকিয়ে যায়, তখন মহিলারা স্বাভাবিকভাবে হালকা কাজকর্ম শুরু করতে পারেন।

Leave a comment