ছাঙ্গুর বাবার স্বীকারোক্তি: বিদেশি তহবিল এবং ধর্মান্তর নেটওয়ার্কের পর্দাফাঁস

ছাঙ্গুর বাবার স্বীকারোক্তি: বিদেশি তহবিল এবং ধর্মান্তর নেটওয়ার্কের পর্দাফাঁস

ছাঙ্গুর বাবা ইডি-র রিমান্ডে স্বীকার করেছেন যে তিনি পাকিস্তান ও দুবাই থেকে তহবিল পেয়েছেন। ধর্মান্তরণ নেটওয়ার্কে সহযোগীদের ভূমিকাও সামনে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন বিদেশি যোগসূত্র এবং সম্পত্তির গভীরে তদন্ত করছে।

ইডি: অবৈধ ধর্মান্তরের মূল হোতা হিসেবে বিবেচিত জামালউদ্দিন ওরফে ছাঙ্গুর বাবার সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে, কিন্তু এই সময়ে করা জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে একটি নতুন দিশা দিয়েছে। পাকিস্তান, দুবাই এবং অন্যান্য বিদেশি উৎস থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে ছাঙ্গুরের স্বীকারোক্তি শুধুমাত্র তদন্তের পরিধি বাড়ায়নি, বরং পুরো বিষয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের রূপ দিয়েছে।

ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদে বড়োসড়ো পর্দাফাঁস

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদে ছাঙ্গুর বাবা স্বীকার করেছেন যে দুবাই ভ্রমণের খরচ তার 'সহযোগীরা' বহন করত। তিনি স্বীকার করেছেন যে তার সংস্থা বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা সাহায্য পেয়েছে, যদিও তিনি এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে এই অর্থ দরিদ্রদের সাহায্যার্থে খরচ করা হয়েছে। ইডি যখন তার কাছে এই খরচের হিসাব চেয়েছিল, তখন তিনি এড়িয়ে যান। কখনও চুপ করে যান, কখনও বলেন যে তার কাছে 'সব নথি নেই'। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সন্দেহ, এই তহবিল ধর্মীয় ধর্মান্তরের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

নীतू ওরফে নাসরিনের ভূমিকা এবং সম্পত্তির খেলা

জিজ্ঞাসাবাদে এ-ও জানা গেছে যে এই নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত নীतू ওরফে নাসরিনকে সামনে রেখে অনেক সম্পত্তি কেনা হয়েছে। ছাঙ্গুর দাবি করেছেন যে নাসরিন ধর্মান্তর কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিল, এবং সেইজন্য তার নামে বিনিয়োগ করা 'সংগঠনের কৌশল'-এর অংশ ছিল। এটিএস এবং ইডি উভয়ই এখন নাসরিনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসরিন বিশেষ কিছু জানায়নি, কিন্তু এখন ইডি-র কাছে শক্তিশালী প্রমাণ ও নথি থাকায় তার পক্ষে জবাব দেওয়া সহজ হবে না।

সহযোগীদের ওপর কড়া নজর

ইডি এখন এই নেটওয়ার্কে জড়িত অন্যান্যদের চিহ্নিত করে রিমান্ডে নেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এদের মধ্যে প্রধান নাম হল নবীন রোহরা, যাকে ছাঙ্গুরের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। নবীনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখন তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন আদালতে জানানো হয়েছে। ইডি মনে করে যে নবীন শুধু তহবিলের গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র নয়, বরং ছাঙ্গুরের সেই সম্পত্তিগুলোর তথ্যও রাখে, যা এখনও পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে গেছে।

বিদেশি যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সতর্কতা

এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ছাঙ্গুর বাবার নেটওয়ার্ক শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে দুবাই এবং ইউএই-তে অবস্থিত কিছু সংস্থা এই পুরো ষড়যন্ত্রের তহবিল জুগিয়ে যাচ্ছিল। ইউপি এটিএস এখন এই বিষয়ে তদন্ত করছে যে এই সংস্থাগুলো কোন মাধ্যমে ভারতে টাকা পাঠাচ্ছিল। হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছিল নাকি ব্যাঙ্কিং চ্যানেলের মাধ্যমে ভুয়া এনজিও-র নামে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং সামাজিক উদ্বেগ

এই পুরো ঘটনার সামাজিক প্রভাবও দ্রুত সামনে আসছে। বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদের কার্যালয়ে প্রতিদিন বহু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আসছেন, যারা জানাচ্ছেন যে কীভাবে তাদের লোভ, ভয় এবং প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাঙ্গুর বাবা ও তার লোকেদের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন ও অর্থনৈতিক প্রলোভন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এখন এই অভিযোগগুলোকে প্রমাণ হিসেবে আদালতে পেশ করা হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপ

শুক্রবার ছাঙ্গুর বাবার রিমান্ড শেষ হচ্ছে এবং ইডি তাকে আদালতে পেশ করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতের আবেদন করবে। রিমান্ডের শেষ দিনেও জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ ইডি এখনও কিছু প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর ছাঙ্গুরের কাছ থেকে পেতে চায়। এছাড়াও নবীন রোহরা, নীতু এবং অন্যান্য সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনি প্রক্রিয়া চলছে। যদি এদের সঙ্গে জড়িত নথি ও ব্যাঙ্কের ডিটেইলস পাওয়া যায়, তাহলে এই মামলা আরও বড় আকার নিতে পারে।

Leave a comment