দেশের খনিজ সম্পদে আরও একটি বড় নাম যুক্ত হল। ছত্তিশগড়ের মহাসমুন্দ জেলার ভালুকোনা এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আবিষ্কার হয়েছে, যা ভারতকে ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই তথ্য ৪ অগাস্ট বিএসই-কে জানিয়েছে ডেকান গোল্ড মাইনস লিমিটেড। কোম্পানি জানিয়েছে, ভালুকোনা প্রোজেক্টের অধীনে নিকেল, কপার অর্থাৎ তামা এবং প্ল্যাটিনাম গ্রুপ এলিমেন্টস (PGE)-এর সন্ধান পাওয়া গেছে।
৭০০ মিটার লম্বা খনিজ জোন পাওয়া গেছে
ডেকান গোল্ড তাদের বিবৃতিতে বলেছে, তারা প্রায় ৭০০ মিটার লম্বা খনিজযুক্ত জোন খুঁজে পেয়েছে, যেখানে নিকেল, তামা এবং PGE-এর মতো মূল্যবান খনিজ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই অঞ্চলে পাওয়া শিলার গঠন মাফিক-আলট্রামাফিক, যা বিশ্বের কিছু প্রধান খনিজ ভাণ্ডার যেমন অস্ট্রেলিয়ার নেবো-বেবল এবং ফিনল্যান্ডের আহমাভারার সঙ্গে মেলে।
সিঙ্গরৌলিতেও REE-এর ভাণ্ডার পাওয়ার দাবি করা হয়েছিল
এর আগে ২৮ জুলাই সংসদে কয়লা ও খনি মন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রদেশের সিঙ্গরৌলি কোলফিল্ডসেও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস (REEs)-এর বড় ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। এমন একটা সময়ে যখন চীন এই খনিজগুলির রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তখন ভারতের জন্য এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ডেকান গোল্ডের শেয়ারের দাম বেড়েছে
শেয়ার বাজারে এই খবর পৌঁছতেই ডেকান গোল্ড মাইনসের শেয়ারে तेजी দেখা গেছে। ৪ অগাস্ট এর শেয়ার ১৩৭.৯৫ টাকার ক্লোজিং প্রাইসের তুলনায় ১৪০ টাকায় খোলে এবং সকাল ১০:৩০টা পর্যন্ত ১৪১.৭০ টাকায় পৌঁছায়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই আবিষ্কার নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
কোম্পানি জানিয়েছে, ড্রোন ভিত্তিক ম্যাগনেটিক সার্ভে থেকে মাটির নিচে আরও খনিজ জোন থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আইপি অর্থাৎ ইন্ডুসড পোলারাইজেশন সার্ভে থেকে মাটির ৩০০ মিটার গভীরে সালফাইড মিনারেলাইজেশনের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এর মানে হল এই এলাকা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হতে পারে।
ফসল কাটার পর ড্রিলিং করা হবে
ডেকান গোল্ডের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এলাকায় ফসল কাটার মরসুম চলছে, সেই কারণে ড্রিলিংয়ের কাজ কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। ড্রিলিংয়ের পর আশেপাশের এলাকা থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে আরও খনিজ এলাকা খুঁজে বের করা হবে।
কোম্পানির এমডি এটিকে গর্বের মুহূর্ত বলেছেন
কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডঃ হনুমা প্রসাদ মোডিয়ালি এটিকে ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক আবিষ্কার বলেছেন। তিনি বলেছেন, এই প্রথম দেশে নিকেল, তামা এবং প্ল্যাটিনাম গ্রুপের সালফাইড ভিত্তিক খনিজ গঠন পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার ভারতকে গ্লোবাল ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সাপ্লাই চেনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলতে পারে।
ডেকান গোল্ড এই খনি অঞ্চলটি সরকারের কাছ থেকে ১ এপ্রিল ২০২৫-এ পেয়েছিল। এই ব্লকটি প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং মহাসমুন্দ জেলার বাসনা তহসিলে অবস্থিত। কোম্পানি বন বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়েছে এবং জমিতে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।
ভারতের একমাত্র লিস্টেড ক্রিটিক্যাল মিনারেল কোম্পানি
ডেকান গোল্ড মাইনস ভারতের একমাত্র লিস্টেড কোম্পানি যা গোল্ড এবং ক্রিটিক্যাল মিনারেলসের খনিতে সক্রিয়। এটি বিএসইতে লিস্টেড এবং দেশের প্রথম কোম্পানি যারা এই ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থের গবেষণা এবং অনুসন্ধানে সাফল্য পেয়েছে।
নিকেল হল একটি রূপালী-ধূসর রঙের শক্ত ধাতু যা সহজে মরিচা ধরে না। এটি মূলত স্টেইনলেস স্টিল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি বিদ্যুতের ভালো পরিবাহক। এই ধাতু মূলত ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ব্যাটারি, মেশিনারি, পাইপ, কোটিং এবং এয়ারোস্পেসের মতো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
তামা হল লালচে-বাদামী রঙের ধাতু, যা বিদ্যুৎ এবং তাপের সবচেয়ে ভালো পরিবাহক। এটি প্রতিটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ওয়্যারিং, মোটর এবং ট্রান্সফর্মারে প্রয়োজনীয়। এছাড়াও EV-এর চার্জিং ইউনিট, রিনিউয়েবল এনার্জি সিস্টেম, সোলার প্যানেল এবং ভবন নির্মাণে এর ব্যবহার রয়েছে।
এই খনিজগুলির ভারতের কেন প্রয়োজন
ভারত এখনও এই ধাতুগুলির বেশিরভাগ অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে। EV, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, ক্লিন এনার্জি মিশন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি-র মতো ক্ষেত্রগুলির জন্য এই খনিজগুলি অত্যন্ত জরুরি। ভারত সরকার এগুলিকে "আত্মনির্ভর ভারত" অভিযানের অধীনে কৌশলগত সম্পদের তালিকায় রেখেছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়লে ভারত বিদেশি নির্ভরতা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারে।
এই আবিষ্কার দেশের খনিজ সম্পদ ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে, যা আগামী বছরগুলিতে ভারতের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস নীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।