মধ্যপ্রদেশে একটানা ভারী বৃষ্টি জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে। রাজ্যের অনেক অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মোহন যাদব ক্রমাগত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। তিনি প্রতি মুহূর্তের খবর নিচ্ছেন এবং প্রশাসনকে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বন্যার মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যে আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের ২৫৯টি সংবেদনশীল এলাকা চিহ্নিত করে বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ভোপাল, গোয়ালিয়র, জবলপুর এবং ধরে এনডিআরএফ-এর দল মোতায়েন করা হয়েছে, যেখানে অন্যান্য সংবেদনশীল এলাকায় এসডিআরএফ সক্রিয় করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জোরদার প্রস্তুতি
রাজ্য সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ১১১টি কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে, যারা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। একই সাথে, ১১টি জেলায় ৩,৩০০ বিপর্যয় মিত্র এবং ৮০,৩৭৫ জন সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সময় মতো সতর্ক করার জন্য রাজ্য দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ১ জুন থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে SACHET পোর্টালের মাধ্যমে ৭৫টি রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই অ্যালার্টগুলি মোবাইল ফোনে তিন ঘণ্টা আগে পাঠানো হয়েছে, যাতে সম্ভাব্য বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচানো যায়।
রাজ্য স্তরে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে, যা জলস্তর, বৃষ্টি এবং ত্রাণ কাজের রিয়েল টাইম নিরীক্ষণ করছে। সেচ বিভাগ বাঁধের জল স্তর এবং জল নিষ্কাশনের তথ্য সময় মতো জেলা প্রশাসনকে জানাচ্ছে।
অতিবৃষ্টির কারণে অনেক জেলায় জল জমেছে
এখন পর্যন্ত রাজ্যে গড়ে ৭০৩.৩৩ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০% বেশি। মান্ডলা জেলায় মোট বৃষ্টির ৫১% মাত্র চার দিনে রেকর্ড করা হয়েছে। রাজ্যের ৪০টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, ৯টি জেলায় স্বাভাবিক এবং ২টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির কারণে ২৫৪টি গ্রামীণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২১২টি রাস্তা দ্রুত মেরামত করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ব্যারিকেড বসানো হয়েছে যাতে কোনো প্রাণহানি না হয়। সব বড় ও ছোট বাঁধে জলস্তর বেড়েছে, তবে প্রশাসন জল ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করেছে যাতে শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তাই নয়, সেচের জন্য পর্যাপ্ত জলও সুরক্ষিত থাকে।
ত্রাণ শিবিরে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় পেয়েছেন
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য জুড়ে দ্রুত ত্রাণ কাজ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্য জুড়ে ৫৩টি ত্রাণ শিবির চলছে, যেখানে ৩,০৬৫ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মাউগঞ্জ, গুনা, মুরাইনা, দামোহ এবং রায়সেন জেলায় আগে থেকে চালু ত্রাণ শিবিরগুলোতে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার, পানীয় জল ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজ্যে এখন পর্যন্ত ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল ৪৩২টি অপারেশন চালিয়েছে, যেখানে ৩,৬২৮ জন নাগরিক এবং ৯৪টি গবাদি পশু উদ্ধার করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে ৯৪টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে প্রশাসন দ্রুত বিকল্প পথ তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেছে।
আর্থিক সাহায্য এবং সরকারি প্রচেষ্টা
বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্যের জন্য জেলা কালেক্টররা এখন পর্যন্ত ২৮.৪৯ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন। রাজ্য সরকার এই খাতে মোট ৩,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যাতে কোনো স্তরে আর্থিক বাধা না আসে।
৩০ জুলাই আবহাওয়া দপ্তরের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসের পর মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাজ্য स्तरीय বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেন এবং ত্রাণ কাজের পর্যালোচনা করেন। তিনি উদ্ধারকারী দলের মনোবল বাড়ান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে তাদের সাহস জোগান। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে কোনো নাগরিক যেন সমস্যায় না পড়েন এবং ত্রাণ কাজে কোনো ঢিলেমি না থাকে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে এবং কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকেও সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।