চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছে। ভারত ও বাংলাদেশ এর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে চীন সেই উদ্বেগ খারিজ করে দিয়েছে।
Brahmaputra Dam: চীন সম্প্রতি তিব্বত অঞ্চলের নিংচি শহরে ব্রহ্মপুত্র নদের (ইয়ারলুং সাংপো) উপর একটি নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সূচনা করেছে। এই বাঁধের ঘোষণা করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেয়াং। এই নির্মাণকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোতে জলপ্রবাহের উপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন স্পষ্ট করেছেন যে এই বাঁধের কারণে ভাটির কোনো অঞ্চলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, প্রকল্পটি শুরু করার আগে ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া
অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এই বাঁধকে "ওয়াটার বোম্ব" আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন এটি ভারতের সুরক্ষা ও অস্তিত্বের জন্য গুরুতর হুমকি। তাঁর মতে, এই বাঁধ থেকে হঠাৎ করে জল ছাড়লে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে ভয়াবহ বন্যা আসতে পারে, যা একটি বড় মানবিক সংকট তৈরি করতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র নদের গুরুত্ব
ব্রহ্মপুত্র একটি আন্তর্জাতিক নদ, যার অববাহিকা প্রায় ৫,৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি চারটি দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত — চীন (৫০.৫%), ভারত (৩৩.৩%), বাংলাদেশ (৮.১%) এবং ভুটান (৭.৮%)। ভারতে এটি অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে।
নদীটির উৎস তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে অবস্থিত চেমায়ুংদুং হিমবাহ থেকে। তিব্বতে একে ইয়ারলুং সাংপো বলা হয়। এটি পূর্ব দিকে প্রায় ১,২০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর ভারতে প্রবেশ করেছে। ব্রহ্মপুত্রের বেশ কয়েকটি প্রধান উপনদী রয়েছে, যেমন সুবনসিরি, কামেং, মানস এবং সংকোশ।
বন্যা ও পরিবেশগত সংকটের আশঙ্কা
ভারতে ব্রহ্মপুত্র নদের অধিকাংশ উপনদী বর্ষা নির্ভর। তাই প্রতি বছর ভারী বৃষ্টির কারণে আসামের মতো রাজ্যগুলোতে বন্যা, ভূমি ক্ষয় এবং জলধারার পরিবর্তন একটি সাধারণ ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চীন যদি বাঁধ থেকে জলপ্রবাহ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয় বা ছেড়ে দেয়, তবে ভাটির অঞ্চলগুলোতে বন্যার বিপদ আরও বাড়তে পারে।
ভারতের রণনীতি ও জবাব
ভারতও ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নিজেদের অংশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (hydropower projects) তৈরি করছে, বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশে। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, চীনের বাঁধ নির্মাণকে ভারসাম্যে রাখার একটি কৌশল হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ভারত ও চীনের মধ্যে Expert Level Mechanism (ELM) ২০০৬ সালে স্থাপিত হয়েছিল, যাতে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর উপর আলোচনা বজায় থাকে। এই চুক্তির অধীনে চীন বন্যার মৌসুমে ভারতকে ব্রহ্মপুত্র ও শতদ্রু নদীর জলবিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে। তবে, ভারতের এখন আশঙ্কা হচ্ছে যে চীন এই ধরনের transparency দুর্বল করে দিতে পারে।
বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন
ব্রহ্মপুত্রের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ এই বাঁধ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ এর ফলে তাদের কৃষিকাজ ও জলের প্রাপ্যতার উপর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও চীনের দাবি, বাঁধটি শুধু run-of-the-river model-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং জলাধারে বেশি জল আটকানো হবে না।