টাউন গার্ড রোডের ব্যস্ত রাস্তায় এক অচেনা যুবকের নিথর দেহ ঘিরে শুরু হল চাঞ্চল্য। চুঁচুড়ার প্রাণকেন্দ্রে, বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনের ফুটপাথে পড়ে থাকা সেই দেহ ঘিরে আতঙ্ক ছড়াল গোটা এলাকায়। প্রথমে নেশাগ্রস্ত ভেবে এড়িয়ে গেলেও, সকালে যখনও অচল অবস্থায় রইলেন যুবক, তখনই সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রাতভর রাস্তায় পড়ে ছিলেন যুবক, পুলিশ ডেকে উদ্ধার করলেন স্থানীয়রাই
মঙ্গলবার সন্ধে থেকে রাস্তার ধারে সেই একই জায়গায় পড়ে ছিলেন যুবক। বুধবার সকালেও পরিবর্তন হয়নি দৃশ্যপট। স্থানীয়রা তখনই খবর দেন চুঁচুড়া থানায়। ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পুলিশ দ্রুত নিয়ে যায় তাঁকে ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি—চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, যুবক অনেক আগেই মারা গিয়েছেন।
পরিচয় মিলল ‘আকাশ’-এর, কাজ হারানোই নেশার দিকে ঠেলে দেয়?
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম আকাশ। পেশায় ছিলেন মিষ্টির দোকানের কর্মচারী। কিন্তু অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে কয়েকদিন আগেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তারপরে থেকে কোথাও নিয়মিত কাজ পাননি। এক সহকর্মী জানিয়েছেন, “তিনদিন আগেও সে দোকানে এসেছিল। মালিক মদ্যপ অবস্থায় দেখে তাড়িয়ে দেয়।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধার চাইছিলেন, রাতেই পড়লেন রাস্তায়
এলাকাবাসীর একাংশ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকাশ কয়েকজনের কাছে টাকা চাইছিলেন। অনুমান, মদের জন্যই সে টাকা চাইছিল। পরে রাতে তাঁকে রাস্তায় মদ্যপ অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। সকলে ভেবেছিলেন, আগের মতোই নেশা করে শুয়ে পড়েছেন। কিন্তু সকালেও তাঁকে নড়াচড়া করতে না দেখে সন্দেহ হয়।
“যাওয়ার সময়ে দেখি উপুড় হয়ে পড়ে আছে”—বলেন প্রতিবেশী
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ সাবির বলেন, “বুধবার সকালে কাজে বেরোচ্ছিলাম। তখনই দেখি এক যুবক উপুড় হয়ে পড়ে আছে। প্রথমে ভাবলাম হয়তো রাতের মতোই নেশা করে ঘুমাচ্ছে। পরে খবর দিলে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে।” এলাকার একাধিক মানুষ জানিয়েছেন, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
এক দোকান থেকে অন্য দোকান, শেষে রাস্তায় মৃত্যু
চুঁচুড়ার একাধিক মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন আকাশ। কিন্তু একই কারণে—অতিরিক্ত মদ্যপান—প্রায় সব জায়গা থেকেই তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। রমেশ চৌধুরী নামে এক কারিগর জানান, “ছেলেটা খারাপ ছিল না, কিন্তু নেশা সব নষ্ট করে দিল।”
অভাব, একাকিত্ব আর নেশার জালে হারিয়ে গেল আরেকটা জীবন
চাকরি হারানোর হতাশা, সামাজিক অবহেলা ও আসক্তির মরণফাঁদ—সব মিলিয়ে মৃত্যু যেন সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র। কোনও আত্মীয়স্বজন না থাকায় দেহের দাবিদারও মেলেনি এখনো পর্যন্ত। পুলিশ জানিয়েছে, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।চুঁচুড়ার রাস্তায় পড়ে থাকা এক অচেনা যুবকের মৃত্যুই তুলে দিল আরও বড় প্রশ্ন—এই সমাজে বেকার, অভাবী, নেশাগ্রস্ত যুবকদের জন্য আদৌ কি কোনও পুনর্গঠনমূলক ব্যবস্থা রয়েছে? না কি তারা নিঃশব্দে হারিয়ে যাবে রাস্তার ধুলোয়?