উত্তাল মালদা প্রকাশ্যে গুলি, ছুরি—দাপুটে তৃণমূল নেতার রক্তাক্ত লাশে থমকে গেল লক্ষীপুর

উত্তাল মালদা প্রকাশ্যে গুলি, ছুরি—দাপুটে তৃণমূল নেতার রক্তাক্ত লাশে থমকে গেল লক্ষীপুর
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

গত বৃহস্পতিবার রাতে মালদার ইংরেজবাজার থানার অন্তর্গত লক্ষীপুরের একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হলেন তৃণমূল নেতা আবুল কালাম আজাদ। ৩৬ বছর বয়সী এই নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে, ছুরি চালিয়ে খুন করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। মুহূর্তে রক্তে ভিজে যায় মাটির মেঝে, আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে আমন্ত্রিতরা।

জমি ব্যবসা থেকেই খুনের সূত্র? পুরনো ব্যবসায়ী সঙ্গীকেই গ্রেফতার করল পুলিশ

তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মাইনুল শেখ নামে এক ব্যক্তির জমিজমা সংক্রান্ত ব্যবসা ছিল। সেই সম্পর্কই কি কাল হয়ে দাঁড়াল? পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, অর্থনৈতিক বিরোধের জেরেই খুন হতে হয়েছে আবুল কালামকে। শুক্রবার গভীর রাতে অভিযুক্ত মাইনুল শেখ-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ।

আদালতে পেশ চার অভিযুক্ত, পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ

শনিবার ধৃত চারজনকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের জেরা করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র, মোটরবাইক ও সম্ভাব্য কন্ট্রাক্ট কিলারদের হদিশ পেতে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

দলের অন্দরেই ষড়যন্ত্র? মাইনুলকে তৃণমূলে ঢোকাতে ভূমিকা নিয়েছিল কারা?

এই ঘটনার পর তৃণমূলের অন্দরেও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। জেলার মহিলা সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন—মাইনুল আগে কংগ্রেস করত। ও কাজীগ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী নেতা ওকে জোর করে তৃণমূলে ঢুকিয়ে দেন। আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এবার তারই ফল পেল দল।

“একজন দাগি অপরাধীকে দলে টেনে ভুল করেছে নেতৃত্ব”—প্রতিভার তোপ

প্রতিভা সিংহ আরও বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে দলবাজির জন্য অপরাধীদের প্রশ্রয় দিলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। মাইনুল শেখ একজন দাগি। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, দল যেন ওকে বহিষ্কার করে। না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটবে।” তাঁর মন্তব্যে স্পষ্ট, এই খুনের পেছনে রাজনৈতিক মদত ছিল বলেই তাঁর আশঙ্কা।

আবুল কালামের দুই ঠিকানা—দুই জীবন

জানা গিয়েছে, আবুল কালামের বাড়ি মালদার মানিকচক থানার গোপালপুরে হলেও তিনি ইংরেজবাজারের মিল্কিতেও এক নতুন বাড়ি বানিয়েছিলেন। রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন এই নেতা। এলাকায় জমি ব্যবসা, দলীয় সংগঠন গড়ে তোলা, এবং জনসংযোগে ছিলেন সক্রিয়। সেই জনপ্রিয়তাই কি শত্রু বাড়িয়ে দিল?

রাজনীতির মুখোশের আড়ালে অপরাধ? তদন্তে নয়া মোড়ের ইঙ্গিত

এই হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল, না কি রাজনৈতিক গোষ্ঠী-সংঘাত? পুলিশের পাশাপাশি জেলার রাজনৈতিক মহলেও জোরালো হচ্ছে জল্পনা। পুরনো মামলা, জমিজমার লোভ, দলীয় নেতৃত্বে প্রভাব বিস্তার—সব মিলিয়ে আবুল কালাম আজাদের মৃত্যু মালদার রাজনীতিতে নয়া ধাক্কা দিয়ে গেল।

ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের মোটিভ আরও স্পষ্ট হবে ধৃতদের জেরা ও মোবাইল কল রেকর্ড বিশ্লেষণের পর। পাশাপাশি খুনের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক "অর্ডার" ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a comment