আনাজের দাম বৃদ্ধি: ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার কারণে দেশের বাজারে আলু, পেঁয়াজ ও টমেটোর দাম ইতিমধ্যেই বেড়েছে। পরিবেশবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০১৯–২০ সাল থেকে বিভিন্ন রাজ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ও অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া এই নিত্যপ্রয়োজনীয় তিনটি আনাজের উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে।
কেন দাম বাড়ছে: মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে ২০১৯ সালে প্রবল বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যায়। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘উম্পুন’ এবং অতিবৃষ্টির কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। হিমাচলপ্রদেশ ও কর্নাটকে টমেটোর উৎপাদনও ১২ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে এক মাসের মধ্যে টমেটোর দাম প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা থেকে ৬৭ টাকায় পৌঁছে যায়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাজারে প্রভাব
বছরের উষ্ণতম বছর: ২০২৪ সালের ভারতীয় আবহাওয়া মানব ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ২০২৩–এর অক্টোবর মাসে আনাজের দাম ৩৭% বৃদ্ধি পায়, যা ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৪২%–এ পৌঁছায়।
চরম আবহাওয়া ও উৎপাদন হ্রাস: পুনের ভারতীয় ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি (IITM) অনুসারে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে দেশ মোট বৃষ্টির ৭৫% পান। বৃষ্টির প্যাটার্নে পরিবর্তন হলে, উৎপাদন কমে বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে আলু, পেঁয়াজ ও টমেটোর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় আনাজের ওপর প্রভাব পড়ে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: দেশের প্রধান আনাজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর উৎপাদন কমে গেলে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটের উপর সরাসরি চাপ পড়ে। দৈনন্দিন বাজারে ৩০–৮০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়।
মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে প্রভাব
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর রান্নাঘরে এখন আলু, পেঁয়াজ ও টমেটোর দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই উপাদানের মূল্য বৃদ্ধি পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্য পরিকল্পনায় চাপ সৃষ্টি করছে।
উদাহরণ: এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য, প্রতিদিন ১ কেজি আলু ও ১ কেজি পেঁয়াজের ব্যয় বাড়লে মাসের খাদ্য বাজেটের ১৫–২০% বৃদ্ধি হতে পারে। এর ফলে পরিবারগুলোর আর্থিক চাপ বাড়ছে।
গবেষণা ও সমীক্ষা
ক্লাইমেট ট্রেন্ডস: আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ক্লাইমেট ট্রেন্ডস’ জানিয়েছে, ভারতের কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের প্রথম তিনটি ফল ও আনাজ উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য: জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শুধু খাদ্য সংকটই নয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও সময়ের অপেক্ষা। কৃষিবিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
সমাধান ও ভবিষ্যতের পরামর্শ
কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার: উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও বীজ ব্যবহার করতে হবে।
সংরক্ষণ ও স্টোরেজ উন্নত করা: অতিবৃষ্টির বা কম বৃষ্টির জন্য সংরক্ষণ ও স্টোরেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
সরকারি পদক্ষেপ: সরকারের সহায়তা ও নীতি নির্ধারণে বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে।