দিল্লি সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে 1 নভেম্বর থেকে দিল্লিতে নন-বিএস VI বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই আদেশ বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা কমিশন (CAQM)-এর নির্দেশনায় জারি করা হয়েছে। শুধুমাত্র বিএস-VI, সিএনজি, এলএনজি এবং বৈদ্যুতিক যানই দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে।
Delhi Pollution: দিল্লিতে বাড়তে থাকা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। 1 নভেম্বর 2025 থেকে দিল্লিতে বিএস-VI নির্গমন মান পূরণ না করা দিল্লি-বহির্ভূত নিবন্ধিত বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ির প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। এই নির্দেশ বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা কমিশন (CAQM)-এর আদেশ অনুযায়ী কার্যকর করা হয়েছে। পরিবহন দপ্তর জানিয়েছে যে শুধুমাত্র বিএস-VI, সিএনজি, এলএনজি এবং বৈদ্যুতিক যানই দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে, যেখানে বিএস-IV ডিজেল গাড়িগুলিকে 31 অক্টোবর 2026 পর্যন্ত সীমিত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ
প্রতি বছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে দিল্লির বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠে। ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, আবহাওয়ার অবস্থা এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারণে বায়ু গুণমান সূচক (AQI) বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এবার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন শুধুমাত্র বিএস-VI মানসম্পন্ন বাণিজ্যিক যানগুলিকেই দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
CAQM-এর বক্তব্য হলো, দিল্লিতে বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হলো পুরোনো ডিজেল গাড়ি। এই যানগুলি অত্যধিক পরিমাণে কার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং সূক্ষ্ম কণা নির্গত করে, যার ফলে বাতাসে বিষাক্ত উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায়।
1 নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে নিষেধাজ্ঞা
দিল্লি পরিবহন দপ্তরের জারি করা পাবলিক নোটিশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে 1 নভেম্বর থেকে দিল্লির সীমান্তগুলিতে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। এই তারিখের পর দিল্লির বাইরে নিবন্ধিত কোনো নন-বিএস VI বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধুমাত্র সেই সমস্ত গাড়িই দিল্লিতে আসতে পারবে যারা বিএস-VI নির্গমন মান মেনে চলে।
এই আদেশ প্রধানত দিল্লি-এনসিআর-এ চলাচলকারী ডিজেল ট্রাক এবং পণ্যবাহী যানগুলির উপর প্রযোজ্য হবে। দপ্তর সমস্ত পরিবহন সংস্থা এবং গাড়ির মালিকদের কাছে অনুরোধ করেছে যে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের গাড়িগুলিকে বিএস-VI শ্রেণীতে আপগ্রেড করে নেন, যাতে তাদের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
কোন গাড়িগুলি ছাড় পাবে
সরকার এই আদেশে কিছু গাড়িকে ছাড় দিয়েছে। দিল্লিতে ইতিমধ্যে নিবন্ধিত বাণিজ্যিক পণ্যবাহী গাড়িগুলি এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। এছাড়াও, বিএস-VI মানসম্পন্ন ডিজেল গাড়ি, সিএনজি, এলএনজি এবং বৈদ্যুতিক যানগুলি কোনো বাধা ছাড়াই দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে।
অন্যদিকে, দিল্লির বাইরে নিবন্ধিত বিএস-IV বাণিজ্যিক ডিজেল গাড়িগুলিকে 31 অক্টোবর 2026 পর্যন্ত সীমিত সময়ের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এই তারিখের পর শুধুমাত্র বিএস-VI কমপ্লায়েন্ট গাড়িগুলিকেই দিল্লিতে আসার অনুমতি দেওয়া হবে।
বিএস-VI মানদণ্ড কী

বিএস-VI অর্থাৎ ভারত স্টেজ-6 নির্গমন মানদণ্ড, যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি নিয়ম। এই মানদণ্ডগুলি ইউরো-6 নির্গমন মানদণ্ডের অনুরূপ, যা আন্তর্জাতিক স্তরে গৃহীত হয়েছে। বিএস-VI ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া পুরোনো গাড়ির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম হয়। এই ইঞ্জিনগুলিতে সালফারের পরিমাণও কম থাকে, যা বাতাসে দূষণ হ্রাস করে।
সরকারের বিশ্বাস যে যদি দিল্লি এবং এনসিআর-এ শুধুমাত্র বিএস-VI মানদণ্ডযুক্ত গাড়ি চলাচল করে, তবে বাতাসে বিষাক্ত কণার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
এই সিদ্ধান্ত কেন জরুরি
দিল্লির বাতাস প্রতি বছর শীতে শ্বাসরোধকারী হয়ে ওঠে। আবহাওয়া ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে সাথে বাতাসের গতি কমে যায়, যার ফলে দূষণকারী উপাদানগুলি উপরে উঠতে পারে না এবং পরিবেশে জমা হয়। এর সাথে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং শিল্প ধোঁয়ার প্রভাবও বেড়ে যায়। এর ফলস্বরূপ, AQI 400 থেকে 500 পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা গুরুতর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
এই বিষয়টি বিবেচনা করে, সরকার যানবাহন থেকে নির্গত দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়েছে। বিএস-VI মানদণ্ড কার্যকর করার ফলে নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) এর মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
CAQM এবং দিল্লি সরকারের যৌথ উদ্যোগ
বায়ু গুণমান ব্যবস্থাপনা কমিশন (CAQM) এবং দিল্লি সরকার এই দিকে নিরন্তর কাজ করছে। প্রতি বছর শীতকালে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP) কার্যকর করা হয়, যার অধীনে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা, স্কুল ছুটি দেওয়া এবং পুরোনো গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এবার সরকার আগে থেকেই নন-বিএস VI গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, সীমান্তগুলিতে গাড়ির পরীক্ষা বাড়ানো হবে এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের উপর কঠোর জরিমানা আরোপ করা হবে।













