আফ্রিকার अशाন্ত অঞ্চল পূর্ব কঙ্গোতে বহু বছর ধরে চলা হিংসা ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করার দিকে একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
Congo-Rwanda Ceasefire: আফ্রিকার अशाন্ত অঞ্চল পূর্ব কঙ্গোতে প্রায় তিন দশক ধরে চলা হিংসা ও সংঘাত বন্ধ করার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কঙ্গো সরকার ও রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে আফ্রিকার দীর্ঘতম ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতগুলির মধ্যে একটি বন্ধ হওয়ার আশা করা যাচ্ছে।
এই সংঘাতকে কেন 'আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ' বলা হয়?
পূর্ব কঙ্গোতে চলা এই যুদ্ধকে 'আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ' (Africa’s World War) বলা হয়। এর কারণ হল এই সংঘাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নয়টিরও বেশি আফ্রিকান দেশ এবং কয়েকশো সশস্ত্র গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে এই হিংসা ধীরে ধীরে এত বড় আকার ধারণ করেছে যে অনুমান করা হয় এতে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘ এই সংঘাতকে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ও গুরুতর মানবিক সংকটগুলির মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেছে। জাতিগত হিংসা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত বিরোধের মতো কারণগুলি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে কী স্থির হয়েছে?
এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় হয়েছে। এতে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (DRC) এবং রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। কাতারে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে স্থির হয়েছে যে:
- সমস্ত পক্ষ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে।
- দখল করা অঞ্চল থেকে পিছু হটবে।
- স্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
- বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন ও মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
- কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স চিসেকিদি এই চুক্তিকে 'শান্তির দিকে প্রথম বাস্তব পদক্ষেপ' বলেছেন, অন্যদিকে রুয়ান্ডা সরকারও এটিকে ইতিবাচক উদ্যোগ বলে জানিয়েছে।
কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে তিন দশক পুরনো বিরোধ কেন?
এই হিংসার শিকড় ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যা থেকে এসেছে, যেখানে প্রায় ৮ লক্ষ Tutsi এবং উদারপন্থী Hutু মারা গিয়েছিলেন। এরপর বহু সংখ্যক Hutু শরণার্থী কঙ্গোতে (তৎকালীন জায়ারে) পালিয়ে যান, যাদের মধ্যে গণহত্যার অভিযুক্তরাও ছিলেন। রুয়ান্ডা এই চরমপন্থী Hutু গোষ্ঠীগুলির মোকাবিলা করার জন্য পূর্ব কঙ্গোতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে এবং এখান থেকেই কঙ্গো-রুয়ান্ডা উত্তেজনার শুরু হয়।
- প্রথম কঙ্গো যুদ্ধ (১৯৯৬-১৯৯৭): রুয়ান্ডা ও উগান্ডা একসঙ্গে মিলে মুবুতু শাসনের বিরুদ্ধে লরেন্ট কাবিলাকে সমর্থন করে এবং তাকে ক্ষমতায় আনে। এই সংঘাত পূর্ব কঙ্গোর সম্পদ ও নিরাপত্তা নিয়ে শুরু হয়েছিল।
- দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ (১৯৯৮-২০০৩): একেই আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ বলা হয়। এতে রুয়ান্ডা, উগান্ডা, অ্যাঙ্গোলা, জিম্বাবয়ে, নামিবিয়া সহ নয়টি দেশের সেনা এবং অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী জড়িত ছিল। এই যুদ্ধে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থান ও ভূমিকা
২০০৩ সালের পর পূর্ব কঙ্গোতে অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। তাদের মধ্যে একটি প্রধান গোষ্ঠী হল এম২৩ (March 23 Movement), যাদেরকে রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট মনে করা হয়। ২০১২ সালে এম২৩ আবার সংঘাত শুরু করে এবং কঙ্গোর বড় শহর গোমা দখল করে নেয়। ২০২১ সালের পর থেকে এই গোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ পূর্ব কঙ্গোর বড় অংশ দখল করতে শুরু করেছে।
কঙ্গো সরকার ক্রমাগত রুয়ান্ডার উপর এম২৩ কে সমর্থন করার অভিযোগ করে আসছে, যদিও রুয়ান্ডা এই অভিযোগ অস্বীকার করে। অনেক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে রুয়ান্ডার সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন
কঙ্গোতে চলা এই সংঘাতের কারণে ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে পূর্ব কঙ্গো আজও বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। এম২৩ ছাড়াও এখানে ১০০টিরও বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে যারা খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, জাতিগত আধিপত্য এবং নিরাপত্তার নামে ক্রমাগত হিংসা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন যে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাবে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই যুদ্ধবিরতির সাফল্য নির্ভর করবে উভয় পক্ষ কতটা সততার সঙ্গে এটি পালন করে তার ওপর।