বাম জোটের পথ ছেড়ে নতুন ছক কংগ্রেসের

বাম জোটের পথ ছেড়ে নতুন ছক কংগ্রেসের

পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস এবার একক লড়াইয়ের পথে হাঁটছে। বামফ্রন্টের সঙ্গে পুরনো জোটকে অতীত করে ২৯৪ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি (এআইসিসি) রাজ্যস্তরে একাধিক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিন বড় কমিটি গঠন, সব শিবিরের নেতা যুক্ত

বুধবার এআইসিসি প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কার্যকরী কমিটি, নির্বাচন কমিটি এবং পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করে। তিনটি বড় কমিটিতেই শুভঙ্কর শিবির ও অধীর শিবির— দুই পক্ষের নেতাদের রাখা হয়েছে। এমনকি, যারা অধীর চৌধুরীর আমলে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রদেশ সভাপতির প্রভাব স্পষ্ট

নতুন কমিটিতে প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের প্রভাব স্পষ্ট। সন্তোষ পাঠক ও অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো শুভঙ্কর-ঘনিষ্ঠ নেতারা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। প্রয়াত প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্রের ছেলে রোহন মিত্রকেও সম্পাদক পদে নিয়ে আসা হয়েছে, যা তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থার বার্তা দিচ্ছে।

গোলাম আহমেদ মীরের হাতে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক দায়িত্ব

পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটি ও ইলেকশন কমিটির মাথায় রাখা হয়েছে রাজ্যের কংগ্রেস পর্যবেক্ষক গোলাম আহমেদ মীরকে। সচরাচর এই পদে প্রদেশ সভাপতি থাকেন, কিন্তু গোষ্ঠীকোন্দল এড়াতে এ বার ব্যতিক্রম করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকের হাতে এই দুই গুরুদায়িত্ব দেওয়া রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

জেলা সভাপতিতে শুভঙ্করের মতামতের প্রাধান্য

জেলা সভাপতি বাছাইতেও শুভঙ্করের মতামতের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে। বড় বড় সাংগঠনিক জেলাকে ভাগ করে ছোট জেলার কাঠামো তৈরি করার তাঁর প্রস্তাব অনেকটাই গৃহীত হয়েছে। তবে অধীর চৌধুরীর অনুরোধে মুর্শিদাবাদ জেলা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং সভাপতির পদে অধীর-ঘনিষ্ঠ মনোজ চক্রবর্তীকে বসানো হয়েছে।

উত্তর ও মধ্য কলকাতায় সভাপতির দায়িত্ব ঘনিষ্ঠদের হাতে

উত্তর কলকাতা ও মধ্য কলকাতা — দুটি সাংগঠনিক জেলাতেই সভাপতির দায়িত্ব শুভঙ্কর-ঘনিষ্ঠদের দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, রাজধানী কলকাতার রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে চাইছেন প্রদেশ সভাপতি।

নতুন সমীকরণের জল্পনা, কিন্তু নেতৃত্বের অস্বীকার

দিল্লিতে রাহুল গান্ধী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন ছড়ালেও রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব তা উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, কংগ্রেসের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ আলাদা এবং তৃণমূলের সঙ্গে কোনো প্রাক-নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নই নেই।

ছাব্বিশের ভোটে কংগ্রেসের বড় পরীক্ষা

প্রায় দুই দশক পর বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট ছাড়া একক শক্তি হিসেবে ভোটে নামছে কংগ্রেস। শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে দলীয় কাঠামো মজবুত করা ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণ করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই নতুন কৌশল কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

Leave a comment