রাশিয়া-আমেরিকার সংঘাতে উত্তাল বিশ্ববাজার, বাড়তে চলেছে তেলের দাম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফের কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ১০-১২ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সময়মতো যুদ্ধ না থামালে রাশিয়ার উপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে এবং যারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালাবে, তাদের পণ্য আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের মূল্য ফের বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।ভেঞ্চুরার হেড অফ কমোডিটিজ এনএস রামস্বামীর বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে অক্টোবর ডেলিভারির ব্রেন্ট ক্রুডের দাম রয়েছে $৭২.০৭। তবে চলতি বছরে তা বেড়ে ব্যারেল পিছু $৮০-৮২ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। রাজনৈতিক সঙ্কট যত ঘনীভূত হবে, ততই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে উত্তেজনা বাড়বে।
ট্রাম্পের পদক্ষেপে বিশ্ব তেলের সরবরাহচক্রে টানাপোড়েনের আশঙ্কা
রাশিয়ার উপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনার জেরে সেই সমস্ত দেশ সমস্যায় পড়বে যারা রুশ তেলের উপর নির্ভরশীল। একদিকে সস্তায় তেল কেনা, অন্যদিকে উচ্চ শুল্ক—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ফলে তেল আমদানির ক্ষেত্রেও একপ্রকার দ্বিধা তৈরি হচ্ছে।বর্তমানে সেপ্টেম্বর ডেলিভারির WTI ক্রুড ঘোরাফেরা করছে $৬৯.৬৫-তে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যমেয়াদে তা $৭৩ এবং বছরের শেষে $৭৬-৭৯ ডলারে পৌঁছাতে পারে। ফলে শুধু ব্রেন্ট নয়, মার্কিন তেলের দামেও বড়সড় বৃদ্ধি হতে চলেছে।
উৎপাদন কমলে তেল বাজারে সংকট, দীর্ঘমেয়াদে আরও চড়া হতে পারে দর
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের দর বাড়তে থাকলে উৎপাদক সংস্থাগুলি অতিরিক্ত উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে ২০২৬ সালেও বিশ্ববাজারে তেলের জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং দর আরও ওপরে উঠবে।তেল উৎপাদন বাড়ানো সহজ নয়, চ্যালেঞ্জ মার্কিন সংস্থাগুলির সামনেযদিও ট্রাম্প প্রশাসন তেলের দাম কমাতে চায়, তবে মার্কিন তেল সংস্থাগুলির পক্ষে তাৎক্ষণিক উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়। পরিকাঠামো, দক্ষ কর্মী ও নতুন বিনিয়োগ ছাড়া এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কঠিন।
বিশ্ব সরবরাহে ৫০ লক্ষ ব্যারেল সরবরাহ করে রাশিয়া, নিষেধাজ্ঞা মানেই মূল্যবৃদ্ধি
শক্তি বিশেষজ্ঞ নরেন্দ্র তানেজা জানিয়েছেন, প্রতিদিন বিশ্ব তেল সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রায় ৫০ লক্ষ ব্যারেল তেল পাঠায় রাশিয়া। এই সরবরাহ বন্ধ হলে দামের উল্লম্ফন অবশ্যম্ভাবী। তখন প্রতি ব্যারেলের দাম পৌঁছাতে পারে $১০০-১২০ পর্যন্ত।ভারতের তেল ঘাটতি হবে না, কিন্তু চাপ বাড়বে পরিশোধন সংস্থার উপরভারত ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে তেল আমদানি করে, ফলে সরাসরি ঘাটতি হবে না। তবে রুশ তেল না এলে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ভারতীয় পরিশোধন সংস্থাগুলির উপর পড়বে মারাত্মক আর্থিক চাপ, যার প্রভাব পড়তে পারে দেশীয় বাজারেও।
সৌদি ও ওপেক গোষ্ঠী চেষ্টা করলেও সঙ্কটের মেঘ কাটবে না তাড়াতাড়ি
যদিও সৌদি আরব ও ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত কিছু দেশ উৎপাদন বাড়াতে পারে, তবে তার প্রভাব বাজারে পড়তে সময় লাগবে। ফলে স্বল্পমেয়াদে দাম বাড়া অবশ্যম্ভাবী। উৎপাদন না বাড়ালে সাপ্লাই-চেইনে ব্যাঘাত ঘটবে।ইউএস-ইইউ চুক্তিও রক্ষা করতে পারবে না বাজার, নজর থাকবে ফেডারেলের সিদ্ধান্তেবিশ্ব তেল বাজার এখন আমেরিকার মজুত এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। যদিও ইউএস-ইইউ বাণিজ্য চুক্তি সাময়িক স্থিতি দিতে পারে, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা না কমলে তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।