এনডিএ-তে অন্তর্ভুক্ত লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র প্রধান এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫-এ এক বড় ঘোষণা করলেন। তিনি বলেন যে, যখন তিনি বিহারে নির্বাচনের কথা বলেন, তখন অনেকের সমস্যা হয় এবং তারা জানতে চান তিনি কতগুলি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বিহার নির্বাচন ২০২৫: বিহারের রাজনীতিতে আবারও উত্তাপ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-র জাতীয় সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান রবিবার বিহার বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন। ছপারার রাজেন্দ্র স্টেডিয়ামে 'নব সংকল্প মহসভা'-কে সম্বোধন করে চিরাগ পাসোয়ান স্পষ্টভাবে বলেন যে, তিনি বিহারের সমস্ত ২৪৩টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দেবেন।
চিরাগ মঞ্চ থেকে বলেন, "যখন আমি বিহারে আসার কথা বলি, তখন অনেকেরই সমস্যা হয়। তারা জানতে চায় আমি কতগুলি আসনে নির্বাচন লড়ব, তাই আজ ঘোষণা করছি- বিহারের প্রতিটি আসনে চিরাগ পাসোয়ান দাঁড়াবে।" এই ঘোষণার মাধ্যমে চিরাগ শুধু তাঁর কৌশল স্পষ্ট করেননি, দলের কর্মীদের মধ্যেও জোরালো উদ্দীপনা জুগিয়েছেন।
এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক বজায়, কিন্তু আলাদা পরিচিতি কায়েম
চিরাগ পাসোয়ান স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স)-এর অংশ থাকবেন। তিনি বলেন, এনডিএ-র সঙ্গে থেকেও লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) তাদের নিজস্ব চিন্তা এবং 'বিহার ফার্স্ট, বিহারি ফার্স্ট'-এর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাবে। চিরাগ বলেন, "আমাকে থামানোর অনেক চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু আমি ভয় পাওয়ার পাত্র নই। বিহারের মানুষ আমার পরিবার, এবং আমি আমার ভাই ও বোনেদের জন্য সব সংগ্রাম করব।"
সংরক্ষণ নিয়ে চলা গুজবগুলিরও চিরাগ পাসোয়ান কড়া জবাব দেন। তিনি মঞ্চ থেকে স্পষ্টভাবে বলেন যে, যতদিন তিনি জীবিত আছেন, কেউ সংরক্ষণ (সংরক্ষণ) শেষ করতে পারবে না। চিরাগ বলেন, "রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে আজ আপনাদের বলছে, সংরক্ষণ কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আমি আমার জীবন বাজি রাখব, কিন্তু দলিত-পশ্চাৎপদদের অধিকার শেষ হতে দেব না।" এই বিবৃতিটি সেই সমস্ত বিরোধীদের জন্যও একটি বার্তা, যারা এনডিএ-এর সংরক্ষণ বাতিলের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন।
বিরোধী দলের ওপর জোরালো আক্রমণ
চিরাগ পাসোয়ান বিহারের বিরোধী দলগুলিকেও নিশানা করেন। তিনি বলেন, "যারা আজ বিহারে উন্নয়নের কথা বলছেন, তারাই নব্বইয়ের দশকে বিহারকে ধ্বংস করার জন্য দায়ী ছিলেন।" চিরাগ বলেন, "নব্বইয়ের দশকের সরকারগুলি বিহারকে জঙ্গলের রাজত্বে ঠেলে দিয়েছিল। এখন তারাই মুখ বদলে উন্নয়নের কথা বলছেন, কিন্তু বিহারের মানুষ সব জানে।" তিনি আরও বলেন যে, বিহারের এমন একটি সরকার দরকার, যা মানুষকে বাইরে যেতে না দিয়ে এখানেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে, যাতে মানুষকে ভিন রাজ্যে গিয়ে মজুরি করতে না হয়।
'বিহার ফার্স্ট, বিহারি ফার্স্ট'-এর সংকল্প পুনর্ব্যক্ত
চিরাগ আবারও তাঁর 'বিহার ফার্স্ট, বিহারি ফার্স্ট' অভিযানটি জনগণের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, এটি শুধু একটি শ্লোগান নয়, বরং তাঁর জীবনের লক্ষ্য। চিরাগ বলেন, "আমি বিহারে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যেখানে যুবকদের পড়াশোনা করার পর চাকরির জন্য বাইরে ঘুরতে না হয়। প্রতিটি জেলায় উন্নয়ন পৌঁছানোই আমার অগ্রাধিকার হবে।"
ছপারার ঐতিহাসিক ভূমি থেকে চিরাগ যে রাজনৈতিক হুঙ্কার দিয়েছেন, তার প্রভাব পুরো বিহারে অনুভূত হচ্ছে। চিরাগ বলেন যে, বিহারে তাঁর বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তাতে তিনি ভীত নন। তিনি তাঁর দলের কর্মীদের প্রতি আবেদন করেন যে, তাঁরা যেন প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত থাকেন।
চিরাগ পাসোয়ানের এই ঘোষণার পর বিহারে রাজনৈতিক সমীকরণের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। এনডিএ-তে থেকে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে, তবে চিরাগের মনোভাব দেখাচ্ছে যে, তিনি তাঁর দলকে শক্তিশালী করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছেন।