প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'বিকশিত ভারত ২০৪৭'-এর সংকল্পকে বাস্তবে রূপ দিতে শিক্ষা ক্ষেত্রের ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। গুজরাটের কেওয়াড়িয়ায় বৃহস্পতিবার আয়োজিত উপাচার্যদের দু'দিনের চিন্তন শিবিরে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যদি ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হয়, তাহলে তার ভিত্তি মজবুত ও মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার উপরই তৈরি করতে হবে। তিনি শিক্ষা জগৎকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এখন আমাদের পশ্চিমা মডেলের সংজ্ঞা থেকে সরে এসে, নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মূল্যের ভিত্তিতে একটি নতুন ভারতীয় উন্নয়ন মডেল তৈরি করতে হবে।
ভারতীয়তার উপর ভিত্তি করে উন্নত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা তৈরির সময়
শিক্ষামন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ভারত একটি সংস্কৃতি-সমৃদ্ধ দেশ, যেখানে সকল শ্রেণীর জন্য কর্তব্যের একটি সুস্পষ্ট ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি বলেন, এমন গভীরতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকতা বিশ্বের অন্য কোনো সভ্যতায় দেখা যায় না। এই কারণে, আমাদের এখন উন্নত রাষ্ট্রের সেই সংজ্ঞা গ্রহণ করা উচিত নয়, যা পশ্চিমা বিশ্বে প্রচলিত, বরং আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয় অনুযায়ী একটি নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন যে, এই নতুন ধারণা তখনই সফল হবে যখন শিক্ষা জগৎ এর নেতৃত্ব দেবে।
গুরুপূর্ণিমায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার্তা
গুরুপূর্ণিমার দিনে আয়োজিত এই চিন্তন শিবিরে ধর্মেন্দ্র প্রধান দেশজুড়ে আগত উপাচার্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই শিবির শুধু উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার মঞ্চ নয়, বরং এমন একটি সাধারণ সুযোগ যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। তিনি এটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শক্তিশালী করতে এবং ভারতীয় মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা মডেল তৈরির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি উপাচার্যদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, বরং নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতি গঠনেও সহায়তা করেন।
নয়া শিক্ষানীতি পরিবর্তনের শক্তিশালী ভিত্তি
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশের উচ্চশিক্ষা কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। তিনি এটিকে উপাচার্য ও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টার ফল হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এই পরিবর্তনকে স্থায়ী ও কার্যকরী করতে শিক্ষা ক্ষেত্রে গভীর সংস্কারের ধারাবাহিক প্রয়োজন। তিনি জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP)-কে উচ্চশিক্ষার পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক ও প্রজন্মের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ধর্মেন্দ্র প্রধান স্পষ্ট করেন যে, NEP শুধু একটি নথি নয়, বরং ভারতীয় উচ্চশিক্ষাকে বিশ্ব পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক এবং ভারতীয়তার সঙ্গে যুক্ত করার একটি রোডম্যাপ। তিনি আরও বলেন, এই নীতিকে বাস্তবে রূপ দিতে একটি সুনির্দিষ্ট ও ব্যবহারিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
উপাচার্যদের প্রতি বিশেষ আবেদন
শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের প্রতি বিশেষ আবেদন জানিয়ে বলেন, ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নিজ স্তরে NEP-এর উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট বাস্তবায়ন মডেল তৈরি করতে হবে, যা ছাত্র-কেন্দ্রিক হবে এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, এখন সময় এসেছে যখন আমরা কেবল কর্মজীবনই নয়, বরং সভ্যতা ও ঐতিহ্যকেও রূপ দেব। শিক্ষার মাধ্যমে এমন একটি ভারত তৈরি করব যা তার মূল্যবোধে গঠিত এবং বিশ্বে তার নিজস্ব অনন্য মডেলের জন্য পরিচিত হবে।