নির্বাচন কমিশনের বড় ঘোষণা: সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) প্রক্রিয়া শুরু

নির্বাচন কমিশনের বড় ঘোষণা: সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (SIR) প্রক্রিয়া শুরু
সর্বশেষ আপডেট: 2 ঘণ্টা আগে

নির্বাচন কমিশন আজ অর্থাৎ সোমবার সন্ধ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন করতে চলেছে, যেখানে সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (Special Intensive Revision - SIR) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।

নয়াদিল্লি: ভারতের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India) আজ অর্থাৎ সোমবার একটি বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। কমিশন আজ সন্ধ্যায় সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (Special Intensive Revision – SIR) ঘোষণা করতে পারে। এই উদ্যোগের আওতায় ভোটার তালিকার উন্নতি, নতুন ভোটারদের নাম যোগ করা এবং পুরনো ত্রুটিগুলি দূর করা অন্তর্ভুক্ত।

সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানের প্রথম পর্যায় 10 থেকে 15টি রাজ্যে চালানো হবে, যার মধ্যে প্রধানত সেই রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে যেখানে 2026 সালে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, আসাম এবং পুদুচেরি-এর মতো রাজ্যগুলি থাকতে পারে।

কী এই SIR (Special Intensive Revision)?

এসআইআর অর্থাৎ Special Intensive Revision নির্বাচন কমিশনের সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভোটার তালিকা (Electoral Roll) সম্পূর্ণরূপে পর্যালোচনা করা হয়। এর উদ্দেশ্য হল নিশ্চিত করা যে তালিকায় কোনও প্রকার ত্রুটি, নকল নাম বা পুরনো ভোটারদের রেকর্ডে কোনও গোলমাল না থাকে। এই প্রক্রিয়ায় তিনটি প্রধান পর্যায় রয়েছে:

  • নতুন ভোটারদের সংযুক্তি – যে নাগরিকরা 18 বছর বয়স পূর্ণ করেছেন, তাঁদের ভোটার তালিকায় যোগ করা হবে।
  • পুরনো এবং ভুল তথ্যের সংশোধন – মৃত ভোটার বা স্থানান্তরিত নাগরিকদের নাম বাদ দেওয়া হবে।
  • ত্রুটি দূরীকরণ এবং যাচাই – তালিকার সঠিকতা নিশ্চিত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই এবং ডিজিটাল পরীক্ষা করা হবে।

নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে যে এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী হবে।

প্রথম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হবে 10 থেকে 15টি রাজ্য

কর্মকর্তাদের মতে, প্রথম পর্যায়ে 10 থেকে 15টি রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর মধ্যে সেই রাজ্যগুলি অগ্রাধিকার পাবে যেখানে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত রয়েছে। এই তালিকায় সম্ভাব্যভাবে তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, আসাম, পুদুচেরি, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই রাজ্যগুলিতে ভোটার তালিকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই, ফর্ম 6 (নতুন নাম যোগ করার জন্য) এবং ফর্ম 7 (নাম বাদ দেওয়ার জন্য) প্রক্রিয়া ডিজিটাল ও অফলাইন উভয় মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে।

ভারতের মতো বিশাল গণতন্ত্রে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা এবং স্বচ্ছতা নির্বাচনের নির্ভরযোগ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ আগামী বছরগুলিতে দেশে বেশ কয়েকটি বড় নির্বাচন — 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং 2029 সালের লোকসভা নির্বাচন — অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এসআইআর-এর মাধ্যমে কমিশন এটি নিশ্চিত করতে চায় যে প্রতিটি যোগ্য নাগরিক ভোটাধিকার পান এবং কোনও প্রকার প্রযুক্তিগত বা প্রশাসনিক ত্রুটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে এসআইআর চলাকালীন গ্রামীণ এবং দূরবর্তী অঞ্চলে বিশেষ দল মোতায়েন করা হবে। এই দলগুলির কাজ হবে —

  • প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের তথ্য যাচাই করা।
  • নতুন ভোটারদের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করানো।
  • ভোটার আইডি (Voter ID) কার্ডের ত্রুটিগুলি সংশোধন করা।

এর জন্য কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন Voter Helpline App এবং nvsp.in ওয়েবসাইট ব্যবহার করবে যাতে লোকেরা ঘরে বসেই তাদের নামের অবস্থা পরীক্ষা করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করাতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ উদ্যোগ – স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার সম্ভাব্য সংশোধনের সময় কমিশন একটি নতুন উদ্যোগ নিতে চলেছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, বুথ-লেভেল অফিসারদের (BLOs) সহায়তার জন্য কমিশন স্বেচ্ছাসেবক (Volunteers) নিয়োগের কথা ভাবছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক এবং ক্লার্কদের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া হবে এবং তাদের এমন সব পোলিং স্টেশনে মোতায়েন করা হবে যেখানে 1200-এর বেশি ভোটার রয়েছেন। তাদের প্রধান কাজ হবে —

  • ভোটারদের ফর্ম পূরণে সহায়তা করা।
  • প্রয়োজনীয় নথি যাচাইয়ে সাহায্য করা।
  • বিএলও-র অনুপস্থিতিতে বিকল্প সহযোগী হিসাবে কাজ করা।

রাজ্যে বর্তমানে প্রায় 80,000 পোলিং বুথ রয়েছে, যা বাড়িয়ে 94,000 পর্যন্ত করা হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় 14,000 নতুন বুথ যোগ করা যেতে পারে। এর জন্য জেলা স্তরে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের (BDOs) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা 29 অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা, যোগাযোগ নম্বর সহ, নির্বাচন কমিশনকে পাঠান।

Leave a comment