দ‍্যিা দেশমুখ: ফিডে মহিলা দাবা বিশ্বকাপে ইতিহাস সৃষ্টি!

দ‍্যিা দেশমুখ: ফিডে মহিলা দাবা বিশ্বকাপে ইতিহাস সৃষ্টি!

মহিলা দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে দ‍্যিা দেশমুখ চমৎকার প্রদশর্ন করে গ্র্যান্ডমাস্টার এবং স্বদেশী কোনেরু হাম্পিকে পরাজিত করে খেতাব জিতেছেন। এই ঐতিহাসিক জয়ের সাথে সাথে দ‍্যিা ফিডে মহিলা দাবা বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম ভারতীয় মহিলা হয়েছেন। 

দাবা: ভারতীয় দাবাকে বিশ্ব মঞ্চে গৌরব এনে দিয়ে দ‍্যিা দেশমুখ ফিডে মহিলা দাবা বিশ্বকাপ ২০২৫-এর খেতাব জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ১৯ বছর বয়সী দ‍্যিা, যিনি ফাইনালে গ্র্যান্ডমাস্টার কোনেরু হাম্পিকে টাইব্রেকার ম্যাচে পরাজিত করেছেন, এই মর্যাদাপূর্ণ খেতাব জয়ী প্রথম ভারতীয় মহিলা দাবা খেলোয়াড়।

এই ঐতিহাসিক জয়ের সাথে সাথে দ‍্যিা দেশমুখ ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’-এর খেতাবও অর্জন করেছেন। নাগপুরের এই তরুণ খেলোয়াড় এখন মহিলা ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট ২০২৬-এর জন্যও যোগ্যতা অর্জন করেছেন।

ফাইনাল ম্যাচের রোমাঞ্চকর কাহিনী

ফিডে মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫-এর ফাইনাল ম্যাচটি দুই ভারতীয় খেলোয়াড় — দ‍্যিা দেশমুখ এবং কোনেরু হাম্পির মধ্যে খেলা হয়েছিল। প্রারম্ভিক দুটি ক্লাসিক্যাল গেম ড্র হওয়ায় ম্যাচটি টাইব্রেকারে চলে যায়। দ‍্যিা টাইব্রেকারের প্রথম র‍্যাপিড গেমে হাম্পিকে সম্পূর্ণরূপে চাপে রেখেছিলেন এবং ম্যাচটি ড্র হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় টাইব্রেকার র‍্যাপিড গেমে তিনি কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলার সময় হাম্পির বিরুদ্ধে চমৎকার আক্রমণাত্মক চাল দেন এবং জয়লাভ করেন। এই জয় তাঁকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে তুলেছে।

টাইব্রেকারের ফর্ম্যাট কী ছিল?

 

  • প্রথমত ১৫-১৫ মিনিটের দুটি র‍্যাপিড গেম খেলা হয়, প্রতিটি চালে ১০ সেকেন্ড করে সময় বাড়ানো হয়।
  • যদি স্কোর সমান থাকে, তাহলে খেলোয়াড়রা ১০-১০ মিনিটের আরও দুটি গেম খেলেন।
  • তারপরও ফয়সালা না হলে ৫-৫ মিনিটের দুটি ব্লিটজ গেম হয়, চালের পরে ৩ সেকেন্ড করে সময় বাড়ানো হয়।
  • শেষে ‘আর্মাগেডন’ গেম হয় — একজন খেলোয়াড়ের কাছে ৪ মিনিট, অন্যজনের কাছে ৫ মিনিট থাকে, যেখানে ড্র হলে কালো ঘুঁটির খেলোয়াড়কে বিজয়ী হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • যদিও দ‍্যিা দ্বিতীয় র‍্যাপিড টাইব্রেকারেই জয়লাভ করে নির্ণায়ক ফলাফল দেন।

দ‍্যিা দেশমুখের গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সফর

এই জয় শুধুমাত্র একটি খেতাব নয়, বরং দ‍্যিা দেশমুখের জন্য গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক মাস্টার থাকা দ‍্যিা বিশ্বকাপের পুরো সফরে নিজের থেকে উচ্চ র‍্যাঙ্কিংয়ের অনেক খেলোয়াড়কে হারিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের মহিলা দাবা খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

অভিজ্ঞ গ্র্যান্ডমাস্টার কোনেরু হাম্পি, যিনি বহু বছর ধরে ভারতীয় দাবা খেলার পরিচিত মুখ, ফাইনালে তাঁর অভিজ্ঞতার পুরো সুবিধা নিতে পারেননি। প্রথম দিকের গেমগুলিতে তাঁর খেলা সুষম ছিল, কিন্তু নির্ণায়ক টাইব্রেকারে তিনি দ‍্যিার দ্রুত কৌশল এবং নিখুঁত হিসাবের সাথে মোকাবিলা করতে পারেননি। হাম্পির কাছে একটি ছোট সুযোগ ছিল, কিন্তু কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলা দ‍্যিা তাঁকে কোনো সুযোগ দেননি।

খিতাবি জয়ের পর আবেগপ্রবণ দ‍্যিা

জয়ের পর মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় দ‍্যিা বলেন, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। আমি ছোটবেলা থেকে যে স্বপ্ন দেখেছি, আজ তা পূরণ হয়েছে। এই জয় শুধু আমার নয়, পুরো ভারতের। তাঁর চোখে জল ছিল, কিন্তু তা ছিল গর্ব ও আনন্দের অশ্রু। তিনি তাঁর কোচিং টিম, বাবা-মা এবং ভারতীয় দাবা ফেডারেশনকেও এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন।

  • বয়স: ১৯ বছর
  • শহর: নাগপুর, মহারাষ্ট্র
  • ফিডে রেটিং: ২৪৪৫+ (আপডেটেড)
  • পদ: আন্তর্জাতিক মাস্টার (এখন গ্র্যান্ডমাস্টার)
  • প্রথম ভারতীয় মহিলা ফিডে বিশ্বকাপ বিজয়ী
  • ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট ২০২৬-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন

Leave a comment