দীপাবলি ২০২৫: কবে, কখন, কীভাবে? জেনে নিন তারিখ, শুভ মুহূর্ত ও সম্পূর্ণ উৎসবের বিবরণ

দীপাবলি ২০২৫: কবে, কখন, কীভাবে? জেনে নিন তারিখ, শুভ মুহূর্ত ও সম্পূর্ণ উৎসবের বিবরণ
সর্বশেষ আপডেট: 4 ঘণ্টা আগে

এই বছর ২০ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার দীপাবলি উদযাপিত হবে। মূল দীপাবলিতে মা লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশের পূজা করা হয়। পূজা মুহূর্ত এবং চৌঘড়িয়া কাল অনুসারে প্রদীপ জ্বালানো শুভ বলে মনে করা হয়। দীপাবলির উৎসব বেশ কয়েক দিন ধরে চলে এবং এটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

 Diwali 2025: যেমনই ২ অক্টোবর ২০২৫-এর দশেরা উৎসব উদযাপিত হবে, মানুষের মধ্যে দীপাবলির তারিখ এবং শুভ মুহূর্ত নিয়ে কৌতূহল বেড়ে গেছে। এই বছর দীপাবলি ২০ অক্টোবর, সোমবার পালিত হবে। এই দিনে প্রধানত মা লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশের পূজা করা হয়। দীপাবলি উৎসব ধনতেরাস থেকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত বেশ কয়েক দিন ধরে উদযাপিত হয়। এর পাশাপাশি, লোকেরা ঘর পরিষ্কার, সাজসজ্জা, প্রদীপ জ্বালানো এবং পারিবারিক মিলন-মেলার মাধ্যমে এটিকে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে উদযাপন করে।

দীপাবলির গুরুত্ব এবং উৎসবের শুরু

দীপাবলি কেবল একদিনের উৎসব নয়, বরং এটি বেশ কয়েক দিন ধরে উদযাপিত হয়। এই উৎসব ধনতেরাস থেকে শুরু হয়ে ভাইফোঁটা পর্যন্ত চলে।

  • ধনতেরাস: এটি দীপাবলির প্রথম দিন, যেখানে ধনদেবী ধন্বন্তরি এবং ধাতুর পূজা করা হয়। লোকেরা এই দিনে সোনা, রূপা এবং নতুন বাসন কিনে শুভ বলে মনে করে।
  • নরক চতুর্দশী: দ্বিতীয় দিনটিকে নরক চতুর্দশী বা ছোট দীপাবলি বলা হয়। এই দিনে ভগবান কৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন এবং এই উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়।
  • দীপাবলি (মূল দীপাবলি): তৃতীয় দিনে, অমাবস্যা তিথিতে মূল দীপাবলি উদযাপিত হয়। এই দিনে মা লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশের পূজা হয় এবং ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো হয়।
  • গোবর্ধন পূজা এবং অনন্ত চতুর্দশী: দীপাবলির পরের দিন গোবর্ধন পূজা হয়। এই দিনে লোকেরা গোবর্ধন পর্বতের পূজা করে।
  • ভাইফোঁটা: দীপাবলির শেষ দিন ভাইফোঁটা উদযাপিত হয়, যেখানে ভাই ও বোনের সম্পর্কের মাধুর্য এবং সুরক্ষার বার্তা থাকে।

দীপাবলির উৎসব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব কেবল ঘরে ঘরে আলো ও সমৃদ্ধি আনে না, বরং সমাজে মিলন, ভ্রাতৃত্ব এবং পারিবারিক সম্পর্ককেও মজবুত করে।

দীপাবলি ২০২৫-এর শুভ মুহূর্ত

এই বছর ২০ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার দীপাবলি উদযাপিত হবে। এই দিনে মা লক্ষ্মীর পূজার শুভ মুহূর্ত সন্ধ্যা ০৭:০৮ থেকে ০৮:১৮ পর্যন্ত থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল এবং মুহূর্তগুলি নিম্নরূপ:

  • প্রদোষ কাল: বিকাল ০৫:৪৬ থেকে রাত ০৮:১৮
  • বৃষভ কাল: সন্ধ্যা ০৭:০৮ থেকে রাত ০৯:০৩
  • অমাবস্যা তিথি শুরু: ২০ অক্টোবর, ২০২৫, বিকাল ০৩:৪৪
  • অমাবস্যা তিথি শেষ: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, সন্ধ্যা ০৫:৫৪

নিশিতা কাল মুহূর্ত

  • লক্ষ্মী পূজা মুহূর্ত: রাত ১১:৪১ থেকে রাত ১২:৩১ (২১ অক্টোবর)
  • নিশিতা কাল: রাত ১১:৪১ থেকে রাত ১২:৩১ (২১ অক্টোবর)
  • সিংহ লগ্ন: রাত ০১:৩৮ থেকে রাত ০৩:৫৬ (২১ অক্টোবর)

দীপাবলির চৌঘড়িয়া মুহূর্ত

  • অপরাহ্ন মুহূর্ত (চর, লাভ, অমৃত): বিকাল ০৩:৪৪ থেকে সন্ধ্যা ০৫:৪৬
  • সায়াহ্ন মুহূর্ত (চর): সন্ধ্যা ০৫:৪৬ থেকে রাত ০৭:২১
  • রাত্রি মুহূর্ত (লাভ): রাত ১০:৩১ থেকে রাত ১২:০৬ (২১ অক্টোবর)
  • ঊষাকাল মুহূর্ত (শুভ, অমৃত, চর): রাত ০১:৪১ থেকে সকাল ০৬:২৬ (২১ অক্টোবর)

এই মুহূর্তগুলি অনুসারে পূজা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা শুভ বলে মনে করা হয়।

দীপাবলির পূজা ও ঐতিহ্য

মূল দীপাবলির দিনে ঘরে বিশেষ পূজা করা হয়। এই দিনে মা লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশকে স্থাপন করে মন্ত্র জপ করা হয়। ঘর এবং অফিসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা করা এই দিনের ঐতিহ্যের অংশ। লোকেরা রঙোলি তৈরি করে, প্রদীপ জ্বালায় এবং মিষ্টি তৈরি করে।

দীপাবলিতে প্রতিটি ঘরে প্রদীপের আলোয় একটি বিশেষ পরিবেশ তৈরি হয়। এছাড়াও, উৎসবের সময় বাজি পোড়ানোর ঐতিহ্যও রয়েছে, যা আনন্দ ও উৎসবের প্রতীক। শিশুদের জন্য এই উৎসব অত্যন্ত আনন্দদায়ক হয় এবং এটি পরিবারের সকল সদস্যকে একত্রিত করার সুযোগও দেয়।

দীপাবলি এবং অন্যান্য উৎসব

দীপাবলি কেবল একদিনের উৎসব নয়, বরং এটি ধনতেরাস, নরক চতুর্দশী, লক্ষ্মী পূজা, গোবর্ধন পূজা এবং ভাইফোঁটার মতো বেশ কয়েক দিন ধরে উদযাপিত হয়। কিছু অঞ্চলে দীপাবলিতে মা কালীর পূজাও করা হয়। এইভাবে, দীপাবলি কেবল ধর্মীয় দিক থেকে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

ধনতেরাস এবং দীপাবলির সময় কেনাকাটা করার ঐতিহ্যও রয়েছে। লোকেরা এই সময় নতুন বাসনপত্র, সোনা-রূপা, কাপড় এবং ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র কেনে। এটি কেবল শুভ বলে মনে করা হয় না বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক বলে বিবেচিত হয়।

দীপাবলি এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

দীপাবলির উৎসব আধ্যাত্মিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি মন্দের ওপর ভালোর জয় এবং অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়ের প্রতীক। প্রদীপ জ্বালানো, ঘর পরিষ্কার করা এবং লক্ষ্মী পূজা করা আধ্যাত্মিক শুদ্ধি ও ইতিবাচক শক্তির জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।

এছাড়াও, দীপাবলির উৎসব পরিবার এবং সমাজে মিলন, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সামাজিক সম্প্রীতিকে উৎসাহিত করে। এই উৎসব শিশু ও যুবকদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষা দেওয়ার একটি সুযোগও বটে।

Leave a comment