DRDO-র তৈরি নতুন এয়ার লঞ্চ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র: ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি বৃদ্ধি

DRDO-র তৈরি নতুন এয়ার লঞ্চ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র: ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি বৃদ্ধি

ভারতীয় বায়ুসেনার ক্ষমতা শীঘ্রই আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে, কারণ প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এয়ার লঞ্চ সাবসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (ALSCM)-এর নতুন সংস্করণ তৈরির কাজ করছে।

ভারতীয় বায়ুসেনার ক্ষমতা শীঘ্রই আরও এক ধাপ উপরে উঠতে চলেছে। দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা অর্থাৎ DRDO একটি নতুন এয়ার লঞ্চ সাবসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (ALSCM) তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের কৌশলগত শক্তি আরও শক্তিশালী করতে পারে। বিশেষ বিষয় হল, এই ক্ষেপণাস্ত্র হালকা, সাশ্রয়ী এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হবে, যা ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে উৎক্ষেপণ করা যাবে।

৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম হবে

DRDO এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে এমনভাবে তৈরি করছে যা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্য করতে পারবে। এর মধ্যে এয়ারবেস, রাডার স্টেশন, কমান্ড পোস্ট, অস্ত্র ডিপো, সরবরাহ ঘাঁটি এবং লজিস্টিক হাবের মতো লক্ষ্যবস্তু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই রেঞ্জ এতটাই যে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশ না করেই হামলা চালাতে পারবে।

মাণিক ইঞ্জিন থেকে মিলবে শক্তিশালী শক্তি

এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটিতে DRDO-এর নিজস্ব তৈরি 'মাণিক' টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। এই ইঞ্জিনটি ইতিমধ্যেই অনেক পরীক্ষায় নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে এবং ITCM প্রকল্পের অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিনের বিশেষত্ব হল এটি সাবসনিক গতিতে স্থিতিশীলতা এবং কম উচ্চতায় উড়তে পারার ক্ষমতা দেয়, যা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে শত্রুর রাডারের চোখে ধরা পড়া থেকে বাঁচাতে পারে।

বিমান থেকে উৎক্ষেপণের কৌশল

নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি ভূমি থেকে নয়, বরং আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা হবে। অর্থাৎ, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান যেমন Su-30MKI, MiG-29, তেজস, রাফায়েল এবং ভবিষ্যতের AMCA থেকে উৎক্ষেপণ করা যাবে। এই পদ্ধতিটি খরচ-সাপেক্ষে অত্যন্ত কার্যকর হবে কারণ ক্ষেপণাস্ত্রটির অতিরিক্ত বুস্টারের প্রয়োজন হবে না। বিমানটি আগে থেকেই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে গতি এবং উচ্চতা দেবে, যা উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াটিকে সহজ ও নমনীয় করে তুলবে।

স্টিल्থ প্রযুক্তি এবং আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম

এই ক্ষেপণাস্ত্রটি আধুনিক ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম (INS) এবং স্যাটেলাইট ভিত্তিক গাইডিং সিস্টেমের সাথে সজ্জিত হবে। এর ফলে কেবল এর লক্ষ্য অত্যন্ত নির্ভুল হবে তাই নয়, এটি মিশনের সময় পথও নিজেই তৈরি করতে পারবে। এছাড়াও, এর এরোডাইনামিক ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যা কম উচ্চতায় উড়তে থাকা অবস্থায় শত্রুর রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে। অর্থাৎ, স্টিলথ প্রযুক্তির ব্যবহার এটিকে আরও বেশি প্রভাবশালী করে তুলবে।

ব্রহ্মোস-এনজি-র সঙ্গে তুলনা

যেখানে ব্রহ্মোস-এনজি সুপারসনিক বিভাগে আসে এবং দ্রুত গতিতে শত্রুর উপর আক্রমণ করে, সেখানে এই নতুন সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ধীর গতিতে (সাবসনিক) উড়বে, তবে এর পাল্লা এবং মোতায়েন করার ক্ষমতা বেশি হবে। ব্রহ্মোস-এনজি প্রায় Mach 3.5 গতিতে ওড়ে, যেখানে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটিকে হালকা এবং বেশি সংখ্যায় মোতায়েন করার উপযোগী করা হবে। কম খরচের কারণে এটি একবারে একাধিক ইউনিটে পরিচালনা করা যেতে পারে।

কম খরচে অধিক ক্ষমতা

এই প্রকল্পের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল এর কম খরচ। DRDO এটিকে এমনভাবে তৈরি করছে যাতে এটি ব্রহ্মোসের মতো উচ্চ-শ্রেণীর সিস্টেমের তুলনায় সস্তা হয় এবং বায়ুসেনার অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তাগুলি বৃহৎ আকারে পূরণ করতে পারে। সাবসনিক গতির কারণে এটি যে কোনও আধুনিক বিমান সুরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে কাজ করতে সক্ষম হবে। এর সস্তা হওয়া এবং বৃহৎ সংখ্যায় উৎপাদন সম্ভব হওয়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতির জন্য অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে।

২০২৫ সালে প্রথম পরীক্ষা হতে পারে

সূত্র মারফত জানা গেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রথম উড়ান পরীক্ষা ২০২৫ সালের শেষ দিকে হতে পারে। যেহেতু এর ডিজাইন এবং প্রযুক্তি আগে থেকেই চলমান ITCM প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, তাই এর উন্নয়নে বেশি সময় লাগবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। প্রাথমিক সফল পরীক্ষার পর এটি ২০২৭ সালের মধ্যে সীমিত অপারেশনাল ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

বায়ুসেনার জন্য নতুন শক্তি

এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় বায়ুসেনার কৌশলতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বর্তমানে ভারতের কাছে দূরপাল্লার এয়ার লঞ্চ ক্ষেপণাস্ত্র সীমিত পরিমাণে রয়েছে এবং সেগুলির দামও বেশি। এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র আসার ফলে বায়ুসেনা তার গভীর অঞ্চলে অভিযান চালানোর ক্ষমতা বাড়াতে পারবে। বিশেষ করে যখন শত্রুর অঞ্চলে প্রবেশ করা ঝুঁকিপূর্ণ, তখন এয়ার লঞ্চ সাবসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Leave a comment