মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর। বাবুবাজারের ঘোষাল বাড়িতে প্রায় সাড়ে তিন শতক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে দুর্গোৎসব। ইতিহাস, বিশ্বাস আর আচার মিলিয়ে এই পুজো আজ স্থানীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

শুরু হয়েছিল গয়ামুনি বৈষ্ণবীর হাতে
আনুমানিক ৩৫০ বছর আগে গয়ামুনি বৈষ্ণবী প্রথম সূচনা করেন এই দুর্গাপুজোর। প্রথমে এটি ‘গোঁসাই বাড়ির পুজো’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ‘ঘোষাল বাড়ির পুজো’ নামে খ্যাতি লাভ করে। পরিবারের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
প্রথা মেনে প্রতিমা গড়া থেকে মহালয়া পর্যন্ত
প্রতিবছর রথযাত্রার দিন দেবীর কাঠামোতে প্রলেপ দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। মহালয়ার দিন মন্দিরে দেবী প্রতিষ্ঠা হয়। সপ্তমীর সকালে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নবপত্রিকা নিয়ে যাওয়া হয় ভাগীরথী নদীতে। বৈদিক মতে স্নান করিয়ে আনার পর তা প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরে। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে।

সন্ধিপুজোর ভোগে খিচুড়ি থেকে পনির
ঘোষাল বাড়ির পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব সন্ধিপুজো। এই সময় দেবীকে নিবেদন করা হয় তিন রকম খিচুড়ি, পোলাও, পনির ও বক ফুলের বড়া। এই ভোগ স্থানীয়দের কাছেও বিশেষ আকর্ষণ।
দশমীতে অনন্য ইলিশ ভোগের প্রথা
দশমীর দিনে ঘোষাল বাড়িতে দেবীকে নিবেদন করা হয় ইলিশ মাছ। তবে এই ভোগ সরাসরি মন্দিরে তোলা হয় না, বরং আলাদাভাবে পরিবারের মধ্যে রাখা হয়। প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই রীতি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

প্রজাপতির মায়া ও বিশ্বাস
ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজোর সময় মন্দির চত্বরে অসংখ্য প্রজাপতির দেখা মেলে। পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, মা দুর্গার আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই আসে এই প্রজাপতিরা। বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়েও যায় তারা।
এক চালার প্রতিমা ও পিতলের অস্ত্র
ঘোষাল বাড়ির দুর্গা আজও এক চালার প্রতিমা। দেবীর হাতে পিতলের অস্ত্র ঝলমল করে। বনকাপাসি ঢাকের সাজসজ্জা পুজোর আবহকে আরও গম্ভীর ও ঐতিহ্যবাহী করে তোলে।

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো ৩৫০ বছর অতিক্রম করেছে। মহালয়া থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলে ঐতিহ্যবাহী এই পুজো। বিশেষ আকর্ষণ সন্ধিপুজোর ভোগ ও দশমীতে ইলিশ মাছ নিবেদন।













