ভগবান গণেশ শুধু প্রথম পূজ্য দেবতাই নন, তিনি হিন্দু ধর্মের প্রথম লিপিকার হিসেবেও মান্য। তিনি মহাভারত সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর দ্রুত এবং সুন্দর হাতের লেখার কারণে তাঁকে জ্ঞান ও বুদ্ধির দেবতা বলা হয়। গণেশ জীর আসল নাম বিনায়ক এবং তাঁর জন্ম ভাদ্রপদ মাসের শুক্ল চতুর্থীতে।
Lord Ganesha: ভগবান গণেশ, যাঁকে বিনায়কও বলা হয়, হিন্দু ধর্মে প্রথম পূজ্য দেবতা এবং বিদ্যা, বিবেক, ধর্ম ও বুদ্ধির দেবতা হিসেবে মান্য। তিনি মহাভারতের প্রথম লেখক ছিলেন, যা তিনি বেদ ব্যাসের তত্ত্বাবধানে তাঁর ভাঙা দাঁত দিয়ে লিখেছিলেন। গণেশ জী গণেশ পুরাণ, গণেশ চালিসা, গণেশ স্তোত্র এবং অন্যান্য অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন, এবং তাঁর দ্রুত ও সুন্দর হাতের লেখা তাঁকে বিশেষ করে তোলে।
গণেশ চতুর্থীর উৎসব
ভগবান গণেশের জন্ম ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মধ্যাহ্নে হয়েছিল। এই দিনটি গণেশ চতুর্থী হিসাবে পালিত হয়। সারা ভারতে গণেশ উৎসব ১০ দিন ধরে পালিত হয়। এই উপলক্ষে ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ ধ্বনিতে পরিবেশ আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। পৌরাণিক কাহিনীতে ভগবান গণেশের বিভিন্ন অবতারের কথাও বর্ণিত আছে।
মহাকাব্যগুলির রচয়িতা
ভগবান গণেশ অনেক পবিত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গণেশ পুরাণ, গণেশ চালিসা, গণেশ স্তুতি, শ্রী গণেশ সহস্রনামাবলী, সংকটনাশন গণেশ স্তোত্র, গণপতি অথর্বশীর্ষ, গণেশকবচ, সন্তান গণপতি স্তোত্র, ঋণহর্তা গণপতি স্তোত্র এবং ময়ূরেশ স্তোত্র। এই গ্রন্থগুলি ধর্ম, কর্ম, বিদ্যা এবং নৈতিকতার পথ প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মহাভারতের প্রথম লেখক ভগবান গণেশকেই মনে করা হয়। মহর্ষি বেদ ব্যাস মহাভারতের গল্প শুনিয়েছিলেন এবং গণেশ জী-কে এটি লেখার জন্য বলেছিলেন। কাহিনী অনুসারে, গণেশ জী একটি শর্ত রেখেছিলেন যে তিনি ততক্ষণ লেখা শুরু করবেন না যতক্ষণ না তিনি প্রতিটি শ্লোকের অর্থ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারেন। এছাড়াও, তিনি তাঁর ভাঙা দাঁত লেখার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
প্রথম লিপিকার এবং বিদ্যার দেবতা
গণেশ জী শুধু পূজ্য দেবতা নন, তাঁকে প্রথম লিপিকারও মানা হয়। তাঁর হাতের লেখা দ্রুত এবং সুন্দর ছিল। এই কারণে তাঁকে বিদ্যা, বিবেক, ধর্ম, কর্ম ও বিজয়ের দেবতা বলা হয়। গণেশ জীর রচনাগুলি আজও ধর্মীয় ও শিক্ষাগত জীবনে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
তাঁর বিদ্যা ও জ্ঞানের মহিমার উদাহরণ মহাভারত লেখার কাহিনীতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ভগবান গণেশ কেবল কাহিনী লেখেননি, বরং এর শর্তাবলী ও নিয়মাবলী বুঝে সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও বুদ্ধির সাথে কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন। এটি প্রমাণ করে যে জ্ঞান ও বুদ্ধি ছাড়া কোনও কাজ সম্পূর্ণ হতে পারে না।
গণেশ পূজা: প্রতিটি শুভ কাজের শুরু
ভগবান গণেশের পূজা প্রতিটি শুভ কাজের শুরুতে করা হয়। বিবাহ, গৃহ প্রবেশ, ব্যবসায়িক কাজ এবং নতুন প্রকল্পের শুরুতে তাঁর পূজা বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে গণেশ জীর পূজায় বাধা দূর হয় এবং কাজে সাফল্য আসে।
গণেশ জীর মূর্তি প্রতিটি ঘর এবং মন্দিরে প্রধান স্থানে রাখা হয়। তাঁর ছবি এবং মূর্তিগুলিতে তাঁর বৈশিষ্ট্য, যেমন হাতে অক্ষয় ফল, ত্রিশূল এবং মোদক, এর প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। মোদক তাঁর প্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত এবং এটি সাফল্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।