২০২৫ সালের মা দুর্গা বিসর্জনের দিন, বিজয়া দশমীর শুভক্ষণে মা দুর্গার প্রতিমা সজল চোখে বিসর্জন দেওয়া হবে। এটি নবরাত্রির নয় দিনের ভক্তি ও সাধনার সমাপ্তি। ডুলিতে প্রস্থান, সিঁদুর খেলা এবং কলস বিসর্জনের মতো ঐতিহ্যগুলি কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসকেই নয়, সামাজিক বন্ধন এবং নারীশক্তির উৎসবকেও তুলে ধরে।
মা দুর্গা বিসর্জন: এই বছর বিজয়া দশমী, ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার মা দুর্গার বিসর্জন করা হবে। শারদীয় নবরাত্রির নয় দিনের পূজা ও সাধনার পর মায়ের প্রতিমা ডুলিতে প্রস্থান করবে। বাংলা ও পূর্ব ভারতে সিঁদুর খেলার রীতির সাথে ভক্তরা মাকে বিদায় জানাবেন। বিসর্জনে অংশগ্রহণ করে ভক্তরা কেবল আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টিই লাভ করেন না, বরং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের অভিজ্ঞতাও পান।
নবরাত্রির নয় দিন এবং মা দুর্গার বিসর্জন
শারদীয় নবরাত্রি ২০২৫ সালের বিজয়া দশমী (দশেরা) দিনে শেষ হয়। নয় দিন ধরে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা-অর্চনা ও সাধনার পর দশমী তিথিতে মায়ের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসেরই সঙ্গে যুক্ত নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনেরও এক অভিব্যক্তি।
এই বছর বিজয়া দশমী ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার পড়ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, দেবী দুর্গার প্রস্থান ডুলি বা পালকিতে হবে, যা সুখ, শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক বলে বিবেচিত। নবরাত্রির সময় করা উপবাস, পূজা এবং ভক্তির এই বিদায় ভক্তদের জন্য অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
দুর্গা বিসর্জনের শুভ মুহূর্ত এবং গুরুত্ব
পঞ্জিকা অনুসারে, এই বছর মা দুর্গার বিসর্জন সকাল ৬:৩২টা থেকে ৮:৫৪টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১:২১টা থেকে ৩:৪৪টা পর্যন্ত করা শুভ বলে মনে করা হয়েছে। বিসর্জনের এই সময়কে শুভ মুহূর্ত বলে গণ্য করা হয় এবং এটি মনোযোগ সহকারে পালন করা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ফলপ্রসূ।
দেবী দুর্গার ডুলিতে প্রস্থান, বার এবং বাহন অনুসারে নির্ধারিত হয়। এই বছর বৃহস্পতিবার হওয়ায় মা দুর্গা নর বাহন ডুলিতে প্রস্থান করবেন, যা সুখ, শান্তি এবং সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিবেচিত। এই বিদায় ইঙ্গিত দেয় যে মা তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করে আগামী বছর আবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
সিঁদুর খেলা এবং নারী শক্তির উৎসব
পূর্ব ভারত এবং বিশেষ করে বাংলায় বিসর্জনের ঠিক আগে সিঁদুর খেলার রীতি পালন করা হয়। এতে বিবাহিত মহিলারা মা দুর্গার চরণে সিঁদুর অর্পণ করেন এবং একে অপরকে সিঁদুর লাগান। এই ঐতিহ্য কেবল বৈবাহিক সুখ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক নয়, এটি নারী শক্তি এবং সম্মিলিত ভক্তিরও এক অভিব্যক্তি।
সিঁদুর খেলার গুরুত্ব এই যে এটি মাতৃশক্তি এবং সম্মিলিত আনন্দকে তুলে ধরে। এই উপলক্ষে মানুষ ঢোল-নগাড়া এবং জয়ধ্বনির মাঝে তাদের বিশ্বাস ও আস্থাকে ভাগ করে নেয়।
প্রতিমা এবং কলস বিসর্জনের বিধি-বিধান
বিজয়া দশমীতে শেষ পূজা এবং বিসর্জনের জন্য মা দুর্গার প্রতিমার ষোড়শোপচার পূজা করা হয়। এই পূজায় রোলি (কুমকুম), অক্ষত (চাল), ফুল, মিষ্টি, বস্ত্র ইত্যাদি অর্পণ করা হয়। দেবীকে সিঁদুর অর্পণের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও সিঁদুর লাগানো হয়।
नमस्तेऽस्तु महादेवी महा मायि সুরेश्वরি। পূজারাধনকালে চ পুনরাগমনায় চ
এর অর্থ হল, হে মহাদেবী, মহামায়া, সুরেশ্বরী! আমরা আপনাকে প্রণাম জানাই এবং আপনার পুনরায় আগমনের প্রার্থনা করি।
বিসর্জন যাত্রার ক্রম
বিসর্জনের সময় ঢোল-নগাড়া এবং জয়ধ্বনির সাথে মা রানীর জয়ধ্বনি করতে করতে প্রতিমা তোলা হয়। এটিকে সসম্মানে কোনো পবিত্র নদী, পুকুর বা কৃত্রিম বিসর্জন কুণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিমা ধীরে ধীরে জলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
পূজার সময় দেবীকে অর্পণ করা সামগ্রীও প্রতিমার সাথে বিসর্জন দেওয়া হয়। কলসে রাখা নারকেল বের করে পরিবারের বিবাহিত মহিলাকে দেওয়া হয় অথবা প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। কলসের জল আমের পাতা দিয়ে সারা বাড়িতে ছিটানো শুভ বলে মনে করা হয়। অবশিষ্ট জল পবিত্র বৃক্ষ যেমন অশ্বত্থ গাছের নিচে ঢেলে দেওয়া উচিত।
কলসে রাখা মুদ্রা লাল কাপড়ে বেঁধে সিন্দুক বা ধন স্থানে রাখা হয়। এইভাবে, বিসর্জনের সমস্ত ধাপ কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে সম্পন্ন হয় না বরং ঘর ও পরিবারে ইতিবাচক শক্তি এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
কেন বিসর্জনের গুরুত্ব
মা দুর্গার বিসর্জন কেবল প্রতিমাকে জলে ভাসিয়ে দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়া দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির পূর্ণ প্রমাণ। একই সাথে এটি সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সম্মিলিত উৎসবকেও তুলে ধরে।
বিসর্জনের সময় অংশগ্রহণ করলে কেবল আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টিই পাওয়া যায় না, বরং এটি সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত হওয়ার এবং লোক ঐতিহ্য পালন করার একটি সুযোগও। এছাড়াও, এটি আগামী বছর নবরাত্রিতে মা দুর্গার পুনরায় আগমনের প্রতীক্ষা ও প্রস্তুতিরও প্রতীক।