শনি ও মঙ্গলের সমসপ্তক যোগ: কোন রাশির উপর কেমন প্রভাব ফেলবে?

শনি ও মঙ্গলের সমসপ্তক যোগ: কোন রাশির উপর কেমন প্রভাব ফেলবে?

২৮শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে গ্রহের অবস্থান একটি বিশেষ যোগ তৈরি করতে চলেছে। এই যোগটিকে বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ প্রায় ৩০ বছর পর শনি এবং মঙ্গল মুখোমুখি এসে সমসপ্তক যোগ তৈরি করবে। এই যোগ তখনই তৈরি হয় যখন দুটি গ্রহ একে অপরের থেকে ঠিক সপ্তম স্থানে অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি দূরত্বে থাকে। এইবার মঙ্গল কন্যা রাশিতে প্রবেশ করবে যেখানে শনি আগে থেকেই মীন রাশিতে স্থিত থাকবে। জ্যোতিষ বিশেষজ্ঞরা এটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল সময় বলে মনে করছেন।

সমসপ্তক যোগ কী

সমসপ্তক যোগকে সাধারণত চাপ, সংঘাত এবং ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত হিসাবে মনে করা হয়, বিশেষ করে যখন এতে শনি ও মঙ্গলের মতো দুটি বিপরীত স্বভাবের গ্রহ জড়িত থাকে। মঙ্গল যেখানে উগ্র, শক্তি ও যুদ্ধের প্রতীক, সেখানে শনি শৃঙ্খলা, বিলম্ব এবং ন্যায়বিচারের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন এই দুটি গ্রহ মুখোমুখি হয়, তখন ব্যক্তির জীবনে মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক স্তরে অস্থিরতা বাড়তে পারে।

মেষ রাশিকে বড় ধরনের চাপ সহ্য করতে হতে পারে

মেষ রাশির জাতকদের জন্য এই যোগ ভারী হতে পারে। আগে থেকেই এই রাশির উপর শনির সাড়েসাতির প্রভাব চলছে এবং এখন মঙ্গলের উপস্থিতিতে এই প্রভাব আরও বেশি তীব্র হতে পারে। মানসিক অস্থিরতা, শারীরিক ক্লান্তি এবং রাগের বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ এবং আর্থিক ক্ষতির ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। এই সময়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

মিথুন রাশির জাতকদের কর্মজীবনে বাধা

মিথুন রাশির জাতকদের জন্য সমসপ্তক যোগ কর্মজীবন এবং চাকরির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বিবাদ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতভেদ এবং দায়িত্বের চাপে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। যারা নতুন চাকরি বা পদোন্নতির আশা করছেন, তাদের এখন একটু অপেক্ষা করতে হতে পারে। এই সময়ে কাজের প্রতি অবহেলা ভারী হতে পারে।

কর্কট রাশিকে আর্থিক বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

কর্কট রাশির জন্য এই সময় কিছু কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষতির ঝুঁকি থাকবে। এই সময়ে কোনো বড় বিনিয়োগ বা ঋণ দেওয়ার আগে চিন্তা করা জরুরি। ব্যবসায়ীদের জন্য এই সময় কিছুটা মন্দা নিয়ে আসতে পারে। এছাড়াও স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

শনি ও মঙ্গলের মুখোমুখি হওয়া কেন অশুভ বলে মনে করা হয়

জ্যোতিষশাস্ত্রে শনি ও মঙ্গলকে দুটি বিপরীত প্রকৃতির গ্রহ হিসেবে মনে করা হয়। শনি ঠান্ডা, গম্ভীর এবং ধীর গতির গ্রহ, যা ন্যায়বিচার ও কর্মফলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যেখানে মঙ্গল গরম স্বভাবের, দ্রুত গতিতে কাজ করা এবং রাগের প্রতীক গ্রহ। যখন এই দুটি গ্রহ মুখোমুখি হয়, তখন ব্যক্তির চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। ফলে, তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর হতে পারে।

অন্যান্য রাশির উপরও হালকা প্রভাব পড়বে

যদিও সমসপ্তক যোগের সবচেয়ে গভীর প্রভাব মেষ, মিথুন এবং কর্কট রাশির উপর দেখা যাবে, তবে অন্যান্য রাশির উপরও এর আংশিক প্রভাব পড়তে পারে। তুলা, বৃশ্চিক এবং মীন রাশির জাতকদেরও মানসিক চাপ, পারিবারিক মতবিরোধ বা কাজে বাধা আসতে পারে। সিংহ এবং কুম্ভ রাশির জাতকদেরও তাদের স্বাস্থ্য এবং খরচ নিয়ে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হতে পারে।

যোগের প্রভাব ব্যক্তিগত কুণ্ডলীর উপরও নির্ভর করে

সমসপ্তক যোগের প্রভাব সম্পর্কে জ্যোতিষীদের আরও একটি ধারণা হল যে এর প্রভাব প্রতিটি ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলী ও গ্রহের অবস্থানের উপরও নির্ভর করে। যাদের কুণ্ডলীতে আগে থেকেই শনি বা মঙ্গল শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, তারা তুলনামূলকভাবে কম প্রভাব দেখতে পেতে পারেন। অন্যদিকে যাদের কুণ্ডলীতে এই গ্রহগুলি দুর্বল, তাদের জন্য এই যোগ চ্যালেঞ্জে ভরা থাকতে পারে।

গ্রহের চালচলন দিয়ে জীবনের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে গ্রহের অবস্থানের প্রভাব আমাদের জীবনের উপর পড়ে। যখনই কোনও গ্রহ রাশি পরিবর্তন করে বা কোনও বিশেষ স্থানে আসে, তখন তার প্রভাব বিভিন্ন রাশির উপর আলাদা আলাদা ভাবে পড়ে। শনি ও মঙ্গলের মতো প্রভাবশালী গ্রহের মিলন বা মুখোমুখি হওয়া জীবনে সংঘাত ও পরীক্ষার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

গ্রহ গোচরের সময় এবং স্থিতি

মঙ্গল ২৮শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে কন্যা রাশিতে প্রবেশ করবে। এই সময়ে শনি মীন রাশিতে আগে থেকেই বিদ্যমান থাকবে। এই পরিস্থিতিতে এই দুটি গ্রহ সপ্তম দৃষ্টি দিয়ে একে অপরকে দেখবে। এই মুখোমুখি অবস্থান সমসপ্তক যোগ তৈরি করে। এই যোগ কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্যকর থাকবে এবং তারপর গ্রহের এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাব কমবে।

Leave a comment