তিব্বতে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প: কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি

তিব্বতে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প: কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি

তিব্বতে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ১০ কিমি গভীরে। সম্প্রতি জানুয়ারি ও মে ২০২৫ সালেও ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

ভূমিকম্প: তিব্বতে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৩.৯। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। যদিও এবারের কম্পনের তীব্রতা কম ছিল, তবুও এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ফলে, বারবার ভূমিকম্প হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের তালিকা

তিব্বতে ভূমিকম্প হওয়া নতুন কিছু নয়। ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিংরি কাউন্টিতে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই সময় রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৮, যেখানে মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (USGS) এটিকে ৭.১ মাত্রা হিসেবে উল্লেখ করেছিল। এই ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১২৬ জন মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ১৮৮ জনের বেশি আহত হয়েছিল। ৩,৬০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছিল এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৪৬,০০০-এর বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, ২০২৫ সালের ১২ মে তারিখেও তিব্বতে ৫.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। তবে, সেই সময় বিশেষ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কেন তিব্বত ভূমিকম্পের কেন্দ্র?

তিব্বতের মালভূমি পৃথিবীর উচ্চতম স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে গঠিত হয়েছে। এই কারণে এই এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ হিসেবে অত্যন্ত সক্রিয়। যখন টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে ধাক্কা লাগে, আটকে যায় অথবা হঠাৎ করে সরে যায়, তখন প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়। এই শক্তি ভূমিকম্প রূপে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তোলে।

ভূমিকম্প কীভাবে হয়?

পৃথিবী মূলত টেকটোনিক প্লেটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই প্লেটগুলো ধীরে ধীরে সরতে থাকে। যখন এই প্লেটগুলো একে অপরের সাথে ধাক্কা লাগে বা এদের মধ্যে চাপ বাড়ে, তখন সেই শক্তি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায়। এই শক্তি ভূমিকম্প রূপে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তোলে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে এই ভূমিকম্প, যা পৃথিবীর অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প

তিব্বত ইতিহাসে অনেক বড় ভূমিকম্প দেখেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট, যা আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প নামে পরিচিত। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৮.৬। এটি ছিল পৃথিবীর অষ্টম শক্তিশালী ভূমিকম্প।

এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল তিব্বত এবং আসামের সীমান্তে। এর ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল, ব্যাপক ভূমিধস হয়েছিল এবং হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এর কম্পন পুরো হিমালয় অঞ্চলে অনুভূত হয়েছিল।

নেপাল, ভুটান ও ভারতে প্রভাব

তিব্বতে ভূমিকম্পের প্রভাব শুধু চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যেও অনুভূত হয়েছিল। বিশেষ করে সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।

Leave a comment