বিহার নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটকর্মী, গণনা কর্মী, মাইক্রো অবজারভার সহ সমস্ত নির্বাচনী ডিউটিতে থাকা আধিকারিকদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি, খাদ্য-পানীয়ের হারও সংশোধন করা হয়েছে।
ECI: বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন (ECI) একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনী ডিউটিতে থাকা আধিকারিক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র কর্মচারীদের মনোবল বাড়াবে না, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুণমান এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা একটি সরকারি চিঠিতে বলা হয়েছে যে প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটকর্মী, গণনা কর্মী, মাইক্রো অবজারভার, সেই সাথে উপ জেলা নির্বাচন আধিকারিক, সেক্টর আধিকারিক এবং সিএপিএফ কর্মীদের পারিশ্রমিক সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়াও, ভোট এবং গণনা ডিউটির সময় খাদ্য ও পানীয়ের হারও বাড়ানো হয়েছে।
কর্মচারীদের জন্য স্বস্তির উপহার
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে নির্বাচনী ডিউটিতে নিযুক্ত লক্ষ লক্ষ কর্মচারীর জন্য একটি স্বস্তির উপহার হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি করা হচ্ছিল, বিশেষ করে যখন থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও ডিজিটাল এবং প্রযুক্তিগতভাবে জটিল হয়েছে।
কমিশন অনুসারে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সময় নিযুক্ত কর্মীরা এখন তাদের পরিশ্রম অনুযায়ী ন্যায্য পারিশ্রমিক এবং সুবিধা পাবেন। এই সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে এসেছে যখন বিহারে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার এবং কর্মীদের মোতায়েন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কোন কোন পদে বাড়ানো হয়েছে পারিশ্রমিক?
কমিশন কর্তৃক সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী নিম্নলিখিত কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা হয়েছে:
- প্রিসাইডিং অফিসার
- প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (পোলিং অফিসার)
- মাইক্রো অবজারভার
- গণনা সুপারভাইজার এবং সহকারী
- উপ জেলা নির্বাচন অফিসার
- সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট এবং সেক্টর অফিসার
- কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) এর মোতায়েন কর্মীরা
দীর্ঘ বিরতির পর এই সংশোধন করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১৬ সালে এই সংশোধন করা হয়েছিল এবং তার আগে ২০১৪ সালে আংশিক পরিবর্তন করা হয়েছিল।
খাবার ও পানীয়তেও বৃদ্ধি
নির্বাচনী ডিউটিতে থাকা কর্মীদের জন্য খাদ্য ও পানীয়ের (রিফ্রেশমেন্ট অ্যালাউন্স) হারও বাড়ানো হয়েছে। এখন তারা ডিউটির সময় আরও উন্নত মানের এবং পুষ্টিকর খাবার পাবেন, যা তাদের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
এর আগে নির্বাচনকালে জলখাবার ও খাবারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যেত, তা খুবই কম ছিল, যার কারণে কর্মীদের ব্যক্তিগত খরচ থেকে ব্যবস্থা করতে হতো। এখন এই পরিবর্তনের ফলে তারা সুবিধা ও সম্মান দুটোই পাবেন।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি: কঠিন ডিউটি, সম্মানজনক পারিশ্রমিক
নির্বাচন কমিশন তাদের চিঠিতে স্পষ্ট করেছে যে ভোটগ্রহণ ও গণনার মতো কাজে নিযুক্ত কর্মীরা অত্যন্ত সংবেদনশীল, চাপপূর্ণ এবং দীর্ঘ সময় ধরে ডিউটি করেন। তাঁদের নিরাপত্তা, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
কমিশন বলেছে, 'দেশজুড়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিচালনা এই কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে সম্মানজনক সহযোগিতা প্রদান করা জরুরি ছিল।'
বিহার নির্বাচনের দিকে বিশেষ নজর
বিহারের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পারিশ্রমিক বৃদ্ধি শুধুমাত্র কর্মীদের মনোবল বাড়াবে না, সেই সাথে এই বার্তাও দেবে যে সরকার ও কমিশন তাঁদের পরিশ্রমের মূল্য দেয়।
বিহারে লক্ষ লক্ষ কর্মচারী নির্বাচনী ডিউটিতে নিযুক্ত হন, যাদের মধ্যে স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত তাঁদের আরও ভালোভাবে নির্বাচন কার্যে নিযুক্ত হতে উৎসাহিত করবে।
বেতন বৃদ্ধির প্রভাব
এই পারিশ্রমিক বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়বে নির্বাচনী ডিউটির গুণমান, সময়ানুবর্তিতা ও নিরপেক্ষতার ওপর। নির্বাচনী কর্মীরা আগে থেকেই প্রশিক্ষিত এবং সতর্ক থাকেন, তবে যখন তাঁরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পান, তখন তাঁরা দায়িত্বের সাথে তাঁদের কর্তব্য পালন করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনের ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও সহজ, নিরপেক্ষ ও দক্ষ হবে।