এলোন মাস্কের 'America Party': ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ, তৃতীয় শক্তির উত্থান?

এলোন মাস্কের 'America Party': ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ, তৃতীয় শক্তির উত্থান?

এলোন মাস্ক ট্রাম্পের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে 'America Party' গঠন করেছেন। তিনি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। রস পেরোতের মতো মাস্কও এখন তৃতীয় শক্তি হতে চাইছেন।

America: এলোন মাস্ক আমেরিকার দ্বি-দলীয় রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা করেছেন। তিনি এই দলের নাম রেখেছেন 'America Party' এবং বলেছেন যে এই দল দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও জনগণকে তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে।

ট্রাম্পের থেকে দূরত্ব এবং নতুন সূচনা

এলোন মাস্ক কিছু দিন আগে পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন এবং সরকারি খরচের ওপর নজরদারি করা সংস্থা DOGE-এর নেতৃত্বও দেন। কিন্তু ট্রাম্পের 'Big Beautiful Bill' নিয়ে দু'জনের মধ্যে মতবিরোধ বাড়ে। মাস্ক এই বিলটিকে ফেডারেল ঘাটতি বাড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে ট্রাম্প এটিকে দেশের জন্য লাভজনক মনে করেন।

বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের পর মাস্কের রাগ আবার ফেটে পড়ে এবং তিনি America Party গঠনের ঘোষণা করেন। তাঁর দাবি, আমেরিকা এখন আর গণতান্ত্রিক দেশের মতো নেই এবং তিনি রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে চান।

ট্রাম্পের হাস্যকর মন্তব্য

মাস্কের নতুন দল নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকায় সবসময় দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা ছিল এবং তৃতীয় দলের ধারণা কেবল বিভ্রান্তি তৈরি করবে। ট্রাম্পের মতে, তৃতীয় দলগুলি কখনোই সফল হয়নি এবং America Party-রও একই পরিণতি হবে।

রস পেরোতের উদাহরণ আবার আলোচনায়

এলোন মাস্কের দলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার আরেকজন কোটিপতি হেনরি রস পেরোতের নাম আলোচনায় এসেছে। পেরোত ১৯৯২ সালে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পরে 'Reform Party' প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৯২ সালে ১৯% জনপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন, কিন্তু আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে তিনি কোনো ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাননি।

রস পেরোতের রাজনৈতিক যাত্রা

হেনরি রস পেরোতের নাম সেইসব গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে আসে, যাঁরা কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি বলেছিলেন যে তিনি সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হতে চান। তাঁর প্রধান এজেন্ডা ছিল ফেডারেল বাজেট নিয়ন্ত্রণ করা এবং চাকরির আউটসোর্সিং বন্ধ করা।

পেরোতের স্পষ্ট এবং সরাসরি আচরণ তাঁকে জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, "যদি একটি সাপ দেখা যায়, তবে তাকে মারা উচিত, তার জন্য কোনো কমিটি গঠন করা উচিত নয়।" তাঁর এই ধরনের আচরণ তাঁকে অন্যান্য নেতাদের থেকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছিল।

তৃতীয় দলের সংগ্রাম

যদিও পেরোত ১৯৯২ সালে ১৯% ভোট পেতে সফল হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোনো রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে পারেননি। ফলস্বরূপ, তিনি কোনো ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাননি এবং রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। কিছু বিশ্লেষকের মতে, তাঁর উপস্থিতির কারণে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে পেরোত আবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু এবার তিনি মাত্র ৮% ভোট পান। বিতর্কে তাঁকে ডাকা হয়নি কারণ আয়োজকরা বলেছিলেন যে তাঁর পর্যাপ্ত জনসমর্থন নেই। এর পরে তাঁর রাজনৈতিক শক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ২০০০ সাল নাগাদ Reform Party প্রায় ভেঙে যায় এবং পেরোত রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। জুলাই ২০১৯-এ তাঁর ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয়।

এলোন মাস্কের সামনেও সেই একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা পেরোত সম্মুখীন হয়েছিলেন। আমেরিকার রাজনীতিতে তৃতীয় দলের জন্য জায়গা তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন। নির্বাচনী ব্যবস্থা, মিডিয়া কভারেজ, অর্থ সংগ্রহ এবং জনসমর্থন-এর মতো অনেক বাধা রয়েছে।

Leave a comment