জেফরি এপস্টিন মামলার তদন্ত নিয়ে এফবিআই-এর অন্দরে উত্তেজনা। ডেপুটি ড্যান বংগিনো এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির মধ্যে বিবাদ। ডিরেক্টর কাশ প্যাটেলও পদত্যাগের কথা বিবেচনা করতে পারেন।
কাশ প্যাটেল: জেফরি এপস্টিন মামলার তদন্ত এখন আমেরিকার শীর্ষ তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর মধ্যে মতবিরোধ এবং পদত্যাগের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এফবিআই ডিরেক্টর কাশ প্যাটেল এবং ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনোর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, বংগিনোর সম্ভাব্য পদত্যাগের পরে কাশ প্যাটেলও পদ ছাড়তে পারেন বলে জল্পনা চলছে। এই পুরো বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, যাঁর সঙ্গে বংগিনোর গুরুতর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, বিষয়টি এপস্টিনের মৃত্যু এবং তার কথিত নেটওয়ার্কের তদন্তের সঙ্গে জড়িত, যেখানে স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক চাপ নিয়ে বিভাগগুলির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এপস্টিন মামলা সম্পর্কিত সাম্প্রতিক বিতর্ক
জেফরি এপস্টিনের মৃত্যু এবং তাঁর সংযোগগুলির তদন্ত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এবং তদন্ত সংস্থাগুলির মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে। নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, এফবিআই-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনো এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির মধ্যে গুরুতর মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্যগুলি এপস্টিনের মামলায় বিচার বিভাগ (ডিওজে)-এর দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই কর্মকর্তার মধ্যে এই বিবাদ তখন আরও বাড়ে যখন এই মামলার ‘পর্যালোচনা প্রক্রিয়া’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই পর্যালোচনা, कथितভাবে, এপস্টিনের মৃত্যু এবং তাঁর ক্লায়েন্ট তালিকা সম্পর্কিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। যদিও, বিচার বিভাগ এই দাবিগুলি খারিজ করে দিয়ে বলেছে যে এমন কোনও পর্যালোচনাই অস্তিত্বে নেই।
এফবিআই-এ কি বড় ধরনের পদত্যাগ হতে চলেছে?
এফবিআই-এর অন্দরের এই অস্থিরতা এই সম্ভাবনা তৈরি করেছে যে ডেপুটি ডিরেক্টর ড্যান বংগিনো তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও এই বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি, তবে সূত্রের খবর, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে তাঁদের মধ্যে এখন কাজের সম্পর্ক কার্যত নেই বললেই চলে।
সূত্রমতে, যদি পাম বন্ডি বিভাগে থাকেন, তাহলে ড্যান বংগিনোর ফিরে আসার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। এই অভ্যন্তরীণ সংঘাত এফবিআই-এর কাজকর্ম এবং সংস্থার স্বচ্ছতার উপরেও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।
কাশ প্যাটেলও পদত্যাগ করতে পারেন
এই পুরো ঘটনায় এফবিআই ডিরেক্টর কাশ প্যাটেলের নামও এখন আলোচনায় এসেছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে কাশ প্যাটেল তাঁর ডেপুটি বংগিনোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পদত্যাগের কথা বিবেচনা করতে পারেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টের সঙ্গে কথা বলার সময় বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “কাশ এবং ড্যান সবসময় একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিলেন। তাঁরা স্বচ্ছতার জন্য লড়াই করেছেন। যদি তাঁরা পদত্যাগ করেন, তবে এতে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।”
ট্রাম্প প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছল এপস্টিন মামলা
এই পুরো বিতর্কের একটি বড় দিক হল, এপস্টিন মামলার তদন্ত এখন ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পুরনো সিদ্ধান্ত এবং সম্পর্ক পর্যন্ত পৌঁছেছে। সূত্র মনে করে, এই বিবাদ কেবল এফবিআই এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সেই বৃহত্তর ব্যবস্থার একটি অংশ, যা এপস্টিনের প্রভাব এবং তাঁর সংযোগগুলি প্রকাশ হওয়া থেকে আটকাতে চাইছে।
এই মামলাটি রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকালের সময় এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সেই সময়ে বিচার বিভাগের নেওয়া পদক্ষেপগুলির পর্যালোচনা সম্পর্কিত। এমন পরিস্থিতিতে, যদি এই মামলা আরও গভীর হয় তবে প্রাক্তন প্রশাসনের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারে।
এপস্টিন মামলাটি আসলে কী?
জেফরি এপস্টিন ছিলেন একজন কুখ্যাত মার্কিন ফাইনান্সার, যাঁর বিরুদ্ধে নাবালিকাদের যৌন শোষণ এবং মানব পাচার-এর মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল। ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু জেলে থাকাকালীন তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এপস্টিনের মৃত্যুকে অনেকে ‘আত্মহত্যা’ না বলে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এপস্টিনের কাছে অনেক হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির একটি ক্লায়েন্ট তালিকা ছিল বলে জানা যায়, যেখানে আমেরিকা ও সারা বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ছিল।