ইউপি সরকার লখনউ, সিতাপুর, উন্নাও, হারদোই, বারাবাঁকি এবং রায়বেরেলিতে স্টেট ক্যাপিটাল রিজিওন (SCR) তৈরি করবে। হাই-স্পিড রেল, রোড নেটওয়ার্ক, শিল্প, কৃষি ও পর্যটনকে উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান ও নগরায়ণ নতুন দিশা পাবে।
UP News: উত্তর প্রদেশ সরকার লখনউ এবং তার প্রতিবেশী জেলাগুলিকে একটি নতুন পরিচয় দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। যোগী সরকার লখনউয়ের পাশাপাশি সিতাপুর, উন্নাও, হারদোই, বারাবাঁকি এবং রায়বেরেলীকে যুক্ত করে ২৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় স্টেট ক্যাপিটাল রিজিওন (State Capital Region – SCR) গড়ে তুলতে চলেছে।
এই পরিকল্পনাটি দিল্লি-এনসিআর-এর আদলে তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্য কেবল প্রশাসনিক এলাকার সম্প্রসারণ নয়, বরং এটিকে অর্থনৈতিক, শিল্প ও শহুরে উন্নয়নের একটি নতুন মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার খসড়া
লখনউয়ের কমিশনার ডঃ রওশন জ্যাকবের উপস্থিতিতে এই পরিকল্পনার প্রথম সমীক্ষা প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। এই বৈঠকে লখনউ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (LDA) সহ-সভাপতি, বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক এবং পরামর্শদাতা প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদন অনুসারে, আঞ্চলিক পরিকল্পনা তৈরি করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। এরপর আগামী পাঁচ বছরে ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন) তৈরি করা হবে এবং ধীরে ধীরে প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন শুরু হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল সমগ্র অঞ্চলে সমান গতিতে উন্নয়ন ঘটানো এবং শহুরে পরিকল্পনাকে নতুন দিশা দেখানো।
হাই-স্পিড কানেক্টিভিটি
এসসিআর-এর মধ্যে হাই-স্পিড রেল এবং আধুনিক রোড নেটওয়ার্কের সুবিধা প্রদান করা হবে। এতে লখনউ এবং প্রতিবেশী জেলাগুলির মধ্যে যাতায়াত দ্রুত ও সহজ হবে। প্রকল্পের অধীনে শিল্পাঞ্চলগুলিকে রাজধানী থেকে সরাসরি যুক্ত করা হবে। উন্নত পরিবহন সুবিধা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যিক সুযোগে সহজে প্রবেশাধিকার দেবে। সরকারের মতে, উন্নত কানেক্টিভিটি (Connectivity) উন্নয়নের জীবনরেখা (Lifeline), তাই পরিবহন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পর্যটনে উন্নতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ
সরকারের পরিকল্পনা হল এসসিআর অঞ্চলের সমস্ত জেলার পর্যটন ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলিকে যুক্ত করে একটি শক্তিশালী পর্যটন সার্কিট তৈরি করা। তথ্য অনুযায়ী, লখনউতে মোট পর্যটকদের ৪৬%, বারাবাঁকিতে ৩১%, উন্নাওতে ১৪%, সিতাপুরে ৭% এবং হারদোই-রায়বেরেলিতে মাত্র ১-১% পর্যটক আসেন। এই বৈষম্য দূর করার জন্য ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যগুলিকে যুক্ত করে সমগ্র অঞ্চলে পর্যটনকে উৎসাহিত করা হবে। এতে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়বে।
কৃষি ও শিল্প উন্নয়নে জোর
লখনউ ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের উর্বর মাটি। ধান, গম, আখ, সবজি ও ডাল বড় আকারে চাষ হয়। পরিকল্পনায় আধুনিক প্রযুক্তি, কোল্ড স্টোরেজ চেইন এবং এগ্রি-বিজনেস হাব (Agri-Business Hub) অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও ফুড প্রসেসিং, টেক্সটাইল, আইটি ও সার্ভিস সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এইভাবে এসসিআর অঞ্চল আগামী বছরগুলিতে একটি নতুন শিল্প করিডোর হিসেবে উঠে আসতে পারে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নগরায়ন
লখনউ আগে থেকেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কেন্দ্র। এসসিআর পরিকল্পনা কার্যকর হলে ছোট শহরগুলিকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে এবং শহুরে সুযোগ-সুবিধার সাথে যুক্ত করা হবে। উন্নত কানেক্টিভিটি, শিল্প ও পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। আধিকারিকদের মতে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ বাড়ানো।
তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানীয় প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য
কমিশনার ডঃ রওশন জ্যাকব নির্দেশ দিয়েছেন যে প্রতিটি জেলায় আলাদা পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হবে। এতে স্থানীয় তথ্য দ্রুত সংগ্রহ হবে এবং কর্মপরিকল্পনা আরও কার্যকর হবে। এসসিআর পরিকল্পনা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং স্থানীয় প্রয়োজন ও সম্পদ অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন মডেল
এসসিআর প্রকল্প কেবল প্রশাসনিক সম্প্রসারণ নয়, এটি একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেল উপস্থাপনের দিকে একটি পদক্ষেপ। এতে কর্মসংস্থান, কৃষি, পর্যটন ও শিল্প বিনিয়োগকে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এই মডেলটি লখনউ মন্ডল এবং সমগ্র উত্তর প্রদেশকে উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ২৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই উচ্চাভিলাষী অঞ্চল থেকে আশা করা হচ্ছে যে লখনউয়ের উন্নয়ন এখন তার প্রতিবেশী জেলাগুলিতেও প্রসারিত হবে এবং সমগ্র অঞ্চলের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।