গাইনোকোলজিস্ট ডক্টর মহিমা অনুসারে, ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের উর্বরতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, যার ফলে প্রেগন্যান্সি প্ল্যান করা কঠিন হয়ে যায়। পিসিওডি, এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো সমস্যাগুলি এটিকে আরও জটিল করে তোলে। তিনি আরও বলেন যে আইভিএফ (IVF) প্রযুক্তির কোনও গ্যারান্টি নেই এবং প্রতিটি মহিলার জন্য এর প্রভাব ভিন্ন হয়।
Pregnancy Problems: স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর মহিমা একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেছেন যে একজন মহিলার উর্বরতা জন্ম থেকেই কমতে শুরু করে এবং ৩০ বছর বয়সের পর ডিমের সংখ্যা ও গুণগত মান কমে যাওয়ার কারণে গর্ভধারণ কঠিন হতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন যে পিসিওডি, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো সমস্যাগুলি প্রেগন্যান্সিতে অতিরিক্ত বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তাই সময় মতো ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা জরুরি। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে আইভিএফ (IVF) প্রযুক্তিতে সাফল্যের কোনও নির্দিষ্ট গ্যারান্টি নেই এবং প্রতিটি মহিলার জন্য এর ফলাফল আলাদা হতে পারে।
জন্ম থেকেই শুরু হয় উর্বরতার যাত্রা
ডক্টর মহিমা একটি ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেছেন যে একজন মহিলার উর্বরতার যাত্রা জন্ম থেকেই শুরু হয়ে যায়। যখন একটি মেয়ে শিশু তার মায়ের গর্ভে থাকে, তখন তার ডিম্বাশয়ে ডিমের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ থাকে। জন্মের সময় এই সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ২০ লক্ষে নেমে আসে। বয়ঃসন্ধি অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এটি কমে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজারে দাঁড়ায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও দ্রুত কমতে থাকে। এটাই কারণ যে ৩০ বছর বয়স পার করার পরে উর্বরতার উপর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়।
কেন আসে এই সমস্যাগুলো
মহিমা অনুসারে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমের গুণমান এবং পরিমাণ উভয়ই প্রভাবিত হয়। এই কারণে ৩০-এর পরে প্রেগন্যান্সির চেষ্টা প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এছাড়াও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং লাইফস্টাইলও এতে বড় ভূমিকা রাখে।
পিসিওডি (PCOD) এবং এন্ডোমেট্রিওসিসের প্রভাব
ডক্টর মহিমা জানান, যদি কোনও মহিলার পিসিওডি (PCOD) বা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো সমস্যা থাকে, তাহলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। পিরিয়ডসে অস্বাভাবিক ফ্লো, খুব বেশি ব্যথা বা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো পরিস্থিতি উর্বরতাকে আরও প্রভাবিত করে। এই ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সিতে দেরি এবং জটিলতা দেখা যায়।
আইভিএফ (IVF) প্রযুক্তি নিয়েও উঠল প্রশ্ন
অন্য একটি ভিডিওতে ডক্টর মহিমা আইভিএফ (IVF) প্রযুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছেন। একটি অনুষ্ঠানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে আইভিএফ (IVF) প্রথমবার ব্যর্থ হলে কি আবার পুরো খরচ দিতে হয়? এর উত্তরে তিনি স্পষ্ট বলেন যে প্রতিটি মহিলার শরীর এবং হরমোনের প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়। কিছু মহিলার বেশি ডিম তৈরি হয়, যাকে হাইপারস্টিমুলেশন বলা হয়। আবার কিছু মহিলার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সংখ্যক ডিম তৈরি হয়। এই কারণে প্রতিটি কেস আলাদা হয় এবং চিকিৎসার পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হয়।
গ্যারান্টি দেয় না আইভিএফ (IVF)
মহিমা স্পষ্ট করে বলেন যে আইভিএফ (IVF) প্রযুক্তি নিয়ে কোনও ধরনের গ্যারান্টি দেওয়া ভুল। অনেক ক্লিনিক দাবি করে যে তিন বা চারটি সাইকেলে প্রেগন্যান্সি নিশ্চিত হয়ে যাবে, কিন্তু এটা সম্ভব নয়। এমনটা করা শুধুমাত্র রোগীদের বিভ্রান্ত করা। তিনি বলেন যে চিকিৎসার ফলাফল প্রতিটি মহিলার শরীরের উপর নির্ভর করে এবং প্রতিটি সাইকেলে ওষুধের ডোজও আলাদা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ বছর বয়সের পর শুধু ডিমের সংখ্যাই কমে যায় না, সেই সঙ্গে ডিমের মধ্যে জেনেটিক অস্বাভাবিকতার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এই কারণে এই বয়সে গর্ভধারণ কঠিন হতে পারে এবং অনেক সময় গর্ভপাতের আশঙ্কাও থাকে।