আমরা প্রায়শই যখন 'হার্ট অ্যাটাক' নিয়ে কথা বলি, তখন আমাদের মনোযোগ কেবল বুকের ব্যথার দিকে কেন্দ্রীভূত হয়। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা এবং গবেষণা প্রমাণ করেছে যে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ শুধুমাত্র বুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, শরীরের অন্যান্য অংশেও, বিশেষ করে পিঠের উপরের অংশেও এর সংকেত পাওয়া যেতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক মানুষ এই সংকেতকে সামান্য ব্যথা মনে করে উপেক্ষা করে এবং এই অবহেলা মারাত্মক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ: পিঠে চাপের মতো ব্যথা
আমাদের হৃদপিণ্ড শরীরের মাঝখানে অবস্থিত এবং হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত ব্যথার সংকেত শরীরের অন্যান্য অংশেও অনুভূত হতে পারে। যখন হার্ট অ্যাটাক হয়, তখন এর শুরুটা পিঠের উপরের অংশে, বিশেষ করে কাঁধের মাঝখানে বা মেরুদণ্ডের উপরের অংশে ব্যথা দিয়ে শুরু হতে পারে। এই ব্যথা তীব্র হয় না, বরং প্রায়শই চাপ, আড়ষ্টতা বা ভারীपनের মতো অনুভূত হয়। এই লক্ষণ বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক হলে ঐতিহ্যবাহী লক্ষণ (যেমন বুকের ব্যথা) এর পরিবর্তে পিঠ ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা বা অতিরিক্ত ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখা যায়। এই কারণেই তাদের হার্ট অ্যাটাক 'নীরবে' অর্থাৎ চুপিসারে হয়ে যায়।
কীভাবে বুঝবেন এটা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা নাকি সাধারণ পিঠ ব্যথা?
পিঠ ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে – যেমন পেশীতে টান, ভুলভাবে বসার ভঙ্গি বা ভারী জিনিস তোলার কারণে। কিন্তু যদি এই ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়, বিশ্রাম নিলে না কমে, এবং তার সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট, বমি, ঠান্ডা ঘাম বা মাথা ঘোরা-র মতো লক্ষণও থাকে – তাহলে এটা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। বিশেষ করে তখন সাবধান হয়ে যান যখন ব্যথা পিঠের উপরের অংশ থেকে ঘাড়, কাঁধ বা উভয় বাহু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই সংকেত স্পষ্টভাবে হৃদরোগের কোনো গুরুতর সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।
মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের আলাদা লক্ষণ
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA)-এর রিপোর্ট বলছে যে মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ পুরুষদের থেকে আলাদা হতে পারে। পুরুষদের সাধারণত বুকে চাপ বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, কিন্তু মহিলাদের এর পাশাপাশি পিঠ ব্যথা, বমি, ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরা-র মতো সংকেতও দেখা যায়। অনেক সময় মহিলারা এই লক্ষণগুলোকে ক্লান্তি, গ্যাস বা পিঠের সাধারণ ব্যথা ভেবে উপেক্ষা করে দেন। কিন্তু এই অবহেলা তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
নীরব হার্ট অ্যাটাক: যখন ব্যথা অনুভবই হয় না
কিছু মানুষ হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে জানতেও পারে না এবং তারা এটিকে সামান্য স্বাস্থ্য সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যায়। একে ‘নীরব হার্ট অ্যাটাক’ বলা হয় এবং এটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। CDC-এর মতে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকের সেই পর্যায়ে হয় যখন রোগী জানতেও পারে না যে তার অ্যাটাক হয়েছে। এই নীরব অ্যাটাক শরীরের গুরুতর ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে হৃদপিণ্ডের পেশীগুলোর।
কাদের বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন?
- যাদের কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ বেশি থাকে
- যারা ধূমপান বা মদ্যপান করেন
- যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে
- যারা মোটা বা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না
- মহিলাদের 40 বছর বয়সের পর বিশেষ ध्यान রাখা উচিত
এই ব্যক্তিদের যদি পিঠের উপরের অংশে বার বার ব্যথা হয়, তবে ডাক্তারের কাছে ECG বা ইকো-কার্ডিওগ্রাফি অবশ্যই করানো উচিত।
এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে কী করবেন?
- ব্যথা যদি অস্বাভাবিক লাগে এবং বিশ্রাম নিলে ঠিক না হয়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- বাড়িতে বসেই ‘গ্যাস’ বা ‘ক্লান্তি’ মনে করে এটিকে উপেক্ষা করবেন না।
- যদি আপনার কাছে কোনো হার্ট সম্পর্কিত ওষুধ থাকে, তাহলে সেটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করুন।
- হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থাকলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন এবং নিকটবর্তী হাসপাতালে যান।
পিঠে ব্যথাকে আমরা প্রায়শই স্বাভাবিক মনে করি, কিন্তু যখন এটি হৃদপিণ্ডের ঠিক পিছনে, উপরের অংশে হয় এবং সাথে ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও থাকে, তখন এটিকে হালকাভাবে নেবেন না। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত হতে পারে। জীবনের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হল – সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। তাই এই ধরনের কোনো ব্যথাকে উপেক্ষা করবেন না এবং সময় মতো পরীক্ষা করান।