ভাসমান সৌর প্যানেল: জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে চীনের নতুন দিগন্ত

ভাসমান সৌর প্যানেল: জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে চীনের নতুন দিগন্ত

আপনাদের এত দিন বাড়ির ছাদ বা খোলা মাঠে সৌর প্যানেল (solar panel) দেখতে পাওয়ার কথা, কিন্তু এখন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সাহায্যে এগুলিকে জলে ভাসিয়েও স্থাপন করা হচ্ছে। আসলে, অনেক দেশে ফ্লোটিং সৌর প্যানেলের ধারণা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

ভাসমান সৌর প্যানেল: যখনই আমরা সৌরশক্তির কথা বলি, তখনই আমাদের চোখের সামনে ছাদ বা ক্ষেতে লাগানো বিশাল সৌর প্যানেলগুলি ভেসে ওঠে। তবে এখন বিশ্বে সৌরশক্তির চিত্র বদলাচ্ছে। চীন এই দিকে একটি অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে তারা জলের উপরিভাগে ভাসমান সৌর প্যানেল (Floating Solar Panels) দ্রুত স্থাপন করছে। আগামী দিনে চীনের নদী, হ্রদ, জলাধার এবং এমনকি সমুদ্রেও এই সৌর প্যানেলগুলি ভাসতে দেখা যাবে।

আসলে, জমির অভাব এবং দ্রুত বর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা চীনকে এই উদ্ভাবন করতে উৎসাহিত করেছে। যেখানে প্রথাগত সৌর প্রকল্পগুলিতে জমির একটি বড় অংশ লাগে, সেখানে ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তি জমির সাশ্রয় করে এবং পরিবেশের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কেন চীন ফ্লোটিং সৌর প্যানেলের ব্যবহার করছে?

চীনের ঝেজিয়াং খাল প্রকল্প, ইয়াংসি এবং পার্ল নদী উপত্যকার মতো এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, জলের উপরিভাগে স্থাপন করার ফলে ভূমির উপর চাপ পড়ে না। এছাড়াও, জলাধার এবং হ্রদে বাষ্পীভবনের হারও কমে যায়, যা জলের সংরক্ষণে সাহায্য করে।

এছাড়াও, জলের শীতলতার কারণে সৌর প্যানেলের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা সৌর প্যানেলের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তবে জলে ভাসমান থাকার কারণে এই সমস্যাটি অনেকখানি সমাধান হয়।

চীনের বৃহত্তম ফ্লোটিং সৌর খামার

ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তিতে চীনের নেতৃত্ব বিশ্বজুড়ে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। চীনের দেঝৌ-তে অবস্থিত ডিংজুয়াং ফ্লোটিং সৌর খামারটি ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন, যা দেশের বৃহত্তম ফ্লোটিং সৌর প্রকল্প। এই প্রকল্পটি কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে না, বরং আশেপাশের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও করছে।

চীন ২০৩০ সালের মধ্যে ১,২০০ গিগাওয়াট যৌথ বায়ু এবং সৌর ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য রেখেছে, যেখানে ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তি একটি বড় অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।

সমুদ্রেও ভাসবে সৌর প্যানেল

ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তি এখন নদী ও হ্রদ ছাড়িয়ে সমুদ্রেও প্রবেশ করেছে। চীন শানডং প্রদেশে ১ গিগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিশ্বের বৃহত্তম অফশোর (offshore) ফ্লোটিং সৌর প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এই প্রকল্পটি একটি পুরনো জলমগ্ন কয়লা খনির উপরে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে অব্যবহৃত জায়গারও ভালো ব্যবহার হয়েছে।

এছাড়াও, উত্তর সাগরেও চীন অফশোর সৌর পার্ক স্থাপন শুরু করেছে। এটি কেবল সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে না, চীনের শক্তি খাতে একটি নতুন বিপ্লবও আনছে।

পরিবেশের জন্য আশীর্বাদ

ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল পরিবেশ। জলাশয়ে লাগানো সৌর প্যানেলগুলি জলের বাষ্পীভবন রোধ করে জল সংরক্ষণে সাহায্য করে। এছাড়াও, এর মাধ্যমে মৎস্য চাষকেও (fisheries) উৎসাহিত করা যেতে পারে, কারণ সৌর প্যানেলের ছায়ায় মাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এছাড়াও, কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং কয়লার উপর নির্ভরতা কমাতে এই প্রযুক্তি কার্যকরী। চীনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শীর্ষে পৌঁছে তার পরে তা ক্রমাগত কমানো।

ভারত-এর মতো দেশগুলির জন্যও এই প্রযুক্তি অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে, যেখানে কৃষিজমির অভাব রয়েছে এবং বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ভারতে অনেক বড় জলাধার ও বাঁধ রয়েছে, যেগুলির উপরে ফ্লোটিং সৌর প্ল্যান্ট স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য শক্তির (renewable energy) লক্ষ্য পূরণ করার জন্য ফ্লোটিং সৌর প্রযুক্তি একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। এটি কেবল সবুজ শক্তির উৎপাদন করবে না, জল এবং জমি উভয় সম্পদকে বাঁচাবে।

Leave a comment