বিহারে বন্যা পরিস্থিতি: ত্রাণকার্যে তৎপর নীতীশ কুমার সরকার

বিহারে বন্যা পরিস্থিতি: ত্রাণকার্যে তৎপর নীতীশ কুমার সরকার

বিহারে বন্যার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বন্যা কবলিত মানুষের কাছে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ফসলের ক্ষতিরপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের মেরামত এবং উদ্ধার কাজের দ্রুত পর্যালোচনা করার কথা বলেছেন।

বিহার: বন্যার প্রকোপ বেড়েই চলেছে এবং রাজ্যের অনেক জেলা গঙ্গা ও অন্যান্য নদীর জল বাড়ার কারণে প্রভাবিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ কাজের পর্যালোচনা করেছেন এবং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যেন দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী ১ অ্যানে মার্গ স্থিত ‘সঙ্কল্প’ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজ্যের বন্যা কবলিত জেলাগুলিতে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যের পরিস্থিতির খবর নেন। বৈঠকে বিকাশ কমিশনার এবং অতিরিক্ত মুখ্য সচিব প্রত্যয় অমৃত বন্যা কবলিত এলাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং নদীর জলস্তরের তথ্য জানান। তিনি জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলিতে জলের স্তর ক্রমাগত বাড়ছে, যার ফলে মানুষের সুরক্ষা ও চলাচলের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলা এবং জনসংখ্যার পরিস্থিতি

কর্মকর্তারা জানান, এ বছর বন্যায় রাজ্যের ভোজপুর, পটনা, সারন, বৈশালী, বেগুসরাই, লখিসরাই, মুঙ্গের, খাগড়িয়া, ভাগলপুর এবং কাটিহার জেলা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জেলাগুলির মোট ৫৪টি ব্লকের ৩৪8টি পঞ্চায়েতের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। কর্মকর্তাদের মতে, ত্রাণ কার্যের জন্য এনডিআরএফ-এর ৭টি দল এবং এসডিআরএফ-এর ৯টি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

মুখ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের বলেন, বন্যা কবলিত কৃষকদের ফসলের ক্ষতিরপূরণের জন্য যেন দ্রুত ত্রাণ দেওয়া হয়। এছাড়াও, পথ নির্মাণ বিভাগ এবং গ্রামীণ কার্য বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলির যেন দ্রুত মেরামত করা হয় যাতে মানুষের চলাচলে অসুবিধা না হয়।

ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যের বর্তমান পরিস্থিতি

কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে ৬০টি মোটর বোট এবং ১২৩৩টি নৌকার মাধ্যমে ত্রাণকার্য চালানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৫২,৫৭৩টি পলিথিন শীট এবং ১৮০০ শুকনো খাবারের প্যাকেট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা ত্রাণ শিবিরগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (SOP) অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেন সেন্টারগুলিতে এখনও পর্যন্ত ১৩ লক্ষেরও বেশি মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছে।

পশুদের জন্য পশু খাদ্য এবং চিকিৎসার সুবিধাও প্রদান করা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর প্রতিদিন ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যের পর্যালোচনা করছে। জেলা শাসকদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা তৈরি করে মানবিক ত্রাণ (GR) বিতরণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক সতর্কতা এবং আগামী দিনের প্রস্তুতি

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কর্মকর্তাদের বলেন, নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় যেন কোনো বিলম্ব না হয়। তিনি আরও বলেন, সরকার সবসময় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে প্রস্তুত। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে সম্ভাব্য বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয় এবং SOP অনুযায়ী সমস্ত বিভাগ সক্রিয় থাকে।

বৈঠকে উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী, বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী বিজয় কুমার মন্ডল, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব দীপক কুমার, বিকাশ কমিশনার প্রত্যয় অমৃত, জল সম্পদ বিভাগের প্রধান সচিব সন্তোষ কুমার মল্ল, কৃষি বিভাগের প্রধান সচিব পঙ্কজ কুমার, পথ নির্মাণ বিভাগের সচিব সন্দীপ কুমার আর. পুদুকলাকাট্টি, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোজ কুমার সিং, বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের সচিব ডঃ চন্দ্রশেখর সিং সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভাগলপুর, ভোজপুর এবং পটনার জেলা শাসকরাও বৈঠকে যোগ দেন এবং তাদের নিজ নিজ জেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যের বিস্তারিত তথ্য জানান।

Leave a comment