গণেশ চতুর্থী ২০২৫ কখন করবেন পুজো জানুন নির্ঘণ্ট মহামন্ত্র ও বিশেষ নিয়ম

গণেশ চতুর্থী ২০২৫ কখন করবেন পুজো জানুন নির্ঘণ্ট মহামন্ত্র ও বিশেষ নিয়ম

সিদ্ধিদাতা গণেশ: সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা

শিব-পার্বতীর পুত্র গণেশ হিন্দুধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা। সকল শুভকর্মের শুরু হয় তাঁর নাম জপের মধ্য দিয়ে। সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং বিঘ্ননাশের দেবতা হিসেবে তিনি পরিচিত। জন্মোৎসব ‘গণেশ চতুর্থী’ শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশেই মহাসমারোহে পালিত হয়।

কখন পালিত হবে গণেশ চতুর্থী ২০২৫?

এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর (১০ ভাদ্র), বুধবার। ভাদ্র-আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতেই এই উৎসব পালিত হয়। শাস্ত্র মতে, ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত চলবে চতুর্থী তিথি। ভক্তদের জন্য এ সময়ই সর্বাধিক শুভ বলে মনে করা হয়।

শুভ সময়: অমৃতযোগ ও মাহেন্দ্রযোগ

পঞ্জিকা অনুযায়ী এইবার গণেশ চতুর্থীতে একাধিক শুভ যোগ রয়েছে।

অমৃতযোগ: দিবা ৭টা ২ মিনিট থেকে ৯টা ৩১ মিনিট এবং রাত ৬টা ৩৩ মিনিট থেকে ৮টা ৫৩ মিনিট, আবার রাত ১টা ৩১ মিনিট থেকে ভোর ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত।

মাহেন্দ্রযোগ: দুপুর ১টা ৩৯ মিনিট থেকে ৩টা ১৮ মিনিট এবং রাত ৮টা ৫৩ মিনিট থেকে ১০টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই শুভ সময়ে পুজো করলে গণপতি দ্রুত সন্তুষ্ট হন।

মূর্তি স্থাপনের নিয়ম: কী করবেন আর কী এড়িয়ে চলবেন

পুজোর দিন গণপতির মূর্তিকে সোনা, রুপো অথবা তামার জলে স্নান করানো হয়। মূর্তি স্থাপনের জন্য বাড়ির পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব কোণকে সবচেয়ে শুভ মনে করা হয়। দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিমে মূর্তি রাখা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। দরজার দিকে মুখ করে গণেশ স্থাপন করা উচিত, কারণ এটি সংসারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

কোন জায়গায় গণেশ রাখা উচিত নয়

বাস্তুশাস্ত্র বলছে, শোবার ঘর, সিঁড়ির নীচে, বাথরুম বা গ্যারেজের মতো জায়গায় কখনও গণেশ মূর্তি রাখা উচিত নয়। এসব স্থানে নেতিবাচক শক্তির আধিক্য থাকে। একইভাবে, একই ঘরে দুটি গণেশ মূর্তি রাখাও অশুভ, কারণ এতে শক্তির সংঘর্ষ হয়। তাই বাড়ির আলাদা জায়গায় একটিমাত্র মূর্তি রাখাই শ্রেয়।

শুঁড়ের দিকের রহস্য: কোন গণেশ মূর্তি বেশি শুভ

শাস্ত্রমতে, বাড়িতে বাম দিকে শুঁড়যুক্ত গণেশ মূর্তি রাখাই সবচেয়ে শুভ। এ ধরনের গণেশ সহজেই প্রসন্ন হন। অন্যদিকে, ডান দিকে শুঁড় থাকা মূর্তি পূজা করতে গেলে বিশেষ নিয়ম মানতে হয়। তাই অধিকাংশ ভক্তই বাড়িতে বাম-শুঁড় গণেশ মূর্তিই স্থাপন করেন।

ভোগ, মোদক ও দূর্বা: গণেশের প্রিয় উপাদান

গণপতি সবচেয়ে সন্তুষ্ট হন সিঁদুর, লাল চন্দন, লাল ফুল ও দূর্বাতে। ভক্তরা সাধারণত ২১টি মোদক ও ২১টি দূর্বা দিয়ে পুজো করেন। বিশ্বাস করা হয়, এই নিয়ম মেনে ভগবানের ১০টি নাম জপ করলে সংসারে স্থায়ী সুখ ও শান্তি নেমে আসে। বুধবারের দিন বিশেষ করে এই উপাদান দিয়ে পূজা করলে ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।

গণেশ পুজোর মহামন্ত্র

পুজোর সময় অবশ্যই পাঠ করতে হয় মহামন্ত্র—

“একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম। বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।। ”

এর অর্থ, একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন ও বিঘ্ননাশকারী হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।

বীজমন্ত্র ও ১০৮ নাম

গণেশের সবচেয়ে পরিচিত বীজমন্ত্র হলো— “ওঁ গণ গণপতয়ে নমঃ।”তাছাড়া তাঁর রয়েছে ১০৮টি নাম— যেমন গণপতি, বিনায়ক, মঙ্গলমূর্তি, সিদ্ধিদাতা, বুদ্ধিনাথ, ধূম্রবর্ণ, বালগণপতি, শুভকর্ণ প্রভৃতি। বিশ্বাস করা হয়, এই নাম জপ করলে সকল বাধা দূর হয় এবং ভক্তের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি নেমে আসে।

গণেশ মহোৎসব: দেশজুড়ে উৎসবের আবহ

গণেশ চতুর্থীর দিন থেকেই শুরু হয় দশ দিনের গণেশ মহোৎসব। মহারাষ্ট্র, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এখন সমানভাবে পালিত হয় এই উৎসব। একাদশ দিনে মূর্তির নিরঞ্জনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। এই দিনকে বলা হয় অনন্ত চতুর্দশী। আগেকার দিনে মূলত ব্যবসায়ীরা এ উৎসব করলেও আজ তা সর্বসাধারণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

শুভ দিনে গণেশ বন্দনায় মেতে উঠুন

ভক্তরা বিশ্বাস করেন, সঠিক নিয়মে পুজো করলে গণেশ আশীর্বাদে সংসারে আসে সমৃদ্ধি, বাধা দূর হয় এবং সুখ-শান্তি নেমে আসে। তাই নির্ধারিত সময়ে, সঠিক মন্ত্রোচ্চারণ ও ভোগ নিবেদনেই গণপতি প্রসন্ন হন। ২০২৫ সালের গণেশ চতুর্থীতে তাই সময়, নিয়ম ও মন্ত্র মেনে ভক্তিমনে বন্দনা করলেই মেলে সিদ্ধিদাতার আশীর্বাদ।

Leave a comment